রবিবার ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১

Logo
Logo

প্রতিবেদন: মোঃ মামুন ইসলাম, রংপুর, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীর মতো সিয়ামও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছিলেন সক্রিয়। তিনি শহিদ আবু সাঈদের সাথে জুলাইয়ের শুরু থেকেই সকল কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

 

গত ১৬ জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদের শাহাদতবরণের সময়ও সিয়াম তার পাশে ছিলেন। এ সময় আরো কয়েকজন সহযোদ্ধা শিক্ষার্থীর সাথে সিয়াম গুলিবিদ্ধ আবু সাঈদকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হন।

 

সিয়ামের মাথার ভেতরে ছয়টিসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে কমপক্ষে ৬০ টি ছররা গুলি বিদ্ধ হয়।

 

চরম অর্থ সংকটের কারণে দেশে বা বিদেশে উন্নত চিকিৎসা নিতে না পারায় সিয়াম এখন সার্বক্ষণিক অসহনীয় মাথা ব্যাথাসহ নানারকম শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। তার পড়ালেখাসহ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে দিন দিন এগিয়ে চলেছেন সিয়াম।

 

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগে তাওহীদুল হক সিয়াম (২৩) ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (বিবিএ) এর তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তিন বছর ধরে টিউশনি করে নিজের পড়ালেখা ও থাকা-খাওয়ার খরচ চালিয়ে আসছিলেন। অভাব অনটন থাকলেও কোন অভিযোগ ছিল না সিয়ামের।

 

নোয়াখালী জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার চরকাঁকড়া গ্রামে সিয়ামের জন্ম। তার প্রবাসী বাবা মো: শহিদুল হক (৫০) কয়েকবছর ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী দুবাইয়ে শ্রমিকের কাজ করছেন। চার পুত্র সন্তানের জননী সিয়ামের মা দিল আরা বেগম (৪২) একজন গৃহিণী। সিয়াম সবার বড়। তার মেজ ভাই মো: সাবরি (২১) নোয়াখালীর স্থানীয় একটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ালেখা করে। আরেক ভাই মো: সাইমুন (১৭) আলিম প্রথম বর্ষ এবং কনিষ্ঠ ভাই আব্দুর রহমান সালেম (১২) ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র।

 

কেবলমাত্র প্রবাসী পিতার সামান্য আয় দিয়ে কোনরকম টেনেটুনে চলে সিয়ামদের পরিবার।

 

সম্প্রতি বাসসের এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে সিয়াম ২৪ এর জুলাইয়ের সেই উত্তাল দিনগুলিতে তার, শহিদ আবু সাঈদ এবং অন্যান্য সহপাঠীর সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো বর্ণনা করেন।

 

সিয়াম বলেন, জুলাইয়ের প্রথম থেকে শিক্ষার্থীরা কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলনে সক্রিয় হয়। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্রও বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধন শুরু করে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছাত্র ছিলেন আবু সাঈদ, সোহান, শামসুর রহমান সুমন, নাহিদ হাসান শাকিল, রহমত আলী, সাবিনা ইয়াসমিনসহ অনেকে।

 

বর্তমানে নিষিদ্ধ বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অংশগ্রহণ না করার জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি ও বাধা দিয়েছিলেন।

 

সিয়াম বলেন, ‘যখন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা দেশব্যাপী ’বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করে, তখন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই কর্মসূচির সমর্থনে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নেয়।

 

ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে অবস্থান কর্মসূচির সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ছাত্রলীগ সভাপতি পোমেল বড়ুয়া তার সহযোগীদের সাথে ’বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণে শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে।

 

গত ১১ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নেয়। একটি প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করা কালে তারা বাধাপ্রাপ্ত হলে আন্দোলনটি এক ভিন্ন দিকে মোড় নেয়।

 

সিয়াম বলেন, ‘মিছিলটি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন গেট নং ১ বা বর্তমানের শহিদ আবু সাঈদ গেটে পৌঁছায়, তখন তৎকালীন প্রক্টর এবং প্রক্টোরাল বডির সদস্য শিক্ষকরা প্রথমে শিক্ষার্থীদের বাধা দেয়।

 

কিন্তু শিক্ষকদের বাধা উপেক্ষা করেই শিক্ষার্থীরা মিছিল করতে থাকলে একপর্যায়ে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা তাদের ওপর সন্ত্রাসী আক্রমণ করে এবং আবু সাঈদের গায়ে হাত তোলে।

 

আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৪ জুলাই রাত ১টার দিকে, যখন ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রদের রাজাকার বলে সম্বোধন করেন, তখন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার কথার তীব্র প্রতিবাদ করেন। ক্যাম্পাসের হল ও আশেপাশের মেসের শিক্ষার্থীরা তাদেরকে রাজাকার বলার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসেন।

 

সেদিন আবু সাঈদ, সুমন, সোহাগ এবং আহসান হাবিবসহ অন্যান্যরা তাৎক্ষণিক ক্যাম্পাসে ও আশেপাশের এলাকায় প্রতিবাদ মিছিল বের করেন। তখন ছাত্রলীগের সশস্ত্র নেতা-কর্মীরা শিক্ষার্থীদের দিকে উস্কানিমূলক স্লোগান দিতে দিতে ইট ও পাথর ছুঁড়ে অনেক ছাত্রকে আহত করে।


পরের দিন, ১৫ জুলাই, যখন সাধারণ ছাত্ররা একটি প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছিল, তখন সাধারণ ছাত্রদের প্রতিরোধ করার জন্য ছাত্রলীগ পাল্টা কর্মসূচি পালন করে।

 

সিয়াম বলেন, ‘আন্দোলন বন্ধ করার জন্য, পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ, মহানগর ছাত্রলীগ এবং অস্ত্রধারী বহিরাগতরাসহ অনেক সন্ত্রাসী সাধারণ ছাত্র এবং ছাত্রদের মেসে আক্রমণ করে।

 

এরপর ১৬ জুলাই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষিত কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রংপুর মহানগরীর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং স্কুল ও কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা সেদিন বিশাল প্রতিবাদ মিছিলে অংশগ্রহণ করে।

 

এ সময় নগরীর লালবাগ এলাকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে বিক্ষোভ মিছিল এগিয়ে এলে শত শত সশস্ত্র পুলিশ রাজপথে শিক্ষার্থীদের বাধা দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা ও ধস্তাধস্তি শুরু হয়।

 

পুলিশ শিক্ষার্থীদের দিকে কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এক পর্যায়ে পাঁচজন পুলিশ স্টিল ও কাঠের লাঠি দিয়ে আবু সাঈদের মাথায় আঘাত করতে শুরু করে।

 

এ পরিস্থিতিতে সিয়াম আবু সাঈদকে পুলিশের হাত থেকে রক্ষা করতে গেলে তাকেও মারধর করা হয়। পুলিশ আবু সাঈদকে লাঠি দিয়ে আঘাত করলে তার মাথা থেকে রক্ত ঝরতে থাকে।

 

তিনি বলেন, ‘পুলিশ যখন আবু সাঈদকে লাঠি দিয়ে আঘাত করছিল, তখন অন্য একজন পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট থেকে তাকে ও আমাকে রিভলবার দিয়ে গুলি করার চেষ্টা করে। কিন্তু আমি যখন তাদের দিকে ক্যামেরা তাক করি, তখন অন্য একজন পুলিশ সেই পুলিশ সদস্যকে আমাদের দিকে গুলি করতে বাধা দেয়।

 

সিয়াম বলেন, ‘এক পর্যায়ে আহত আবু সাঈদ আমার ক্যামেরার সামনে বলেন, ‘আমি আবু সাঈদ, ইংরেজি বিভাগের ছাত্র,’ এবং পুলিশকে চিৎকার করে বলেন, ‘শ্যুট মি...শ্যুট মি...।

 

এ সময়ে পুলিশ গেটের ভেতর থেকে গুলি, কাঁদানে গ্যাস এবং সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেট দখলে নেয়।

তিনি বলেন, ‘সব ছাত্র সরে যায়, কিন্তু আবু সাঈদ এবং আমি নড়ি না।

 

পুলিশের হামলার এক পর্যায়ে, আবু সাঈদ বুক প্রসারিত করে তাদের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তখন ১ নম্বর গেট থেকে একজন পুলিশ প্রথমে তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। প্রথম গুলিটি যখন আবু সাঈদের পেটে লাগে, তখন তিনি হতবাক হয়ে যান এবং হয়তো কিছু বুঝতে না পেরে আবার বুক প্রসারিত করে সেখানে দাঁড়িয়ে যান।

 

সিয়াম বলেন, ‘আমি যখন আবু সাঈদকে গুলি থেকে রক্ষা করতে যাচ্ছিলাম, তখন পুলিশ তাকে আবার পরপর দুই রাউন্ড গুলি করে, যার ফলে সে ঢলে মাটিতে পড়ে যায়। তারপর, আমি তার কাছে পৌঁছাই এবং আমাকে দেখার পর, আরও কিছু ছাত্র তাকে মাটি থেকে তোলার জন্য ধরে এবং তখন তিনি আবার পড়ে যান। তখন সকলে মিলে আবারো তাকে তুলে ধরি।

 

তিনি বলেন, ‘চার/পাঁচজন মিলে আমরা আবু সাঈদকে নিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন পুলিশ আমাদের লক্ষ্য করে আবার গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে আমার শরীরের বাম দিকটি ঝাঁঝরা ও ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। প্রায় ৬০টি ছররা গুলি আমার মাথা, মুখ, হাত, বাহু, পেট, কোমর এবং পায়ের বাম দিকে বিদ্ধ হয়।

 

সিয়াম আরো বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের ১৩তম ব্যাচের আন্দোলনরত ছাত্র আহমেদুল হক আলভী, আরেকজন সহযোদ্ধা ছাত্রের সাথে আমাকে রিকশায় করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।

 

তিনি বলেন, ‘সেখানে পৌঁছানোর পর আমি অনেক আহত সহযোদ্ধা ছাত্রদেরকে দেখতে পাই। তাদের অনেকের আঘাতই ছিল গুরুতর।

 

এত আহত ছাত্র দেখে, সিয়াম নিজের চিকিৎসা না করেই ফেসবুক লাইভে এসে হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসা পরিস্থিতি প্রচার করতে থাকেন। এ সময় তিনি নিজেও রক্তাক্ত অবস্থায় ছিলেন। তবুও তিনি আহত ছাত্রদের সাহায্য করার জন্য ডাক্তার ও নার্সদের ডাকেন।

 

অনেক পুলিশ তখন হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করা আহত ছাত্রদের সন্ত্রাসী ট্যাগ দিয়ে গ্রেপ্তার করার জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

 

সিয়াম বলেন, ‘এ ছাড়াও, আমি আবু সাঈদের কথা ভাবতে থাকি, কারণ তার অবস্থা খুবই গুরুতর ছিল। ফেসবুকে লাইভ করার সময় আমি আবু সাঈদের খোঁজ নিতে যাই। আমি দেখতে পাই যে তাকে দ্বিতীয় তলায় রাখা হয়েছে। সেখানে আমি বিকেল ৩:৪৫ মিনিটে গিয়ে আবু সাঈদকে মৃত অবস্থায় দেখতে পাই।

 

তিনি বলেন, ‘একইসাথে আন্দোলনরত অবস্থায় আমার সামনে একজন আইকনিক ব্যক্তিকে গুলিবিদ্ধ হতে দেখে এবং অল্প সময়ের ব্যবধানে তার মৃতদেহ দেখে আমি নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ি।এদিকে, আমার শরীরে রক্ত জমাট বেঁধে শুকিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পর ডাক্তার আমাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন।


প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়ার পর সিয়াম হাসপাতালে আর নিরাপদ বোধ করেননি। তিনি ভয় পান এই ভেবে যে পুলিশ যে কোনো মুহূর্তে তাকে সেখান থেকে গ্রেপ্তার করতে পারে।

 

তিনি বলেন, ‘এই ভয়ে আমি ডাক্তারদের না জানিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাই। তারপর আমি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আমার মেসে যাই। শরীরে থাকা অসংখ্য ছররা গুলির ব্যথা সহ্য করতে না পেরে কদিন পরে রংপুরের বেসরকারি আল মদিনা হাসপাতালে যাই। সেখানে আমার শরীরে প্রথম অস্ত্রোপচার করা হয়।

 

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সিয়ামের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে তার চিকিৎসা করে।

 

আবার কয়েকদিন পরে সিয়াম চরম গোপনীয়তা বজায় রেখে রংপুরের বেসরকারি মেডিল্যান্ড হাসপাতালে তার দ্বিতীয় অস্ত্রোপচার করেন।

 

তিনি বলেন, ‘অল্প সময়ের মধ্যে দুটি অস্ত্রোপচার করার পরেও আমার মাথার সংবেদনশীল স্থানগুলোতে এখনও পাঁচটি ছররা রয়েছে। ফলে, আমি মাথায় সার্বক্ষণিক তীব্র ব্যথা অনুভব করি। আমার মুখ, হাত, কোমর এবং পায়ের বিভিন্ন জায়গায় অনেক গুলির স্পিøন্টার রয়েছে।

 

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত হওয়ার পর সিয়াম তার মেসে থাকা-খাওয়াসহ শিক্ষার অর্থায়নের অন্যতম উৎস টিউশনি হারিয়ে ফেলেন।

 

সিয়াম বলেন, ‘আন্দোলনের তথ্য ছড়িয়ে দেয়ার জন্য আমি ফেসবুকে লাইভ প্রোগ্রাম করতাম। শুরু থেকেই এ কাজ করতে গিয়ে আমি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছি। আমার ফোনের ক্যামেরা ভেঙে গেছে। এদিকে চিকিৎসার জন্য ধার করেছি। এখন আমি ঋণগ্রস্ত। দারিদ্র্যের সাথে মাথায় ছররার কারণে তীব্র যন্ত্রণা আমাকে আরও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করেছে।

 

তিনি বলেন, ‘এখন আমি আর মানসিক চাপ নিতে পারছি না। অসুস্থতা এবং মাথাব্যথা আমার নিত্যদিনের সঙ্গী। আমার একাডেমিক পড়াশোনার জন্য একটি ল্যাপটপ কিনতে হতো। এজন্য আমি বছরের পর বছর ধরে টাকা সঞ্চয় করে আসছিলাম। কিন্তু, চিকিৎসা খরচ মেটাতে আমি সেই টাকাও খরচ করেছি। ভবিষ্যতে আমার জন্য কী অপেক্ষা করছে, তা জানি না।

 

সিয়ামের গত ৫ আগস্ট শেষ অস্ত্রোপচার করেছিলেন রংপুরের মেডিল্যান্ড হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জন ডাঃ মোঃ আমিনুর রহমান। এ সময় এই চিকিৎসক তাকে বলেছিলেন যে তার মাথার যে জায়গাগুলিতে ছররা রয়েছে, সেগুলি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।


সিয়াম বলেন, ‘ডাক্তার আমাকে পরামর্শ দিয়েছেন যে যদি শারীরিক সমস্যা না হয়, তবে ছররাগুলি আমার শরীরে বহন করতে হবে। যদি অন্য কোনও উন্নত চিকিৎসার নেয়ার সুযোগ থাকে, তবে তিনি আমাকে অবিলম্বে তা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

 

মাথায় ছররা গুলির কারণে সিয়াম পড়াশোনা করতে পারছেন না। পারছেন না কোনকিছুতে মনোযোগও দিতে। তিনি মাথার অসহনীয় যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে চান উন্নত চিকিৎসা। অথচ সিয়াম চরম আর্থিক সংকটে ভুগছেন।

 

জুলাই বিপ্লবের অন্যতম এক নায়ক সিয়াম। তার জন্যে কে করবে এই ব্যবস্থা? -বাসস
 

ইসরাইল অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ইয়েমেন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর রাজধানী তেলআবিবের বেন-গুরিয়ন বিমানবন্দরে সব ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে। শনিবার সকালে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির গণমাধ্যম। 

 

ইসরাইলি টিভি চ্যানেল ১২ জানিয়েছে, ইয়েমেন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে অধিকৃত তেলআবিব এবং আল-কুদস অঞ্চলে সাইরেন বাজানো হয়েছে।

 

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ইসরাইলের সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে যে, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইয়েমেন থেকে ছোঁড়া হয়েছে। আর এ হামলার ফলে অধিকৃত কেন্দ্রীয় অঞ্চলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এবং মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে পালানোর সময় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। 

 

এ অবস্থায় ইসরাইলের নিরাপত্তা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তৎপর হয়েছে এবং হামলার উৎস সম্পর্কে তদন্ত চালাচ্ছে।

 

এদিকে, ইয়েমেন থেকে আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর অধিকৃত তেলআবিব এবং তার আশপাশের এলাকায় সাইরেন বেজে ওঠার খবর পাওয়া গেছে।

 

ইহুদিবাদী গণমাধ্যম জানিয়েছে, শনিবার সকালে এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে তেলআবিব এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় সাইরেন সক্রিয় হয়।

 

সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা আতঙ্কিত হয়ে আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে পালাচ্ছে।

 

ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনী এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে।#

বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাসপোর্ট বাতিল ঘোষণার একদিন পরই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভিসার মেয়াদ বাড়িয়েছে ভারত। আজ (বুধবার) ভারতীয় গণমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে।

 

ওয়াকিবহাল ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, হাসিনার ভারতবাস দীর্ঘায়িত করার সুযোগ দিতে সম্প্রতি তার ভিসার মেয়াদ বাড়ানো হয়। তবে হাসিনাকে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার যে গুঞ্জন রয়েছে, তা উড়িয়ে দিয়েছে ওই সূত্রগুলোকারণ শরণার্থী এবং রাজনৈতিক আশ্রয়ের মত বিষয়গুলো নিয়ে ভারতে সুনির্দিষ্ট কোনো আইন নেই।

 

ভারত ঠিক কবে শেখ হাসিনার ভিসার মেয়াদ বাড়িয়েছে এবং কতদিনের জন্য তা বাড়ানো হয়েছে, সেসব তথ্য মেলেনি হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে।

 

পত্রিকাটি লিখেছে, ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস (এফআরআরও) শেখ হাসিনার ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিল।

 

ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট পালিয়ে ভারতে চলে যান। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।

 

হিন্দুস্তান টাইমস লিখেছে, ৫ আগস্ট দিল্লির হিন্দান বিমানঘাঁটিতে পৌঁছানোর পর থেকে শেখ হাসিনার সঙ্গে বাইরের কারো যোগাযোগ করার সুযোগ নিয়ন্ত্রিত রাখা হয়েছে। তাকে এখন দিল্লির একটি সেইফ হাউজে রাখা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

 

আন্দোলন দমন করতে গিয়ে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা হয়েছে। গণহত্যা ও গুমের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

 

বিচারের মুখোমুখি করার জন্য শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে গত ২৩ ডিসেম্বর ভারতকে একটি কূটনৈতিক পত্র (নোট ভার্বাল) পাঠায় বাংলাদেশ সরকার। ভারতীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস লিখেছে, দিল্লি সম্ভবত ওই পত্রের কোনো জবাব দেবে না, কারণ, তাদের ভাষায়, প্রত্যর্পণের জন্য যে ধরনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়, এক্ষেত্রে তা করা হয়নি।

 

এদিকে, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর মঙ্গলবার জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুম এবং জুলাই অভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ৯৭ জনের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে, যার মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাসপোর্টও আছে।

 

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, "পাসপোর্ট অফিস থেকে জানানো হয়েছে, যারা গুম এবং হত্যার সঙ্গে জড়িত, তেমন ২২ জনের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। এবং জুলাই কিলিংয়ের সাথে জড়িত বা জুলাই কিলিংয়ের জন্য অভিযুক্ত এই রকম ৭৫ জনের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে আমাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও রয়েছেন।

শেখ হাসিনার পাসপোর্ট বাতিলের বিষয় ভারতকে জানানো হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নে আজাদ মজুমদার বলেন, উনার যে পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে, এটা কিন্তু ভারত সরকারও জানে এবং ভারত সরকার থেকে ইতোমধ্যে বলা হয়েছে যে, উনাকে ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট ইস্যু করা হয়েছে।#

ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির দামের পতনে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। সপ্তাহের প্রথম দিনে আজ (সোমবার) ০.৪ শতাংশ পতনের পর ডলারের বিপরীতে রুপির দাম দাঁড়িয়েছে ৮৬.৩৯।

 

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের অর্থনীতিতে এটি বড় ধাক্কা। মূলত ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফেরা ও মার্কিন আর্থিক নীতির প্রভাবে ভারতীয় রুপির এই পতনের ধারা অব্যাহত থাকবে বলে অনুমান তারা মনে করছেন।

 

ভারতীয় রুপির মানের এই রেকর্ড পতনের কারণ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মতে,  ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের ফলে মার্কিন নীতিতে বহু পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। মার্কিন শ্রম দপ্তরের সাম্প্রতিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, সেদেশে চাকরির সুযোগ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বেকারত্ব দূর করতে ও কর্মসংস্থানের পাশাপাশি মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখছে শেষ মুহূর্তের বাইডেন প্রশাসন।

 

আর মার্কিন অর্থনীতির অগ্রগতি সরাসরি প্রভাব ফেলেছে ভারতীয় মুদ্রায়। এমনিতে ডলারের তুলনায় দুর্বল ছিল ভারতীয় টাকা। ভারতের ক্ষেত্রে মোদি সরকার আত্মনির্ভর ভারতের মতো পদক্ষেপ নিলেও বিদেশি পণ্য আমদানির নির্ভরতা খুব একটা কমেনি। পণ্য রপ্তানিতেও খুব বিশেষ গতি আসেনি।

 

এর পাশাপাশি অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, ট্রাম্প সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিদেশি কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত ভিসায় কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে। ফলে যে ভারতীয়রা আমেরিকায় চাকরি করেন তাদের উপর বেশ প্রভাব পড়বে। আর সেই প্রভাব পড়বে ভারতের অর্থনীতিতে। মুদ্রাস্ফীতিও বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা।#

প্রতিবেদন: মোঃ মামুন ইসলাম, রংপুর, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীর মতো সিয়ামও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছিলেন সক্রিয়। তিনি শহিদ আবু সাঈদের সাথে জুলাইয়ের শুরু থেকেই সকল কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

 

গত ১৬ জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদের শাহাদতবরণের সময়ও সিয়াম তার পাশে ছিলেন। এ সময় আরো কয়েকজন সহযোদ্ধা শিক্ষার্থীর সাথে সিয়াম গুলিবিদ্ধ আবু সাঈদকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হন।

 

সিয়ামের মাথার ভেতরে ছয়টিসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে কমপক্ষে ৬০ টি ছররা গুলি বিদ্ধ হয়।

 

চরম অর্থ সংকটের কারণে দেশে বা বিদেশে উন্নত চিকিৎসা নিতে না পারায় সিয়াম এখন সার্বক্ষণিক অসহনীয় মাথা ব্যাথাসহ নানারকম শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। তার পড়ালেখাসহ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে দিন দিন এগিয়ে চলেছেন সিয়াম।

 

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগে তাওহীদুল হক সিয়াম (২৩) ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (বিবিএ) এর তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তিন বছর ধরে টিউশনি করে নিজের পড়ালেখা ও থাকা-খাওয়ার খরচ চালিয়ে আসছিলেন। অভাব অনটন থাকলেও কোন অভিযোগ ছিল না সিয়ামের।

 

নোয়াখালী জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার চরকাঁকড়া গ্রামে সিয়ামের জন্ম। তার প্রবাসী বাবা মো: শহিদুল হক (৫০) কয়েকবছর ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী দুবাইয়ে শ্রমিকের কাজ করছেন। চার পুত্র সন্তানের জননী সিয়ামের মা দিল আরা বেগম (৪২) একজন গৃহিণী। সিয়াম সবার বড়। তার মেজ ভাই মো: সাবরি (২১) নোয়াখালীর স্থানীয় একটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ালেখা করে। আরেক ভাই মো: সাইমুন (১৭) আলিম প্রথম বর্ষ এবং কনিষ্ঠ ভাই আব্দুর রহমান সালেম (১২) ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র।

 

কেবলমাত্র প্রবাসী পিতার সামান্য আয় দিয়ে কোনরকম টেনেটুনে চলে সিয়ামদের পরিবার।

 

সম্প্রতি বাসসের এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে সিয়াম ২৪ এর জুলাইয়ের সেই উত্তাল দিনগুলিতে তার, শহিদ আবু সাঈদ এবং অন্যান্য সহপাঠীর সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো বর্ণনা করেন।

 

সিয়াম বলেন, জুলাইয়ের প্রথম থেকে শিক্ষার্থীরা কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলনে সক্রিয় হয়। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্রও বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধন শুরু করে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছাত্র ছিলেন আবু সাঈদ, সোহান, শামসুর রহমান সুমন, নাহিদ হাসান শাকিল, রহমত আলী, সাবিনা ইয়াসমিনসহ অনেকে।

 

বর্তমানে নিষিদ্ধ বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অংশগ্রহণ না করার জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি ও বাধা দিয়েছিলেন।

 

সিয়াম বলেন, ‘যখন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা দেশব্যাপী ’বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করে, তখন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই কর্মসূচির সমর্থনে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নেয়।

 

ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে অবস্থান কর্মসূচির সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ছাত্রলীগ সভাপতি পোমেল বড়ুয়া তার সহযোগীদের সাথে ’বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণে শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে।

 

গত ১১ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নেয়। একটি প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করা কালে তারা বাধাপ্রাপ্ত হলে আন্দোলনটি এক ভিন্ন দিকে মোড় নেয়।

 

সিয়াম বলেন, ‘মিছিলটি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন গেট নং ১ বা বর্তমানের শহিদ আবু সাঈদ গেটে পৌঁছায়, তখন তৎকালীন প্রক্টর এবং প্রক্টোরাল বডির সদস্য শিক্ষকরা প্রথমে শিক্ষার্থীদের বাধা দেয়।

 

কিন্তু শিক্ষকদের বাধা উপেক্ষা করেই শিক্ষার্থীরা মিছিল করতে থাকলে একপর্যায়ে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা তাদের ওপর সন্ত্রাসী আক্রমণ করে এবং আবু সাঈদের গায়ে হাত তোলে।

 

আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৪ জুলাই রাত ১টার দিকে, যখন ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রদের রাজাকার বলে সম্বোধন করেন, তখন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার কথার তীব্র প্রতিবাদ করেন। ক্যাম্পাসের হল ও আশেপাশের মেসের শিক্ষার্থীরা তাদেরকে রাজাকার বলার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসেন।

 

সেদিন আবু সাঈদ, সুমন, সোহাগ এবং আহসান হাবিবসহ অন্যান্যরা তাৎক্ষণিক ক্যাম্পাসে ও আশেপাশের এলাকায় প্রতিবাদ মিছিল বের করেন। তখন ছাত্রলীগের সশস্ত্র নেতা-কর্মীরা শিক্ষার্থীদের দিকে উস্কানিমূলক স্লোগান দিতে দিতে ইট ও পাথর ছুঁড়ে অনেক ছাত্রকে আহত করে।


পরের দিন, ১৫ জুলাই, যখন সাধারণ ছাত্ররা একটি প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছিল, তখন সাধারণ ছাত্রদের প্রতিরোধ করার জন্য ছাত্রলীগ পাল্টা কর্মসূচি পালন করে।

 

সিয়াম বলেন, ‘আন্দোলন বন্ধ করার জন্য, পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ, মহানগর ছাত্রলীগ এবং অস্ত্রধারী বহিরাগতরাসহ অনেক সন্ত্রাসী সাধারণ ছাত্র এবং ছাত্রদের মেসে আক্রমণ করে।

 

এরপর ১৬ জুলাই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষিত কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রংপুর মহানগরীর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং স্কুল ও কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা সেদিন বিশাল প্রতিবাদ মিছিলে অংশগ্রহণ করে।

 

এ সময় নগরীর লালবাগ এলাকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে বিক্ষোভ মিছিল এগিয়ে এলে শত শত সশস্ত্র পুলিশ রাজপথে শিক্ষার্থীদের বাধা দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা ও ধস্তাধস্তি শুরু হয়।

 

পুলিশ শিক্ষার্থীদের দিকে কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এক পর্যায়ে পাঁচজন পুলিশ স্টিল ও কাঠের লাঠি দিয়ে আবু সাঈদের মাথায় আঘাত করতে শুরু করে।

 

এ পরিস্থিতিতে সিয়াম আবু সাঈদকে পুলিশের হাত থেকে রক্ষা করতে গেলে তাকেও মারধর করা হয়। পুলিশ আবু সাঈদকে লাঠি দিয়ে আঘাত করলে তার মাথা থেকে রক্ত ঝরতে থাকে।

 

তিনি বলেন, ‘পুলিশ যখন আবু সাঈদকে লাঠি দিয়ে আঘাত করছিল, তখন অন্য একজন পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট থেকে তাকে ও আমাকে রিভলবার দিয়ে গুলি করার চেষ্টা করে। কিন্তু আমি যখন তাদের দিকে ক্যামেরা তাক করি, তখন অন্য একজন পুলিশ সেই পুলিশ সদস্যকে আমাদের দিকে গুলি করতে বাধা দেয়।

 

সিয়াম বলেন, ‘এক পর্যায়ে আহত আবু সাঈদ আমার ক্যামেরার সামনে বলেন, ‘আমি আবু সাঈদ, ইংরেজি বিভাগের ছাত্র,’ এবং পুলিশকে চিৎকার করে বলেন, ‘শ্যুট মি...শ্যুট মি...।

 

এ সময়ে পুলিশ গেটের ভেতর থেকে গুলি, কাঁদানে গ্যাস এবং সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেট দখলে নেয়।

তিনি বলেন, ‘সব ছাত্র সরে যায়, কিন্তু আবু সাঈদ এবং আমি নড়ি না।

 

পুলিশের হামলার এক পর্যায়ে, আবু সাঈদ বুক প্রসারিত করে তাদের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তখন ১ নম্বর গেট থেকে একজন পুলিশ প্রথমে তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। প্রথম গুলিটি যখন আবু সাঈদের পেটে লাগে, তখন তিনি হতবাক হয়ে যান এবং হয়তো কিছু বুঝতে না পেরে আবার বুক প্রসারিত করে সেখানে দাঁড়িয়ে যান।

 

সিয়াম বলেন, ‘আমি যখন আবু সাঈদকে গুলি থেকে রক্ষা করতে যাচ্ছিলাম, তখন পুলিশ তাকে আবার পরপর দুই রাউন্ড গুলি করে, যার ফলে সে ঢলে মাটিতে পড়ে যায়। তারপর, আমি তার কাছে পৌঁছাই এবং আমাকে দেখার পর, আরও কিছু ছাত্র তাকে মাটি থেকে তোলার জন্য ধরে এবং তখন তিনি আবার পড়ে যান। তখন সকলে মিলে আবারো তাকে তুলে ধরি।

 

তিনি বলেন, ‘চার/পাঁচজন মিলে আমরা আবু সাঈদকে নিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন পুলিশ আমাদের লক্ষ্য করে আবার গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে আমার শরীরের বাম দিকটি ঝাঁঝরা ও ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। প্রায় ৬০টি ছররা গুলি আমার মাথা, মুখ, হাত, বাহু, পেট, কোমর এবং পায়ের বাম দিকে বিদ্ধ হয়।

 

সিয়াম আরো বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের ১৩তম ব্যাচের আন্দোলনরত ছাত্র আহমেদুল হক আলভী, আরেকজন সহযোদ্ধা ছাত্রের সাথে আমাকে রিকশায় করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।

 

তিনি বলেন, ‘সেখানে পৌঁছানোর পর আমি অনেক আহত সহযোদ্ধা ছাত্রদেরকে দেখতে পাই। তাদের অনেকের আঘাতই ছিল গুরুতর।

 

এত আহত ছাত্র দেখে, সিয়াম নিজের চিকিৎসা না করেই ফেসবুক লাইভে এসে হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসা পরিস্থিতি প্রচার করতে থাকেন। এ সময় তিনি নিজেও রক্তাক্ত অবস্থায় ছিলেন। তবুও তিনি আহত ছাত্রদের সাহায্য করার জন্য ডাক্তার ও নার্সদের ডাকেন।

 

অনেক পুলিশ তখন হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করা আহত ছাত্রদের সন্ত্রাসী ট্যাগ দিয়ে গ্রেপ্তার করার জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

 

সিয়াম বলেন, ‘এ ছাড়াও, আমি আবু সাঈদের কথা ভাবতে থাকি, কারণ তার অবস্থা খুবই গুরুতর ছিল। ফেসবুকে লাইভ করার সময় আমি আবু সাঈদের খোঁজ নিতে যাই। আমি দেখতে পাই যে তাকে দ্বিতীয় তলায় রাখা হয়েছে। সেখানে আমি বিকেল ৩:৪৫ মিনিটে গিয়ে আবু সাঈদকে মৃত অবস্থায় দেখতে পাই।

 

তিনি বলেন, ‘একইসাথে আন্দোলনরত অবস্থায় আমার সামনে একজন আইকনিক ব্যক্তিকে গুলিবিদ্ধ হতে দেখে এবং অল্প সময়ের ব্যবধানে তার মৃতদেহ দেখে আমি নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ি।এদিকে, আমার শরীরে রক্ত জমাট বেঁধে শুকিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পর ডাক্তার আমাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন।


প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়ার পর সিয়াম হাসপাতালে আর নিরাপদ বোধ করেননি। তিনি ভয় পান এই ভেবে যে পুলিশ যে কোনো মুহূর্তে তাকে সেখান থেকে গ্রেপ্তার করতে পারে।

 

তিনি বলেন, ‘এই ভয়ে আমি ডাক্তারদের না জানিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাই। তারপর আমি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আমার মেসে যাই। শরীরে থাকা অসংখ্য ছররা গুলির ব্যথা সহ্য করতে না পেরে কদিন পরে রংপুরের বেসরকারি আল মদিনা হাসপাতালে যাই। সেখানে আমার শরীরে প্রথম অস্ত্রোপচার করা হয়।

 

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সিয়ামের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে তার চিকিৎসা করে।

 

আবার কয়েকদিন পরে সিয়াম চরম গোপনীয়তা বজায় রেখে রংপুরের বেসরকারি মেডিল্যান্ড হাসপাতালে তার দ্বিতীয় অস্ত্রোপচার করেন।

 

তিনি বলেন, ‘অল্প সময়ের মধ্যে দুটি অস্ত্রোপচার করার পরেও আমার মাথার সংবেদনশীল স্থানগুলোতে এখনও পাঁচটি ছররা রয়েছে। ফলে, আমি মাথায় সার্বক্ষণিক তীব্র ব্যথা অনুভব করি। আমার মুখ, হাত, কোমর এবং পায়ের বিভিন্ন জায়গায় অনেক গুলির স্পিøন্টার রয়েছে।

 

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত হওয়ার পর সিয়াম তার মেসে থাকা-খাওয়াসহ শিক্ষার অর্থায়নের অন্যতম উৎস টিউশনি হারিয়ে ফেলেন।

 

সিয়াম বলেন, ‘আন্দোলনের তথ্য ছড়িয়ে দেয়ার জন্য আমি ফেসবুকে লাইভ প্রোগ্রাম করতাম। শুরু থেকেই এ কাজ করতে গিয়ে আমি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছি। আমার ফোনের ক্যামেরা ভেঙে গেছে। এদিকে চিকিৎসার জন্য ধার করেছি। এখন আমি ঋণগ্রস্ত। দারিদ্র্যের সাথে মাথায় ছররার কারণে তীব্র যন্ত্রণা আমাকে আরও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করেছে।

 

তিনি বলেন, ‘এখন আমি আর মানসিক চাপ নিতে পারছি না। অসুস্থতা এবং মাথাব্যথা আমার নিত্যদিনের সঙ্গী। আমার একাডেমিক পড়াশোনার জন্য একটি ল্যাপটপ কিনতে হতো। এজন্য আমি বছরের পর বছর ধরে টাকা সঞ্চয় করে আসছিলাম। কিন্তু, চিকিৎসা খরচ মেটাতে আমি সেই টাকাও খরচ করেছি। ভবিষ্যতে আমার জন্য কী অপেক্ষা করছে, তা জানি না।

 

সিয়ামের গত ৫ আগস্ট শেষ অস্ত্রোপচার করেছিলেন রংপুরের মেডিল্যান্ড হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জন ডাঃ মোঃ আমিনুর রহমান। এ সময় এই চিকিৎসক তাকে বলেছিলেন যে তার মাথার যে জায়গাগুলিতে ছররা রয়েছে, সেগুলি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।


সিয়াম বলেন, ‘ডাক্তার আমাকে পরামর্শ দিয়েছেন যে যদি শারীরিক সমস্যা না হয়, তবে ছররাগুলি আমার শরীরে বহন করতে হবে। যদি অন্য কোনও উন্নত চিকিৎসার নেয়ার সুযোগ থাকে, তবে তিনি আমাকে অবিলম্বে তা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

 

মাথায় ছররা গুলির কারণে সিয়াম পড়াশোনা করতে পারছেন না। পারছেন না কোনকিছুতে মনোযোগও দিতে। তিনি মাথার অসহনীয় যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে চান উন্নত চিকিৎসা। অথচ সিয়াম চরম আর্থিক সংকটে ভুগছেন।

 

জুলাই বিপ্লবের অন্যতম এক নায়ক সিয়াম। তার জন্যে কে করবে এই ব্যবস্থা? -বাসস
 

ইসরাইল অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ইয়েমেন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর রাজধানী তেলআবিবের বেন-গুরিয়ন বিমানবন্দরে সব ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে। শনিবার সকালে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির গণমাধ্যম। 

 

ইসরাইলি টিভি চ্যানেল ১২ জানিয়েছে, ইয়েমেন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে অধিকৃত তেলআবিব এবং আল-কুদস অঞ্চলে সাইরেন বাজানো হয়েছে।

 

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ইসরাইলের সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে যে, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইয়েমেন থেকে ছোঁড়া হয়েছে। আর এ হামলার ফলে অধিকৃত কেন্দ্রীয় অঞ্চলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এবং মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে পালানোর সময় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। 

 

এ অবস্থায় ইসরাইলের নিরাপত্তা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তৎপর হয়েছে এবং হামলার উৎস সম্পর্কে তদন্ত চালাচ্ছে।

 

এদিকে, ইয়েমেন থেকে আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর অধিকৃত তেলআবিব এবং তার আশপাশের এলাকায় সাইরেন বেজে ওঠার খবর পাওয়া গেছে।

 

ইহুদিবাদী গণমাধ্যম জানিয়েছে, শনিবার সকালে এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে তেলআবিব এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় সাইরেন সক্রিয় হয়।

 

সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা আতঙ্কিত হয়ে আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে পালাচ্ছে।

 

ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনী এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে।#

সীমান্তের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে পররাষ্ট্র দফতরে তলবের পরদিনই দিল্লিতে বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনার নুরুল ইসলামকে তলব করেছে ভারত।

 

আজ (সোমবার) ভারতের এএনআই, এনডিটিভিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নয়াদিল্লি ও ঢাকার মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা নিয়ে আলোচনা করতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোমবার দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনার নুরুল ইসলামকে তলব করেছে।

 

আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ-ভারতের ৪,১৫৬ কিলোমিটার সীমান্তের নির্দিষ্ট পাঁচটি স্থানে ভারত বেড়া নির্মাণের চেষ্টা করছে এমন অভিযোগে রবিবার ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলব করা হয়। এর পরদিনই দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশি উপ-হাইকমিশনার নুরুল ইসলামকে তলব করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বৈঠক শেষে দুপুরে দিল্লির সাউথ ব্লক থেকে বের হতে দেখা যায় উপ-হাইকমিশনার নুরুল ইসলামকে।

 

বাংলাদেশ সীমান্তে নির্দিষ্ট পাঁচটি স্থানে বেড়া দেয়ার চেষ্টা করছে অভিযোগে গতকাল রোববার প্রণয় ভার্মাকে তলব করে ঢাকা। এদিন বিকেল ৩টার দিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান প্রণয় ভার্মা। সেখানে পররাষ্ট্রসচিব জসিম উদ্দিনের সঙ্গে প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে বৈঠক করেন তিনি।

 

বৈঠকে প্রণয় ভার্মা বলেন, ঢাকা এবং নয়াদিল্লির নিরাপত্তার জন্য সীমান্তে বেড়া নির্মাণের বিষয়ে সমঝোতা রয়েছে। আমাদের দুই সীমান্তরক্ষী বাহিনী- বিএসএফ এবং বিজিবি (বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ)- এই বিষয়ে যোগাযোগ করছে। তিনি বলেন, আমরা আশা করি যে এই সমঝোতা বাস্তবায়িত হবে এবং সীমান্তে অপরাধ দমনে একটি সহযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে।

 

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে স্থিতিশীল বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, কিন্তু বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি এবং ভারতে আশ্রয় নেওয়া দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন সৃষ্টি করেছে।#

স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে ভিক্ষুক এবং প্রতারক বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট মূলত বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের মধ্য দিয়ে প্রতারণা করে চলেছেন, এটি বন্ধ হওয়া দরকার।

 

চলতি মাসের প্রথম দিকে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি তার দেশের ভেতর দিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে স্লোভাকিয়ায় রাশিয়ার গ্যাস সরররাহ বন্ধ করে দেন। এরপর ইউক্রেন এবং স্লোভাকিয়ার মধ্যে সম্পর্কের মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। 

 

শুক্রবার স্লোভাক পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির বৈঠকে রবার্ট ফিকো বলেন, আমি এখানে জেলেনস্কির হাত ধরার জন্য আসেনি এবং আমি স্বীকার করছি যে, আমি তার উপর মাঝে মাঝে বিরক্ত হই। জেলেনস্কি ইউরোপ ঘুরে বেড়াচ্ছেন, ভিক্ষা করছেন এবং প্রতারণা করছেন, অন্যদের কাছে অর্থ চাইছেন। এটা বন্ধ হওয়া দরকার।

 

ইউক্রেনকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে যে সহায়তা দিচ্ছে, অনেক আগে থেকেই তার সমালোচনা করে আসছেন রবার্ট ফিকো। তিনি শুরু থেকেই বলছেন, যুদ্ধের ময়দানে রাশিয়াকে হারানোর আশা করতে পারে না ইউক্রেন। সে কারণে তাদেরকে অবশ্যই সংঘাত বাদ দিয়ে কূটনৈতিক পথে সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।#

Site Counter

Online

1

Today

18

Total

4k

জুয়েল রানা,  সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি: 
সখীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে হামলার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 

 

বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে নিজ নিজ বাড়ি থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। আজ শুক্রবার তাঁদের টাঙ্গাইল আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকির হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- উপজেলার কালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাইনুল ইসলাম মুক্তা (৪০) ও হাতিবাবান্ধা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফরহাদ শিকদার (৫২)। 

 

মামলার বিবরণ সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ আগস্ট দুপুরে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে সখীপুর পৌর শহরের তালতলা চত্বরে যায়। সেখানে আসামিরা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করে। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। পরে ২৬ আগস্ট রাতে সখীপুর পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক মোরর্শেদুল ইসলাম অন্তর বাদী হয়ে ১৬৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১০০ থেকে ১৫০ জনের বিরুদ্ধে সখীপুর থানায় মামলা করেন।এই মামলায় এ পর্যন্ত মোট ১৪ জন গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

 

সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকির হোসেন বলেন, ছাত্রদের মিছিলে হামলার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ঢাকা, ১২ জানুয়ারি ২০২৫ : সেরা ছন্দ নিয়েই আবারও লিটন দাস জাতীয় দলে ফিরবেন বলে বিশ্বাস করেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচক প্যানেলের চেয়ারম্যান গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর।  ফর্মহীনতার কারণে আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ দলে সুযোগ হয়নি লিটনের।

 

আজ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য বাংলাদেশ দল ঘোষণার সময় সাংবাদিকদের লিপু বলেন, ‘আমাদের বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞ আছেন, কিন্তু আমরা দেখেছি বিপক্ষ দলের বিশ্লেষকরা লিটনের বিপক্ষে সফল হয়ে যাচ্ছে।’

 

শেষ সাত ওয়ানডে ইনিংসে মাত্র ১৩ রান করায় লিটনকে দল থেকে বাদ দেয় নির্বাচকরা।  যদি শেষ পাঁচ ওয়ানডে ইনিংস বিবেচনা করা হয়, তাহলে মাত্র ৬ রান করেছেন তিনি। এরমধ্যে ৩ ইনিংসে কোন রান না করেই সাজঘরে ফিরেন লিটন। 

 

২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে সর্বশেষ হাফ-সেঞ্চুরি করেছিলেন লিটন। ঐ টুর্নামেন্টেও নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি তিনি। 

 

বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু বলেন, ‘তাকে দলের বাইরে রাখার এখনই উপযুক্ত সময়।  কারণ তার অফ-ফর্মের ধারা ভাঙতে উপায় খুঁজে বের করতে হবে।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘লিটনকে দল থেকে বাদ দেওয়ার মানে এই নয় যে সে জাতীয় দলের বাইরে ছিটকে গেছে। আমাদের সামনে অনেক ম্যাচ আছে এবং আমাদের বিশেষজ্ঞরা অবশ্যই তার দুর্বল জায়গাগুলোকে শক্তিশালী করতে তার সাথে কাজ করার সুযোগ পাবেন। আমরা চাই সেরা ছন্দ নিয়েই সে ফিরে আসুক।’

 

চলতি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) শুরু থেকেও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি লিটন। তবে ঢাকা ক্যাপিটালসের হয়ে সর্বশেষ ম্যাচে খোলস থেকে বের হন তিনি। ৪৩ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দেন লিটন। যদিও ঐ ম্যাচে হেরেছে ঢাকা।

 

লিটনকে ফর্মে ফেরার জন্য যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন লিপু। তিনি জানান, তার খারাপ পারফরমেন্স বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। 

 

লিপু বলেন, "আমরা সবসময় চাই আমাদের ওপেনাররা পাওয়ার প্লের সুবিধা ভালোভাবে কাজে লাগাবে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পাওয়ার প্লেতে ভালো করতে পারেনি লিটন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যেখানে আমরা ৩’শর বেশি রান করেছি, সেখানে লিটনের স্ট্রাইক-রেট ভালো না। এমনকি ক্রিজেও বেশিক্ষণ থাকতে পারেনি লিটন।"

 

তিনি আরও বলেন, ‘যদি আমরা আরও ভালোভাবে দেখি তাহলে দেখবো চাপ নিয়ে ব্যাটিং করছে সে। তিন নম্বর ব্যাটার উন্মুক্ত হয়ে যাচ্ছে।  আমরা এখনও তার উপর আমাদের আস্থা রেখেছি এবং অনেক ম্যাচে তাকে সুযোগ দিয়েছি। তবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময় এসেছে। এমনকি যখন একজন ব্যাটার অফ-ফর্মে থাকে তখন সে আত্মবিশ্বাসের সাথে দলে নির্বাচিত হতে পারে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে আত্মবিশ্বাসের অবস্থানেও নেই লিটন।’

 

উদ্বোধনী জুটিতে সৌম্য সরকার এবং তানজিদ হাসান তামিম ভালো করছে বলে জানান লিপু, ‘সৌম্য সরকার এবং তানজিদ হাসান তামিম জুটি ভালো করছে। তারাই ইনিংস শুরু করবে। এমন একটি তথ্য অধিনায়কের সাথে আলোচনার পর আমরা জানতে পেরেছি। এজন্যই দলে জায়গা হয়নি লিটনের।’ 

 

তিনি আরও বলেন, ‘লিটনের ক্লাস বা মেধা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু লিটনের মতো যখন কেউ অফ-ফর্মে থাকে তখন আমাদের তাকে ঐ সংকট থেকে বের করে আনতে হবে। এই সময়ে লিটনের দুর্বল জায়গাগুলোকে কীভাবে শক্তিশালী করা যায় সেটা নিয়ে আমাদের বিশেষজ্ঞরা কাজ করার সুযোগ পাবে।’ 

বাংলাদেশে পাসপোর্ট বাতিলের পর শেখ হাসিনার ভিসার মেয়াদ বাড়াল ভারত

বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাসপোর্ট বাতিল ঘোষণার একদিন পরই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভিসার মেয়াদ বাড়িয়েছে ভারত। আজ (বুধবার) ভারতীয় গণমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে।

 

ওয়াকিবহাল ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, হাসিনার ভারতবাস দীর্ঘায়িত করার সুযোগ দিতে সম্প্রতি তার ভিসার মেয়াদ বাড়ানো হয়। তবে হাসিনাকে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার যে গুঞ্জন রয়েছে, তা উড়িয়ে দিয়েছে ওই সূত্রগুলোকারণ শরণার্থী এবং রাজনৈতিক আশ্রয়ের মত বিষয়গুলো নিয়ে ভারতে সুনির্দিষ্ট কোনো আইন নেই।

 

ভারত ঠিক কবে শেখ হাসিনার ভিসার মেয়াদ বাড়িয়েছে এবং কতদিনের জন্য তা বাড়ানো হয়েছে, সেসব তথ্য মেলেনি হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে।

 

পত্রিকাটি লিখেছে, ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস (এফআরআরও) শেখ হাসিনার ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিল।

 

ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট পালিয়ে ভারতে চলে যান। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।

 

হিন্দুস্তান টাইমস লিখেছে, ৫ আগস্ট দিল্লির হিন্দান বিমানঘাঁটিতে পৌঁছানোর পর থেকে শেখ হাসিনার সঙ্গে বাইরের কারো যোগাযোগ করার সুযোগ নিয়ন্ত্রিত রাখা হয়েছে। তাকে এখন দিল্লির একটি সেইফ হাউজে রাখা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

 

আন্দোলন দমন করতে গিয়ে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা হয়েছে। গণহত্যা ও গুমের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

 

বিচারের মুখোমুখি করার জন্য শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে গত ২৩ ডিসেম্বর ভারতকে একটি কূটনৈতিক পত্র (নোট ভার্বাল) পাঠায় বাংলাদেশ সরকার। ভারতীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস লিখেছে, দিল্লি সম্ভবত ওই পত্রের কোনো জবাব দেবে না, কারণ, তাদের ভাষায়, প্রত্যর্পণের জন্য যে ধরনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়, এক্ষেত্রে তা করা হয়নি।

 

এদিকে, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর মঙ্গলবার জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুম এবং জুলাই অভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ৯৭ জনের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে, যার মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাসপোর্টও আছে।

 

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, "পাসপোর্ট অফিস থেকে জানানো হয়েছে, যারা গুম এবং হত্যার সঙ্গে জড়িত, তেমন ২২ জনের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। এবং জুলাই কিলিংয়ের সাথে জড়িত বা জুলাই কিলিংয়ের জন্য অভিযুক্ত এই রকম ৭৫ জনের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে আমাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও রয়েছেন।

শেখ হাসিনার পাসপোর্ট বাতিলের বিষয় ভারতকে জানানো হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নে আজাদ মজুমদার বলেন, উনার যে পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে, এটা কিন্তু ভারত সরকারও জানে এবং ভারত সরকার থেকে ইতোমধ্যে বলা হয়েছে যে, উনাকে ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট ইস্যু করা হয়েছে।#

লন্ডনে পৌঁছেছেন খালেদা জিয়া, বিমানবন্দরে স্বাগত জানান তারেক-জুবাইদা

বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনে পৌঁছেছেন। আজ বুধবার (৮ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় সকাল ৯টার দিকে (বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টার দিকে) তাকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্স লন্ডনের হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষ তাঁকে ভিআইপি প্রটোকল দেয়।  

 

বিমানবন্দরে বেগম খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানান তাঁর বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান। এর মাধ্যমে প্রায় সাড়ে সাত বছর পর লন্ডনে সরাসরি দেখা হলো মা-ছেলের।

 

এর আগে বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় কাতারের দোহা বিমানবন্দরে পৌঁছায় খালেদা জিয়াকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্স। সেখানে আড়াই ঘণ্টা বিরতির পর এটি লন্ডনের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

 

গতকাল মঙ্গলবার রাত ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে ঢাকা হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে রওনা হন বিএনপি প্রধান।

 

এর আগে রাত ৮টা ১৫ মিনিটে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর রাজধানীর গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর রোডের বাসভবন ফিরোজা থেকে যাত্রা শুরু করে। রাস্তায় দুই ধারে হাজার হাজার সাধারণ মানুষ দুহাত তুলে তাকে বিদায় জানান। রাত ১০টা ৫০ মিনিটে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান।

 

গুলশান থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত দলের নেতাকর্মীদের খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়ি চারপাশ ঘিরে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানাতে থাকে। স্লোগান স্লোগানে মুখর করে তুলে।

 

এ সফরে খালেদা জিয়ার সঙ্গে রয়েছেন চিকিৎসক, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মোট ১৬ জন। এরমধ্যে চারজন চিকিৎসক ও প্যারামেডিকসরা রয়েছেন। এরা হলেন—অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার, অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিক, অধ্যাপক নরুদ্দিন আহমেদ, ডা. জাফর ইকবাল, অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও ডা. মোহাম্মদ আল মামুন। এ ছাড়া বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার ছোট ছেলের স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এনামুল হক চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল ও খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তারসহ ব্যক্তিগত কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন।

 

খালেদা জিয়ার চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার কারণে তার লিভার প্রতিস্থাপন খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, লিভার প্রতিস্থাপনের পর পুরো চিকিৎসায় কয়েক মাস লেগে যেতে পারে।
 

 

'সচিবালয়ে পুড়ে যাওয়া ফাইলের মধ্যে হাসিনার প্রধান আমলার অর্থ পাচারের ফাইল ছিল'

বাংলাদেশ সচিবালয়ে আগুনের ঘটনা গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার একজন প্রধান আমলা প্রচুর টাকা পাচার করেছেন। পুড়ে যাওয়া ফাইলগুলোর মধ্যে তাঁর সেই অর্থ পাচারের ফাইল ছিল।


আজ (শনিবার) সকালে রংপুরের মিঠাপুকুরের আটপুনিয়া গ্রামে সচিবালয়ে আগুন নেভাতে গিয়ে ট্রাকচাপায় নিহত ফায়ার সার্ভিসের কর্মী সোহানুর জামানের বাড়িতে শোকাহত পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানাতে এসে তিনি এসব কথা বলেন।


রিজভী বলেন, ‘অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি পুড়ে গেছে। অর্থ পাচারের শুধু একটা ঘটনা সেখানে উঠে এসেছে। আরও কত ঘটনা আছে। এসব ঘটনা ধামাচাপা দিতেই সচিবালয়ের নয়তলায় আগুন দেওয়া হয়েছে। যেখানে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র ছিল।’


বিএনপির এ জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, যাঁরা আগুন নেভানোর জন্য নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন, তাঁদের মধ্যে একজন সোহানুর জামান নয়ন। যিনি এই যুদ্ধ করতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন। 

 

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে তাদের দোসররা এখনো আছে। বিশেষ করে আমলাতন্ত্র এখনো ফ্যাসিবাদের তোষামদি করছে।

 

সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে লাগা আগুন নেভানোর কাজ করতে গিয়ে ট্রাকচাপায় মারা যান ফায়ার সার্ভিসের কর্মী সোহানুর জামান। তাঁর পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিতে আজ সকাল ১০টার দিকে রংপুরের মিঠাপুকুরের আটপুনিয়া গ্রামে সোহানুর জামানের বাড়িতে যান রুহুল কবির রিজভী। এ সময় তিনি এক মাসের মধ্যে সোহানুরের বোনকে চাকরি দিতে সরকারের কাছে দাবিও তুলে ধরেন। 


রিজভীর সঙ্গে ছিলেন বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান, সদস্যসচিব মোকছেদুল মোমিন, রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্যসচিব আনিসুর রহমানসহ জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতারা।#
 

নতুন কালেকশন নিয়ে কে ক্র্যাফট

বৈচিত্র্যময় পোশাকের বিশেষ আয়োজন নিয়ে এসেছে কে ক্র্যাফট। তাই সকাল, বিকেল এবং সন্ধ্যায় কাক্সিক্ষত বা উপযোগী পোশাক নির্বাচনে ক্যাজুয়াল কিংবা এক্সক্লুসিভ সবই মিলবে এবারের আয়োজন থেকে। এছাড়া লম্বা ছুটিতে যেখানেই যান তার জন্য প্রয়োজন স্টাইলিশ কিন্তু রিলাক্সড পোশাক। আবহাওয়া ও পরিবেশের সঙ্গে মানানসই এমনি সব পোশাক থাকবে এবারের আয়োজনে। 

 
মেয়েদের জন্য সালোয়ার কামিজ এবং কুর্তিতে ফ্রক স্টাইল, এ লাইন এবং রেগুলার শেপ ছাড়াও স্ট্রেইট কাট, রাফল, প্লিটেড, বক্স প্লিটেড স্টাইল থাকবে। নিজস্ব ডিজাইনের শাড়িতে মোটিফের ব্যবহার, কালার কম্বিনেশন এবং ভ্যালু অ্যাডিশনে নানা মিডিয়ার ব্যবহার সকলের দৃষ্টি  কাড়বে। ছেলেদের জন্য রয়েছে পছন্দের ব্র্যান্ড কে ক্র্যাফটের রেগুলার ও ফিটেড পাঞ্জাবি। এছাড়াও পাওয়া যাবে স্মার্ট ক্যাজুয়াল শার্ট, এথনিক শার্ট, ফতুয়া। কে ক্র্যাফটের ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, কুমিল্লার সকল শো-রুম ছাড়াও অনলাইন শপ kaykraft.com থেকে ঈদ আয়োজন এর পোশাক পাওয়া যাবে সাশ্রয়ী মূল্যে। এছাড়াও অর্ডার করা যাবে ফেসবুক পেজ থেকেও । 

আত্মরক্ষায় মেয়েদের উদ্যোগ

শারীরিকভাবে অপেক্ষাকৃত দুর্বল নারীদের নিয়ে সামাজিকভাবে এক প্রকার অবহেলা, উদাসীনতা প্রত্যক্ষ করা যায়। নিজেদের সুরক্ষার বিষয়ে তো অনেকখানিই। আত্মরক্ষা করার সুষম সক্ষমতা মেয়েদের কিছুটা পিছিয়ে রাখে এটাই সমাজ সংস্কারের নিয়ম। সেই আদিকাল থেকে আজ অবধি। কিন্তু যুগের পরিবর্তন, নতুন সময়ের আবেদনে নারীদের সদর্পে এগিয়ে চলা বর্তমানে ধারাবাহিক কার্যক্রমের অনুষঙ্গ। এখনো শারীরিক শক্তিময়তায় নারী খেলোয়াড়দের অনেক বাধাবিঘœ অতিক্রম করা নজরে আসতে সময় লাগছে না।

সেটাও কম কিছু নয়। কঠিন কর্মযোগে সম্পৃক্ত হতে গেলে সবার আগে প্রয়োজন সুস্থ, সবল শারীরিক সক্ষমতা। ক্রমান্বয়ে তা পারদর্শিতায় রূপ নিতে দেরি হয় না। যা সমতাভিত্তিক সমাজ-বিনির্মাণের নির্ণায়ক। সম্প্রতি এক খবরে মেয়েদের আত্মরক্ষার প্রস্তুতির ওপর চমকপ্রদ ঘটনা নজরকাড়ার মতো, পরনির্ভরশীলতা, দুর্বলতা, আর কিছুটা অক্ষমতায় পিছিয়ে পড়া মেয়েরা নিজ উদ্যোগে তাদের সবল করার প্রত্যয়ে ব্রতি হয়েছে। এমন ঘটনা ঘটে চট্টগ্রামের আনোয়ারায়। সেখানকার মেয়েরা আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেদের শারীরিক সক্ষমতাকে প্রমাণ করতে এগিয়ে এসেছে।

 

সত্যি এক অসাধারণ কর্ম সাধনা। ‘সবলা’ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেনÑ নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার কেন নাহি দিবে অধিকারÑ হে বিধাতা, সেটার জন্য অনেক অপেক্ষার পালা সীমা অতিক্রম করেছে। কিন্তু সেটাও যখন হাতের নাগালে তাই যেন সই। সংখ্যায় কম হলেও সামনে আরও বাড়বে। অসাম্য বৈষম্যের বন্ধনজালে আবদ্ধ নারীরা চিরায়ত অপসংস্কারেও আকণ্ঠ নিমজ্জিত। এক সময় খেলাধুলায় তাদের অংশীদারিত্বও ছিল নগণ্য। যুগের হাওয়ায় তা ধুলায় মিশিয়ে দিয়ে নিজেকে যে মাত্রায় প্রমাণ করে যাচ্ছে সেটা নারী জাতির অবিস্মরণীয় বিজয়।

 

কর্মজীবী নারীরা এখন ক্ষুদ্র পরিবার সামলিয়ে বৃহত্তর সামাজিক আঙিনায় পেশাগত কর্মযোগকেও অপ্রতিরোধ্য করে তুলছে। ভীরু নারীরা আজ সময়ের দুরন্ত আহ্বানে দুঃসাহসিক হয়ে উঠতেও যেন মরিয়া। স্বাবলম্বী হওয়া থেকে আরম্ভ করে শারীরিক সক্ষমতাকে প্রমাণ করা সবই যেন অপার মহিমার সঙ্গে অসম পারদর্শিতাকেও দৃষ্টিনন্দন করে তুলছে। 
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় নারীরা আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণের ওপর এক চমকপ্রদ ঘটনা সমসংখ্যককে নতুনভাবে উদ্ভাসিত করা। আপন দক্ষতা আর শক্তিময়তায় আনোয়ারা উপজেলায় বিভিন্ন ক্রীড়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পাশাপাশি ‘শাওলিন কুংফুং অ্যান্ড উন্ড একাডেমি’, ‘বাংলাদেশ টাইগার মার্শাল আর্ট’, ‘শাওলিন উন্ড ট্রেনিং সেন্টার’ নামে তিনটি নারী আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। কোনো কঠিন কাজের সামনে কাঁপন ওঠার মতো দুঃসময় নারীকে এখন আর সেভাবে তাড়া করে না।

তা ছাড়া জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শিশু সংস্থা ইউনিসেফের কার্যক্রমে শিশু-কিশোর সেলফ ডিফেন্স ক্লাব, মহিলা অধিদপ্তরের কিশোর-কিশোরী ক্লাবসহ আরও কিছু কার্যক্রমের মাধ্যমে আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণকে জোরালো করা হচ্ছে। আনোয়ারার এমন চমৎকার পরিবেশে ছেলেমেয়ে উভয়ই পাশাপাশি অবস্থান করে প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়াও সমতাভিত্তিক সুস্থ পরিবেশকে স্বাগত জানানো। ছেলেময়ের সমান অংশগ্রহণে পোশাক-পরিচ্ছেদেও কোনো বিভেদ নেই। এক রকম পোশাক পরে মানুষের মর্যাদায় যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে আধুনিক ও উদীয়মান প্রজন্ম তা আগামীর বাংলাদেশকে বৈষম্যহীনতার আদলে নতুন মোড়কে উন্মোচন তো করবেই।

এ ছাড়াও আছে এনজিও সংস্থার নানামাত্রিক প্রকল্প, যা ছেলেমেয়েকে সমান বিবেচনায় দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে নিয়ত সমতাভিত্তিক কর্মযোগ নিরন্তর করেই যাচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও সেলফ ডিফেন্সের প্রশিক্ষণ নিয়ে নারীরা পারদর্শী  আর শারীরিক সক্ষমতায় নিজেদের তৈরি করে যাচ্ছে। আধুনিক ও প্রযুক্তির নতুন বাংলাদেশের নব অধ্যায়ের শুভ সূচনা তো বটেই। তবে মেয়েদের শাশ্বত কর্মযোগকেও সমানভাবে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। যেমন সেলাই, বিউটিশিয়ান হিসেবেও প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেদের স্বাবলম্বী করতেও মেয়েরা এগিয়ে থাকছে।

নারী প্রশিক্ষণ প্রার্থীদের আবেগ-উচ্ছ্বাসেরও কোনো ঘাটতি নেই। পরম আনন্দে, স্বইচ্ছায় উদ্যোগী হয়ে তারা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রে নিজেদের যাত্রাকে সাবলীল আর অবারিত করে যাচ্ছে। তাদের আলাপচারিতায় আরও প্রত্যক্ষ হয় ঘর থেকে বাইরে যেতে গেলে পিতা-মাতা-অভিভাবকরা দুশ্চিন্তায় ভোগেন। নির্বিঘেœ, নিরাপদে যাওয়া-আসা করা যাবে তো? পথে-প্রান্তরে কোনো বিপত্তির আশঙ্কা নেই তো? তাই নিজের নিরাপত্তায় শারীরিকভাবে সক্ষম হওয়াও জরুরি। সঙ্গত কারণে আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণও সময়ের ন্যায্যতা দাবি করে। তার ওপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়ার পথে বখাটে ছেলেদের উৎপীড়ন, উৎপাত বহু সময় ধরে ঘটে যাওয়া এক দুঃসহ ঘটনার পালাক্রম।

সেখানে নিজেদের সুরক্ষায় প্রতিপক্ষকে থামাতে আত্মশক্তির বিকল্প অন্য কিছু নয়। এটা শুধু চট্টগ্রামের আনোয়ারাতে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। বরং বাংলাদেশের শহর-গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন প্রান্তরে এমন কার্যক্রম সম্প্রসারিত করতে হবে। যাতে সারাদেশের মেয়েদের রাস্তাঘাটে কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে যেতে-আসতে কোনো বাধাবিপত্তির মুখোমুখি হলে প্রতিরোধ করার শক্তিও যেন অন্তর্নিহিত বোধে জিইয়ে থাকে।

 
 

চায়ের সাথে ভুলেও যে ৪ খাবার খাবেন না

চা বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয়। এর প্রশান্তিদায়ক উষ্ণতা এবং অগণিত স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। তবে শুধু চা হলে জমে না অনেকের, এর সঙ্গে প্রয়োজন হয় অল্পস্বল্প কিছু খাবার। এরকম খাওয়া যেতেই পারে। তাতে ক্ষতির কিছু নেই। 

দুগ্ধজাত পণ্য

 

আমাদের দেশে জনপ্রিয় সব পানীয়ের মধ্যে অন্যতম হলো দুধ চা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চায়ের সঙ্গে দুগ্ধজাত কোনো খাবারই না খেতে। দুগ্ধজাত প্রোটিন চায়ের সূক্ষ্ম গন্ধকে পরিবর্তন করে এবং একে কম উপভোগ্য করে তোলে। যদিও আপনার চায়ে কিছুটা দুধ মেশানো গ্রহণযোগ্য হতে পারে, তবে চায়ের সঙ্গে পনির, দই বা ক্রিম খাওয়া এড়িয়ে যাওয়াই উত্তম।

 

সাইট্রাস ফল

কমলা, লেবু এবং আঙ্গুরের মতো সাইট্রাস ফল ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। এগুলো চায়ের ট্যানিনের সঙ্গে সংঘর্ষ করতে পারে, যার ফলে একটি তিক্ত বা ধাতব স্বাদ তৈরি হয়। সাইট্রাস ফলের অম্লতা চায়ের সঙ্গে মিলিত হলে পেট খারাপ হতে পারে, যা হজমের অস্বস্তি তৈরি করে। অনেকে চায়ের সঙ্গে লেবু মিশিয়ে খান, সামান্য লেবুর রসে সমস্যা নেই তবে আস্ত সাইট্রাস ফল চায়ের সঙ্গে খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

 

ঝাল খাবার

চায়ের সঙ্গে পাকোড়া, পুড়ি, সিঙ্গারা ইত্যাদি খাওয়ার অভ্যাস আমাদের অনেকেরই রয়েছে। কিন্তু এ ধরনের খাবার চায়ের সূক্ষ্ম স্বাদকে নষ্ট করতে পারে। সেইসঙ্গে ঝাল জাতীয় খাবারে থাকা ক্যাপসাইসিন এবং চায়ে থাকা ট্যানিনের সংমিশ্রণ গ্যাস্ট্রিক জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে। তাই চায়ের সঙ্গে যেকোনো ঝাল জাতীয় খাবার এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার

উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার, যেমন কাঁচা শাক-সবজি, গোটা শস্য এবং লেবু স্বাস্থ্যকর খাদ্যের জন্য অপরিহার্য। তবে এগুলো চায়ের সঙ্গে খাওয়া হলে তা আয়রনের মতো নির্দিষ্ট খনিজ শোষণে বাধা দিতে পারে। চায়ে অক্সালেট নামক যৌগ রয়েছে, যা খনিজের সঙ্গে আবদ্ধ হয় এবং তার শোষণকে বাধা দেয়। তাই চায়ের সঙ্গে উচ্চ ফাইবার যুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

ওজন কমাতে খাদ্য তালিকায় ওটস কতটা কার্যকর?

কর্মব্যস্ত জীবনে অনেকেই সকালের খাবার না খেয়ে কাজে বেরিয়ে পড়েন। যদিও এই অভ্যাস ভালো নয়। এর কারণে শরীরে হাজারো রোগ বাসা বাঁধতে পারে। শুধু তাই নয়, ওজনও বেড়ে যেতে পারে অনেকটা। এ ক্ষেত্রে ওটস হতে পারে মুশকিল আসান। 

রাতেই ভিজিয়ে রেখে দিতে পারেন ওটস। সকালে পাঁচ মিনিটেই তৈরি হয়ে যাবে পুষ্টিকর এ খাবার। সময়ও বাঁচবে আর পেটও ভরা থাকবে অনেক ক্ষণ।

 

 আর কী কী উপকার হবে?

 

» ওটসে সহজপাচ্য ফাইবার রয়েছে। এসব উপাদান ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ভালো।

» ওটসের সহজপাচ্য ফাইবার রক্তে থাকা ‘খারাপ’ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ফাইবার, পটাশিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সামগ্রিকভাবে হার্ট ভালো রাখে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেও ওটস কার্যকর।

» ক্যালোরি কম এবং ‘কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট’ থাকায় স্বাস্থ্য সচেতনদের কাছেও ওটসের কদর রয়েছে। ফাইবারে সমৃদ্ধ এই খাবার খেলে দীর্ঘ ক্ষণ পেট ভরা থাকে।

সতর্কতা- উল্লেখিত তথ্যগুলো পরামর্শস্বরূপ। ওজন কমাতে আরও ভালো ফল পেতে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন ও নিয়ম মেনে চলুন।

সম্পাদক : আবু তাহের

© ২০১৪-২০২৪, টাঙ্গাইল দর্পণ, অনলাইন নিউজ পেপার ২৪/৭