রবিবার ২৩ মার্চ ২০২৫, ৯ চৈত্র ১৪৩১

Logo
Logo

আসন্ন ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের সড়কে ভোগান্তি ও নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে। কারণ দেশের নাজুক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে অরক্ষিত মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ডাকাতি, ছিনতাই, দুর্ঘটনা ও যানজটের শঙ্কা রয়েছে। বেশির ভাগ মানুষ সাধারণত সড়ক পথেই ঈদের ছুটিতে শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরে যায়। কিন্তু দেশের আইন-শৃঙ্খলার নাজুক পরিস্থিতিতে এমনিতেই দেশের বিভিন্ন সড়কে ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। আর এবারের ঈদ যাত্রায় সড়ক-মহাসড়কে যানজট ও দুর্ঘটনার পাশাপাশি ডাকাতির আশঙ্কা আরো বেড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইতিমধ্যে পুলিশ বাহিনী সড়ক-মহাসড়কে ডাকাতিতে জড়িত ১৪৪৩ জন ডাকাতকে ধরতে অভিযান শুরু হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পরিবহন খাত এবং যাত্রীকল্যাণে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।


সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বরাবরই ঈদুল ফিতরের ছুটিতে রাজধানী ছেড়ে বিপুলসংখ্যক একসঙ্গে মানুষ গ্রামে যায়। তাতে সড়ক-মহাসড়কে যাতায়াতে দেখা দেয় তীব্র গণপরিবহনের সংকট। পাশাপাশি মহাসড়কগুলোতে দীর্ঘ যানজট লাগে। তখন দুর্ঘটনার সংখ্যাও বেড়ে যায়। আর এবারের ঈদের ছুটি অন্য বারের চেয়ে বেশি হওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে বেশি পরিমাণ মানুষ ঢাকা ছাড়বে। তবে এবারের  ঈদে ছুটি বেশি হওয়ায় সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিলে ঈদযাত্রা অনেকটাই ভোগান্তি মুক্ত করা সম্ভব হবে। স্বাভাবিকভাবেই ঈদের সময় সড়কে যানবাহনের বাড়তি চাপ বাড়ে। ওই সময় ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলো রাস্তায় নামে। আর সীমিত সামর্থ্যরে লাখ লাখ শ্রমিক শেষ মুহূর্তে বেতন-বোনাস পেয়ে ওসব গাড়িতে বাড়ি ফেরে। আর ফিটনেসবিহীন ওসব যানবাহন রাস্তায় দুর্ঘটনায় পড়ে। অথচ কলকারখানা ও পোশাক শ্রমিকদের বেতন বোনাস কয়েকটা দিন আগে পরিশোধ করে ধাপে ধাপে তাদের বাড়ি পাঠানো হলে মহাসড়কের পরিস্থিতি উন্নতি হতো। তবে কমবে দুর্ঘটনা, বাঁচতো প্রাণ ও ক্ষয়ক্ষতি।


সূত্র জানায়, ধারণা করা হচ্ছে ঢাকা ও আশপাশের জেলা থেকে এবারের ঈদে নিজ নিজ গন্তব্যে যাবে প্রায় দেড় কোটি মানুষ। তাছাড়া দেশের এক  জেলা থেকে অপর জেলায় আরো ৩ থেকে সাড়ে ৩ কোটি মানুষের যাতায়াত হবে। যার ৭৫ শতাংশ সড়কপথে, ১৭ শতাংশ নৌপথে এবং ৮ শতাংশ রেলপথে যাতায়াত হবে। এমন অবস্থায় পথে পথে যাত্রী হয়রানি, সড়কে ডাকাতি, ছিনতাই ও দুর্ঘটনা রোধে সম্মিলিত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।  কারণ বিগত ঈদুল ফিতরে ৩৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত এবং ১৩৯৮ জন আহত হয়েছিলো। আর বিগত ৯ বছরে শুধু ঈদুল ফিতরে ২৩৭৭টি দুর্ঘটনায় ২৭১৪ জন নিহত এবং ৭৪২০ জন আহত হয়েছে। 


সূত্র আরো জানায়, ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে যাত্রী, চালক, পরিবহনকর্মী সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখা জরুরি। ফিটনেসবিহীন লক্কড়-ঝক্কড় যানবাহন চলাচল বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। মোটসাইকেল যাত্রী ও আরোহীর হেলমেট ব্যবহার, গতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যানজট ও দুর্ঘটনা কমাতে জাতীয় মহাসড়ক থেকে প্যাডেল রিকশা, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, নসিমন-করিমন, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ঈদের কয়েকদিন আগ থেকেই বন্ধ রাখতে হবে। পাশাপাশি মহাসড়কের টোলপ্লাজায় অতিরিক্ত জনবল নিয়ে যানজট নিরসনের উদ্যোগ নিতে হবে। তাছাড়া সড়কে ডাকাতি ও ছিনতাই বন্ধে হাইওয়ে পুলিশ, জেলা ও মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশের প্যাট্রোলিং ডিউটি বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে সড়কে ডাকাতি ও ছিনতাই বন্ধে সক্রিয় থাকতে হবে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মীদের।


এদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব মো. সাইফুল আলম জানান, বিভিন্ন অব্যবস্থাপনায় যাত্রী দুর্ভোগ ও সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। আর এর দায় অন্যায়ভাবে মালিকদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। এবারের ঈদে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে মালিক সমিতি কঠোর হবে।


অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি অপারেশন মো. শফিকুল ইসলাম জানান, সড়কে ডাকাতিতে জড়িত ১৪৪৩ জন ডাকাতকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। ওই লক্ষ্যে ৩৯০০ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়কে ৩৪০টি অপারেশন টিম কাজ করছে। ঈদে যাত্রাপথে হাইওয়ে পুলিশের হটলাইন নম্বরে কল করার ১৫ মিনিটের মধ্যে সাড়া মিলবে।
 

প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ফিলিস্তিনের গাজায় নতুন করে অভিযান চালানোর বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। যুদ্ধবিরতির দাবিতে ইসরায়েলের রাস্তায় নেমেছেন ইসরায়েলি জনগণ। বিক্ষোভকে ঘিরে ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো বন্ধ করা হয়। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাঁরা। এসময় জেরুজালেম ও তেল আবিব থেকে পুলিশ কমপক্ষে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। খবর- দ্য গার্ডিয়ান 

 

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, সরকার রাজনৈতিক কারণে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। গাজায় এখনও হামাসের কাছে জিম্মি থাকা ৫৯ জনের পরিণতি নিয়ে ভাবছে না। জিম্মিদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত আছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। 

 

বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেছেন, হামাসের হাত থেকে সমস্ত বন্দিকে উদ্ধার না করে নতুন করে গাজায় আক্রমণ চালিয়ে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ভুল করেছেন। দ্রুত এই অভিযান বন্ধের দাবি তুলেছেন বিক্ষোভকারীরা। একইসঙ্গে তারা নেতানিয়াহুর একাধিক সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন। এরই জেরে রনেনকে সরিয়ে দেওয়া হলো বলে মনে করা হচ্ছে। নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে রনেন একটি তদন্তও শুরু করেছিলেন। রোনেন বার’কে বরখাস্তের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদনের জন্য বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলি মন্ত্রিসভার বৈঠকে ওঠে। ওই বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে বরখাস্তের পক্ষে মত দেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা।  

 

জানা গেছে, ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের প্রধান রোনেন বার’কে বরখাস্ত করার প্রচেষ্টাকে কেন্দ্র করে এ বিক্ষোভ শুরু হয় মঙ্গলবার। তবে গাজায় প্রাণঘাতী বিমান হামলা চালিয়ে দুই মাসের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পর নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ আরও জোরালো হতে থাকে। হাজার হাজার মানুষ ইসরায়েলের রাস্তায় নেমেছেন। সরকারের বিরুদ্ধে তারা তীব্র বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। বুধবার হাজার হাজার মানুষ জেরুজালেমের মধ্যাঞ্চলে নেতানিয়াহুর সরকারি বাসভবনের কাছের সড়কগুলোতে অবস্থান নেন। তাঁদের অনেকের হাতে ছিল পতাকা এবং গাজায় এখনও জিম্মি থাকা মানুষদের সমর্থনে লেখা স্লোগানসংবলিত প্ল্যাকার্ড। ‘এখনই জিম্মি মুক্তির চুক্তি করুন’ এমন স্লোগান দিতে থাকেন লোকজন। 

 

বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, এখনও গাজায় অন্তত ৫৯ ইসরায়েলি জন বন্দি আছেন, যাদের ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর জিম্মি করে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস। নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতির চুক্তি ভঙ্গ করে নতুন করে গাজায় অভিযান চালানোয় জীবিত জিম্মিদের মেরে ফেলা হবে বলে মনে করছেন বিক্ষোভকারীরা। যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর অধিকাংশ বন্দিকেই হস্তান্তর করেছে হামাস। সকলে ফিরে আসার আগেই নেতানিয়াহু নতুন করে আক্রমণ শুরু করায় বিরক্ত দেশের একটি বড় অংশের মানুষ। সম্প্রতি একটি জনমত সমীক্ষাও করা হয়েছিল। সেখানে দেখা গেছে, দেশের অধিকাংশ মানুষ চান, যুদ্ধ বন্ধ করে জিম্মিদের প্রত্যার্পণ নিয়ে আরও বেশি আলোচনা চালাক সরকার।

 

বিক্ষোভকারীদের দাবি, নেতানিয়াহু সরকার দেশের গণতন্ত্রকে আঘাত করেছে। আয়োজকেরা বলছেন, বিক্ষোভ কর্মসূচি যেভাবে গতি পাচ্ছে, তাতে আগামী দিনগুলোতে আরও বেশি বিক্ষোভ হতে পারে। যুদ্ধবিরতি অব্যাহত রাখতে বিদেশি সরকারগুলোর আহ্বান উপেক্ষা করে সম্প্রতি আকাশ ও স্থলপথে হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল। এর মধ্য দিয়ে গত জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি ভেস্তে গেছে।
 

ধর্মীয় উগ্রবাদ বা চরমপন্থা কোনো ধর্মই সমর্থন করে না; বরং প্রতিটি ধর্ম শান্তি, সহনশীলতা ও মানবিক মূল্যবোধকে ধারণ করে। তবুও, বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক স্বার্থে ধর্মের অপব্যবহার করে উগ্রবাদকে উসকে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র, যেখানে সব ধর্মের সহাবস্থান ও স্বাধীনভাবে চর্চার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ উগ্রবাদের ছায়ায় আক্রান্ত হয়েছে, যা শুধু রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য নয়, বরং গণতন্ত্র ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

গত ১৯ মার্চ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক বক্তব্যে বলেন, "চরমপন্থা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে গণতন্ত্রের কবর রচিত হবে।" এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে গণতান্ত্রিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়বে। এটি কেবল একটি রাজনৈতিক অবস্থান নয়; বরং যে কোনো স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের টেকসই ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতা। ইতিহাসে দেখা গেছে, যখন কোনো দেশে উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, তখন সেই দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বাধাগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে উগ্রবাদ শুধু একটি নিরাপত্তা ইস্যু নয়, বরং এটি রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে দেখা গেছে, উগ্রবাদ দমন তখনই কার্যকর হয়েছে, যখন রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে এই সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। কিন্তু যখন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কিছু দল বা গোষ্ঠী উগ্রবাদকে প্রশ্রয় দেয় বা ব্যবহার করে, তখনই সংকট আরও গভীর হয়।

 

বাংলাদেশে অতীতে একাধিকবার ধর্মীয় উগ্রবাদের উত্থান দেখা গেছে। ২০০৫ সালে জামাতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা চালায়, যা দেশের নিরাপত্তার জন্য চরম হুমকি সৃষ্টি করেছিল। এরপর ২০১৬ সালে হলি আর্টিজান হামলা বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দেয় যে, উগ্রবাদ কীভাবে একটি রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিকে নষ্ট করতে পারে। এসব ঘটনার পর বাংলাদেশ সরকার উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয় এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে উগ্রপন্থী সংগঠনগুলোর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে। কিন্তু একবার দমন করা মানেই এর সম্পূর্ণ অবসান হয়েছে—এমনটি ভাবা ঠিক হবে না।

 

তারেক রহমানের বক্তব্যের মূল প্রতিপাদ্য হলো, উগ্রবাদ মোকাবিলায় ব্যর্থতা গণতন্ত্রের অবক্ষয় ঘটাবে। কারণ, উগ্রবাদ শুধু সহিংসতা সৃষ্টি করে না; এটি মুক্তচিন্তা, মানবাধিকার এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে দুর্বল করে ফেলে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখা গেছে, উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিলে কেবল নিরাপত্তার সংকটই তৈরি হয় না; বরং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক সহনশীলতা এবং নাগরিক অধিকারের ওপরও ব্যাপক হুমকি তৈরি হয়।

 

এই প্রেক্ষাপটে, তারেক রহমানের বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা এবং ভারতের ন্যারেটিভ প্রতিস্থাপনের প্রসঙ্গ টেনে সমালোচনা করা এক ধরনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণা। কারণ, উগ্রবাদ ও চরমপন্থা মোকাবিলা করা কোনো নির্দিষ্ট দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নয়; বরং এটি প্রতিটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য। ভারতের মতো দেশেও উগ্রবাদী চরমপন্থার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যেমন উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ বা মাওবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযানের মাধ্যমে। ঠিক তেমনি, বাংলাদেশকেও তার নিজস্ব বাস্তবতায় উগ্রবাদ দমনে কার্যকর ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

সাম্প্রতিক সময়ে, কিছু রাজনৈতিক শক্তি উগ্রবাদ দমনের মতো সংবেদনশীল বিষয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইছে। এটি গণতন্ত্র ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিভাজনের ঊর্ধ্বে উঠে সকল পক্ষকে উগ্রবাদবিরোধী অবস্থান নিতে হবে। শুধু সরকার বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একার দায়িত্ব নয়; বরং রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম ও সাধারণ নাগরিকদেরও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

 

উগ্রবাদ নির্মূলে কেবল সামরিক বা আইনি ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়; এর জন্য সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, ধর্মের প্রকৃত বার্তা প্রচার, শিক্ষার প্রসার এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নও গুরুত্বপূর্ণ। তরুণ সমাজকে উগ্রবাদের ফাঁদ থেকে রক্ষা করতে হলে তাদের মাঝে যুক্তিবাদী ও সহিষ্ণুতার শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে হবে।

 

তারেক রহমানের বক্তব্য উগ্রবাদ দমনের জন্য একটি সময়োপযোগী বার্তা বহন করে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা রক্ষার স্বার্থে উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া জরুরি। একে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা বা রাজনৈতিক স্বার্থে অপপ্রচার চালানো কেবল বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে, যা রাষ্ট্রের সার্বিক অগ্রগতির জন্য ক্ষতিকর। বাংলাদেশকে একটি নিরাপদ, সহনশীল ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে নিতে হলে উগ্রবাদের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষের সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। উগ্রবাদ দমনে ব্যর্থতা শুধুমাত্র নিরাপত্তার জন্য হুমকি নয়, বরং এটি গণতন্ত্র ধ্বংসের অন্যতম কারণ হতে পারে। তারেক রহমানের বক্তব্য এ কারণেই প্রাসঙ্গিক এবং যৌক্তিক। উগ্রবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ঐক্য ও জাতীয় স্বার্থে একযোগে কাজ করাই হবে সবচেয়ে কার্যকর সমাধান।
 

আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে দেশে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স প্রবাহে জোয়ার লক্ষ করা যাচ্ছে। চলতি মাসের প্রথম ২২ দিনেই এসেছে ২৪৩ কোটি ৭৫ লাখ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৯ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসেবে)। এই গতি অব্যাহত থাকলে মার্চ মাসে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্চের প্রথম ২২ দিনে গড়ে প্রতিদিন দেশে এসেছে ১১ কোটি ৮ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। এ পরিসংখ্যান ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, মাসের শেষে এই প্রবাহ তিন বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করতে পারে, যা নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করবে।

 

অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আসন্ন ঈদ উপলক্ষে প্রবাসীদের স্বজনদের কাছে অধিক পরিমাণ অর্থ পাঠানোর প্রবণতা, হুন্ডির ব্যবহার কমে আসা, ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে লেনদেনে উৎসাহ প্রদান এবং বিনিময় হার প্রতিযোগিতামূলক হওয়া—এসব কারণেই রেমিট্যান্সের এই ইতিবাচক প্রবাহ দেখা যাচ্ছে।

 

মার্চের প্রথম ২২ দিনে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫২ কোটি ৭৩ লাখ ডলার, বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৯ কোটি ৯২ লাখ ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৭০ কোটি ৬৩ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৪৫ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার।

 

২০২৪ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে যথাক্রমে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ ও ২৫২ কোটি ৭৬ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। অন্যদিকে, ২০২৩ সালে দেশে মোট ২ হাজার ৬৮৮ কোটি ৯১ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এর মধ্যে ডিসেম্বরে সর্বোচ্চ ২৬৩ কোটি ৮৭ লাখ ডলার এসেছে, যা এখন পর্যন্ত একক মাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড।

 

বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান ধারা বজায় থাকলে মার্চ মাসে নতুন রেকর্ড গড়তে পারে প্রবাসী আয়। অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও সরকারের নীতিগত সহায়তা থাকলে ভবিষ্যতেও রেমিট্যান্স প্রবাহ শক্তিশালী থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

আলোচিত খবর

আসন্ন ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের সড়কে ভোগান্তি ও নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে। কারণ দেশের নাজুক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে অরক্ষিত মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ডাকাতি, ছিনতাই, দুর্ঘটনা ও যানজটের শঙ্কা রয়েছে। বেশির ভাগ মানুষ সাধারণত সড়ক পথেই ঈদের ছুটিতে শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরে যায়। কিন্তু দেশের আইন-শৃঙ্খলার নাজুক পরিস্থিতিতে এমনিতেই দেশের বিভিন্ন সড়কে ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। আর এবারের ঈদ যাত্রায় সড়ক-মহাসড়কে যানজট ও দুর্ঘটনার পাশাপাশি ডাকাতির আশঙ্কা আরো বেড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইতিমধ্যে পুলিশ বাহিনী সড়ক-মহাসড়কে ডাকাতিতে জড়িত ১৪৪৩ জন ডাকাতকে ধরতে অভিযান শুরু হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পরিবহন খাত এবং যাত্রীকল্যাণে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।


সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বরাবরই ঈদুল ফিতরের ছুটিতে রাজধানী ছেড়ে বিপুলসংখ্যক একসঙ্গে মানুষ গ্রামে যায়। তাতে সড়ক-মহাসড়কে যাতায়াতে দেখা দেয় তীব্র গণপরিবহনের সংকট। পাশাপাশি মহাসড়কগুলোতে দীর্ঘ যানজট লাগে। তখন দুর্ঘটনার সংখ্যাও বেড়ে যায়। আর এবারের ঈদের ছুটি অন্য বারের চেয়ে বেশি হওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে বেশি পরিমাণ মানুষ ঢাকা ছাড়বে। তবে এবারের  ঈদে ছুটি বেশি হওয়ায় সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিলে ঈদযাত্রা অনেকটাই ভোগান্তি মুক্ত করা সম্ভব হবে। স্বাভাবিকভাবেই ঈদের সময় সড়কে যানবাহনের বাড়তি চাপ বাড়ে। ওই সময় ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলো রাস্তায় নামে। আর সীমিত সামর্থ্যরে লাখ লাখ শ্রমিক শেষ মুহূর্তে বেতন-বোনাস পেয়ে ওসব গাড়িতে বাড়ি ফেরে। আর ফিটনেসবিহীন ওসব যানবাহন রাস্তায় দুর্ঘটনায় পড়ে। অথচ কলকারখানা ও পোশাক শ্রমিকদের বেতন বোনাস কয়েকটা দিন আগে পরিশোধ করে ধাপে ধাপে তাদের বাড়ি পাঠানো হলে মহাসড়কের পরিস্থিতি উন্নতি হতো। তবে কমবে দুর্ঘটনা, বাঁচতো প্রাণ ও ক্ষয়ক্ষতি।


সূত্র জানায়, ধারণা করা হচ্ছে ঢাকা ও আশপাশের জেলা থেকে এবারের ঈদে নিজ নিজ গন্তব্যে যাবে প্রায় দেড় কোটি মানুষ। তাছাড়া দেশের এক  জেলা থেকে অপর জেলায় আরো ৩ থেকে সাড়ে ৩ কোটি মানুষের যাতায়াত হবে। যার ৭৫ শতাংশ সড়কপথে, ১৭ শতাংশ নৌপথে এবং ৮ শতাংশ রেলপথে যাতায়াত হবে। এমন অবস্থায় পথে পথে যাত্রী হয়রানি, সড়কে ডাকাতি, ছিনতাই ও দুর্ঘটনা রোধে সম্মিলিত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।  কারণ বিগত ঈদুল ফিতরে ৩৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত এবং ১৩৯৮ জন আহত হয়েছিলো। আর বিগত ৯ বছরে শুধু ঈদুল ফিতরে ২৩৭৭টি দুর্ঘটনায় ২৭১৪ জন নিহত এবং ৭৪২০ জন আহত হয়েছে। 


সূত্র আরো জানায়, ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে যাত্রী, চালক, পরিবহনকর্মী সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখা জরুরি। ফিটনেসবিহীন লক্কড়-ঝক্কড় যানবাহন চলাচল বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। মোটসাইকেল যাত্রী ও আরোহীর হেলমেট ব্যবহার, গতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যানজট ও দুর্ঘটনা কমাতে জাতীয় মহাসড়ক থেকে প্যাডেল রিকশা, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, নসিমন-করিমন, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ঈদের কয়েকদিন আগ থেকেই বন্ধ রাখতে হবে। পাশাপাশি মহাসড়কের টোলপ্লাজায় অতিরিক্ত জনবল নিয়ে যানজট নিরসনের উদ্যোগ নিতে হবে। তাছাড়া সড়কে ডাকাতি ও ছিনতাই বন্ধে হাইওয়ে পুলিশ, জেলা ও মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশের প্যাট্রোলিং ডিউটি বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে সড়কে ডাকাতি ও ছিনতাই বন্ধে সক্রিয় থাকতে হবে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মীদের।


এদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব মো. সাইফুল আলম জানান, বিভিন্ন অব্যবস্থাপনায় যাত্রী দুর্ভোগ ও সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। আর এর দায় অন্যায়ভাবে মালিকদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। এবারের ঈদে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে মালিক সমিতি কঠোর হবে।


অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি অপারেশন মো. শফিকুল ইসলাম জানান, সড়কে ডাকাতিতে জড়িত ১৪৪৩ জন ডাকাতকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। ওই লক্ষ্যে ৩৯০০ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়কে ৩৪০টি অপারেশন টিম কাজ করছে। ঈদে যাত্রাপথে হাইওয়ে পুলিশের হটলাইন নম্বরে কল করার ১৫ মিনিটের মধ্যে সাড়া মিলবে।
 

প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ফিলিস্তিনের গাজায় নতুন করে অভিযান চালানোর বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। যুদ্ধবিরতির দাবিতে ইসরায়েলের রাস্তায় নেমেছেন ইসরায়েলি জনগণ। বিক্ষোভকে ঘিরে ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো বন্ধ করা হয়। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাঁরা। এসময় জেরুজালেম ও তেল আবিব থেকে পুলিশ কমপক্ষে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। খবর- দ্য গার্ডিয়ান 

 

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, সরকার রাজনৈতিক কারণে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। গাজায় এখনও হামাসের কাছে জিম্মি থাকা ৫৯ জনের পরিণতি নিয়ে ভাবছে না। জিম্মিদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত আছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। 

 

বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেছেন, হামাসের হাত থেকে সমস্ত বন্দিকে উদ্ধার না করে নতুন করে গাজায় আক্রমণ চালিয়ে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ভুল করেছেন। দ্রুত এই অভিযান বন্ধের দাবি তুলেছেন বিক্ষোভকারীরা। একইসঙ্গে তারা নেতানিয়াহুর একাধিক সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন। এরই জেরে রনেনকে সরিয়ে দেওয়া হলো বলে মনে করা হচ্ছে। নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে রনেন একটি তদন্তও শুরু করেছিলেন। রোনেন বার’কে বরখাস্তের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদনের জন্য বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলি মন্ত্রিসভার বৈঠকে ওঠে। ওই বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে বরখাস্তের পক্ষে মত দেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা।  

 

জানা গেছে, ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের প্রধান রোনেন বার’কে বরখাস্ত করার প্রচেষ্টাকে কেন্দ্র করে এ বিক্ষোভ শুরু হয় মঙ্গলবার। তবে গাজায় প্রাণঘাতী বিমান হামলা চালিয়ে দুই মাসের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পর নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ আরও জোরালো হতে থাকে। হাজার হাজার মানুষ ইসরায়েলের রাস্তায় নেমেছেন। সরকারের বিরুদ্ধে তারা তীব্র বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। বুধবার হাজার হাজার মানুষ জেরুজালেমের মধ্যাঞ্চলে নেতানিয়াহুর সরকারি বাসভবনের কাছের সড়কগুলোতে অবস্থান নেন। তাঁদের অনেকের হাতে ছিল পতাকা এবং গাজায় এখনও জিম্মি থাকা মানুষদের সমর্থনে লেখা স্লোগানসংবলিত প্ল্যাকার্ড। ‘এখনই জিম্মি মুক্তির চুক্তি করুন’ এমন স্লোগান দিতে থাকেন লোকজন। 

 

বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, এখনও গাজায় অন্তত ৫৯ ইসরায়েলি জন বন্দি আছেন, যাদের ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর জিম্মি করে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস। নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতির চুক্তি ভঙ্গ করে নতুন করে গাজায় অভিযান চালানোয় জীবিত জিম্মিদের মেরে ফেলা হবে বলে মনে করছেন বিক্ষোভকারীরা। যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর অধিকাংশ বন্দিকেই হস্তান্তর করেছে হামাস। সকলে ফিরে আসার আগেই নেতানিয়াহু নতুন করে আক্রমণ শুরু করায় বিরক্ত দেশের একটি বড় অংশের মানুষ। সম্প্রতি একটি জনমত সমীক্ষাও করা হয়েছিল। সেখানে দেখা গেছে, দেশের অধিকাংশ মানুষ চান, যুদ্ধ বন্ধ করে জিম্মিদের প্রত্যার্পণ নিয়ে আরও বেশি আলোচনা চালাক সরকার।

 

বিক্ষোভকারীদের দাবি, নেতানিয়াহু সরকার দেশের গণতন্ত্রকে আঘাত করেছে। আয়োজকেরা বলছেন, বিক্ষোভ কর্মসূচি যেভাবে গতি পাচ্ছে, তাতে আগামী দিনগুলোতে আরও বেশি বিক্ষোভ হতে পারে। যুদ্ধবিরতি অব্যাহত রাখতে বিদেশি সরকারগুলোর আহ্বান উপেক্ষা করে সম্প্রতি আকাশ ও স্থলপথে হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল। এর মধ্য দিয়ে গত জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি ভেস্তে গেছে।
 

গাজায় যুদ্ধ বিরতির কথা থাকলেও সে কথা রাখেনি ইহুদীবাদী ইসরায়েল। তারা বিভিন্ন ভাবে আবারও বর্বর হামলা চলমান রেখেছে। এতে বহু মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন গাজায়। জানা গেছে, সম্প্রতি গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর বর্বর হামলায় ৪৮ ঘণ্টায় কমপক্ষে ৯৭০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শত শত মানুষ। 


বুধবার হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে বার্তা সংস্থা এএফপি হতাহতের এ তথ্য জানিয়েছে।


প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় ইসরাইলের নির্বিচার হামলায় গত ৪৮ ঘণ্টায় ৯৭০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি যুদ্ধে প্রাণহানির সংখ্যা ৪৮ হাজার ৫৭৭ জনে পৌঁছায়। এরপর বুধবার দুপুরের দিকে এই সংখ্যা বেড়ে ৪৯ হাজার ৫৪৭ জনে দাঁড়িয়েছে।


যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে সোমবার রাত থেকে গাজা উপত্যকায় নির্বিচার হামলা শুরু করেছে ইসরাইলি বাহিনী। গত জানুয়ারিতে শুরু হওয়া এই ভঙ্গুর চুক্তির পর এটাই সবচেয়ে প্রাণঘাতী ইসরাইলি হামলা বলে জানিয়েছে হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এদিকে, গাজায় নিযুক্ত জাতিসংঘের একটি ভবনে বুধবার ইসরাইলি সামরিক বাহিনী হামলা চালিয়েছে। এই হামলায় সেখানে সংস্থাটির অন্তত একজন বিদেশি কর্মী নিহত ও পাঁচজন গুরুতর আহত হয়েছেন।


এর আগে কয়েক মাসের আলোচনার পর মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এ চুক্তির আওতায় ৩৮ জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস। বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগার থেকে প্রায় ২ হাজার বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয়। প্রাথমিক এ যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষে দ্বিতীয় ধাপে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে কাতারের দোহায় বিবদমান পক্ষের সঙ্গে কাতার ও মিসরের আলোচনা চলছিল। সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সোমবার রাতের হামলার পর যুদ্ধবিরতির আলোচনা বন্ধ হয়ে গেছে।


দেড় মাস ধরে আলোচনা চললেও যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ অর্থাৎ স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও গাজা থেকে সব সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে ইসরায়েল রাজি হচ্ছিল না। ইসরায়েল ও তাদের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছিল, প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়িয়ে গাজায় থাকা অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হোক।


কিন্তু হামাস বলে আসছিল, মূল চুক্তি অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপের স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর করতে হবে। এর আওতায় ইসরায়েলি সব সেনাকে গাজা থেকে প্রত্যাহার করতে হবে। এর পরই বাকি জিম্মিদের ছেড়ে দেবে তারা।


হামাস এখনো মূল যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলতে চায় বলে গতকাল জানিয়েছেন সংগঠনটির মুখপাত্র আবদেল লতিফ। তিনি রয়টার্সকে বলেন, মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে এখনো তাঁদের যোগাযোগ রয়েছে। এখনো তাঁরা মূল চুক্তি পুরোপুরি কার্যকরের পক্ষে।


এদিকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে পবিত্র রমজান মাসে এমন নৃশংস হামলার ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে।
 

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোকে স্বাগত জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।

 

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বুধবার (১৯ মার্চ) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নকারীর প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস।

 

ওই প্রশ্নকারী বলেন, মার্কিন গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ড বাংলাদেশে ইসলামি চরমপন্থার ক্রমবর্ধমান হুমকি ও একটি ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। তবে তিনি (তুলসী) মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে সরাসরি দায়ী করেননি- ইউনূস সরকারও এসব উদ্বেগকে তীব্রভাবে অস্বীকার করেছে, এগুলোকে অসত্য বলে অভিহিত করেছে।

 

এছাড়া গতকালও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খিলাফতপন্থী বিশাল একটি র‍্যালি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রশ্নকারী। ওই সাংবাদিক আরও বলেন, মার্কিন সরকারের চলমান উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে, যুক্তরাষ্ট্র কী ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার মতো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বিবেচনা করছে?

 

জবাবে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, আমরা যেকোনো দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের প্রতি সহিংসতা বা অসহিষ্ণুতার যেকোনো ঘটনার নিন্দা জানাই এবং বাংলাদেশের সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপগুলোকে স্বাগত জানাই। আমরা এটাই দেখছি। এটাই আমরা প্রত্যাশা করি। এবং এটাই অব্যাহত থাকবে।
 

Site Counter

Online

1

Total

11k

মাছুদুর রহমান মিলন, বিশেষ প্রতিনিধি:
সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের পক্ষ থেকে টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে সম্মানিত শিক্ষক, এলাকাবাসী ও গণমাধ্যমকর্মীদের সম্মানে এক মতবিনিময় সভা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

 

২১ মার্চ থেকে ২৩ মার্চ তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন প্রকৌশলী বাদলুর রহমান খান বাদল। প্রকৌশলী বাদলুর রহমান খান (বাদল) মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর সভাপতি এবং জাতীয়তাবাদী দল স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন কমিটি, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের যুগ্ম আহ্বায়ক। এছাড়া তিনি মালয়েশিয়ার আই এইচ এম কলেজের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

 

অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মীদের স্বাধীনতা ও শিক্ষার বিভিন্ন দিক নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতামত ব্যক্ত করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রকৌশলী বাদলুর রহমান খান (বাদল) দেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে মূল্যবান দিকনির্দেশনা দেন এবং ৩১ দফা সম্পর্কে দেশের সবাইকে জানানোর জন্য আহব্বান জানান। 

 

গণমাধ্যমকর্মীদের সঠিক তথ্য তুলে ধরার আহ্বান জানান।দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহব্বান জানান।এরপর দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। ইফতার মাহফিলের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

পার্ক ডি প্রিন্সেসে স্বাগতিক পিএসজি এবং সফরকারী লিভারপুলের মধ্যে তুমুল লড়াই। কেউ কাউকে এক ইঞ্চিও ছাড় দিতে নারাজ। 

 

একদিকে মোহাম্মদ সালাহ, দিয়েগো দায়ত, লুইজ দিয়াজ কিংবা ম্যাক অ্যালিস্টাররা, অন্যদিকে ওসমান ডেম্বেলে, ব্র্যাডলি বারকোলা থেকে শুরু করে আশরাফ হাকিমি। লড়াই তুঙ্গে উঠলেও কেউ কারো জালে বল জড়াতে পারেনি। গোল না পাওয়ায় অবশেষে ৮৬ মিনিটে মোহাম্মদ সালাহকে তুলে নেন লিভারপুল কোচ আরনে স্লট। মাঠে নামান তরুণ ফুটবলার হার্ভি এলিয়টকে। 

 

এই একটি পরিবর্তনই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিয়েছে এবং জয়-পরাজয় নির্ধারণ করে দিয়েছে। মাঠে নামার পর এক মিনিটও পার হয়নি, মাত্র ৪৭ সেকেন্ডের ব্যবধানে স্বাগতিক পিএসজির জালে বল জড়িয়ে দিলেন হার্ভি এলিয়ট। ৮৭তম মিনিটে আরেক পরিবর্তিত খেলোয়াড় ডারউইন নুনেজের পাস থেকে বল পেয়ে পিএসজির জালে জড়িয়ে দেন এলিয়ট। তার আগে পুরো ম্যাচে অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়ে লিভারপুলকে ধরে রেখেছিলেন গোলরক্ষক অ্যালিসন। ঘরের মাঠে শুরু থেকেই লিভারপুলের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে খেলতে থাকে পিএসজি। প্রায় ৭১ ভাগ বল ছিল পিএসজিরই দখলে। 

 

লিভারপুল শুধু তাদের আক্রমণ ঠেকাতেই ব্যস্ত ছিল। পুরো ম্যাচে পিএসজির গোল লক্ষ্যে একবারই শট নিতে পেরেছিলো ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবটি। যেটা থেকে গোল পেয়েছিলো তারা। আর ওটা ছিল লিভারপুলের মাত্র দ্বিতীয় প্রচেষ্টা। অথচ, পিএসজি পুরো ম্যাচে ২৮বার গোলের চেষ্টা চালিয়েছে লিভারপুলের পোস্ট লক্ষ্যে। লিভারপুল কোচ আরনে স্লট বলেন, ‘আজকের এই অ্যাওয়ে ম্যাচ থেকে জয় নিয়ে ফিরছি। অথচ, এমন ম্যাচে আমরা জয় প্রত্যাশাই করিনি।’ পিএসজির সর্বশেষ রেকর্ড ঈর্ষণীয়। 

 

সর্বশেষ ২০ ম্যাচের মধ্যে ১৮টিতেই জয় পেয়েছে তারা এবং ২টি হয়েছে ড্র। সেই দলটিই কি না একের পর এক সুযোগ মিস করে ২১তম ম্যাচে এসে পরাজিত হলো। আগামী মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হবে ফিরতি পর্বের ম্যাচ।
 

উগ্রবাদ দমন ও গণতন্ত্রের রক্ষা: তারেক রহমানের বক্তব্যের বাস্তবতা; গাজী সাইফুল

ধর্মীয় উগ্রবাদ বা চরমপন্থা কোনো ধর্মই সমর্থন করে না; বরং প্রতিটি ধর্ম শান্তি, সহনশীলতা ও মানবিক মূল্যবোধকে ধারণ করে। তবুও, বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক স্বার্থে ধর্মের অপব্যবহার করে উগ্রবাদকে উসকে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র, যেখানে সব ধর্মের সহাবস্থান ও স্বাধীনভাবে চর্চার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ উগ্রবাদের ছায়ায় আক্রান্ত হয়েছে, যা শুধু রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য নয়, বরং গণতন্ত্র ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

গত ১৯ মার্চ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক বক্তব্যে বলেন, "চরমপন্থা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে গণতন্ত্রের কবর রচিত হবে।" এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে গণতান্ত্রিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়বে। এটি কেবল একটি রাজনৈতিক অবস্থান নয়; বরং যে কোনো স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের টেকসই ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতা। ইতিহাসে দেখা গেছে, যখন কোনো দেশে উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, তখন সেই দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বাধাগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে উগ্রবাদ শুধু একটি নিরাপত্তা ইস্যু নয়, বরং এটি রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে দেখা গেছে, উগ্রবাদ দমন তখনই কার্যকর হয়েছে, যখন রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে এই সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। কিন্তু যখন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কিছু দল বা গোষ্ঠী উগ্রবাদকে প্রশ্রয় দেয় বা ব্যবহার করে, তখনই সংকট আরও গভীর হয়।

 

বাংলাদেশে অতীতে একাধিকবার ধর্মীয় উগ্রবাদের উত্থান দেখা গেছে। ২০০৫ সালে জামাতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা চালায়, যা দেশের নিরাপত্তার জন্য চরম হুমকি সৃষ্টি করেছিল। এরপর ২০১৬ সালে হলি আর্টিজান হামলা বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দেয় যে, উগ্রবাদ কীভাবে একটি রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিকে নষ্ট করতে পারে। এসব ঘটনার পর বাংলাদেশ সরকার উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয় এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে উগ্রপন্থী সংগঠনগুলোর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে। কিন্তু একবার দমন করা মানেই এর সম্পূর্ণ অবসান হয়েছে—এমনটি ভাবা ঠিক হবে না।

 

তারেক রহমানের বক্তব্যের মূল প্রতিপাদ্য হলো, উগ্রবাদ মোকাবিলায় ব্যর্থতা গণতন্ত্রের অবক্ষয় ঘটাবে। কারণ, উগ্রবাদ শুধু সহিংসতা সৃষ্টি করে না; এটি মুক্তচিন্তা, মানবাধিকার এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে দুর্বল করে ফেলে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখা গেছে, উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিলে কেবল নিরাপত্তার সংকটই তৈরি হয় না; বরং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক সহনশীলতা এবং নাগরিক অধিকারের ওপরও ব্যাপক হুমকি তৈরি হয়।

 

এই প্রেক্ষাপটে, তারেক রহমানের বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা এবং ভারতের ন্যারেটিভ প্রতিস্থাপনের প্রসঙ্গ টেনে সমালোচনা করা এক ধরনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণা। কারণ, উগ্রবাদ ও চরমপন্থা মোকাবিলা করা কোনো নির্দিষ্ট দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নয়; বরং এটি প্রতিটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য। ভারতের মতো দেশেও উগ্রবাদী চরমপন্থার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যেমন উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ বা মাওবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযানের মাধ্যমে। ঠিক তেমনি, বাংলাদেশকেও তার নিজস্ব বাস্তবতায় উগ্রবাদ দমনে কার্যকর ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

সাম্প্রতিক সময়ে, কিছু রাজনৈতিক শক্তি উগ্রবাদ দমনের মতো সংবেদনশীল বিষয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইছে। এটি গণতন্ত্র ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিভাজনের ঊর্ধ্বে উঠে সকল পক্ষকে উগ্রবাদবিরোধী অবস্থান নিতে হবে। শুধু সরকার বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একার দায়িত্ব নয়; বরং রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম ও সাধারণ নাগরিকদেরও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

 

উগ্রবাদ নির্মূলে কেবল সামরিক বা আইনি ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়; এর জন্য সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, ধর্মের প্রকৃত বার্তা প্রচার, শিক্ষার প্রসার এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নও গুরুত্বপূর্ণ। তরুণ সমাজকে উগ্রবাদের ফাঁদ থেকে রক্ষা করতে হলে তাদের মাঝে যুক্তিবাদী ও সহিষ্ণুতার শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে হবে।

 

তারেক রহমানের বক্তব্য উগ্রবাদ দমনের জন্য একটি সময়োপযোগী বার্তা বহন করে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা রক্ষার স্বার্থে উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া জরুরি। একে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা বা রাজনৈতিক স্বার্থে অপপ্রচার চালানো কেবল বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে, যা রাষ্ট্রের সার্বিক অগ্রগতির জন্য ক্ষতিকর। বাংলাদেশকে একটি নিরাপদ, সহনশীল ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে নিতে হলে উগ্রবাদের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষের সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। উগ্রবাদ দমনে ব্যর্থতা শুধুমাত্র নিরাপত্তার জন্য হুমকি নয়, বরং এটি গণতন্ত্র ধ্বংসের অন্যতম কারণ হতে পারে। তারেক রহমানের বক্তব্য এ কারণেই প্রাসঙ্গিক এবং যৌক্তিক। উগ্রবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ঐক্য ও জাতীয় স্বার্থে একযোগে কাজ করাই হবে সবচেয়ে কার্যকর সমাধান।
 

হাসিনা-রেহানা পরিবারের ১২৪টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করার আদেশ

বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও বোন শেখ রেহানার ১২৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছে আদালত।

 

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন আজ (মঙ্গলবার) এ আদেশ দেন।

 

আবেদনে বলা হয়েছে, অভিযোগ সংশ্লিষ্টরা তাদের অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর বা স্থানান্তর করার চেষ্টা করছেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে, অ্যাকাউন্টগুলো অবরুদ্ধ করা জরুরি বলে মনে করছে দুদক।

 

শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের এই ১২৪টি অ্যাকাউন্টে থাকা ৬৩৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা অবরুদ্ধ করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিষয়ক সভায় বাংলাদেশ ব্যাংক এ তথ্য দিয়েছে।

 

এর পরে প্রেস বিফ্রিংয়ে সাংবাদিকদের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং ও কেম্যান দ্বীপপুঞ্জে সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রাশিয়ান ‘স্লাশ ফান্ড’ এর অস্তিত্বও চিহ্নিত হয়েছে।

 

একই আদালত শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, শেখ রেহানা, শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক (ববি), শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিকের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।

 

আবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব আহমেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ, টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক ও ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ৫৯ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগটি অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমন রহিত করা একান্ত প্রয়োজন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।#

‘বৈষম্যবিরোধী’ বা ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ের এখন আর অস্তিত্ব নেই

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আত্মপ্রকাশের পর ‘বৈষম্যবিরোধী’ বা ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ের এখন আর কোনো অস্তিত্ব নেই বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।


শুক্রবার (৭ মার্চ) বিকালে রাজধানীর বাংলামোটরের রূপায়ণ টাওয়ারে দলটির অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।


সমন্বয়ক পরিচয়ে বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজির নানা অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এখন আর আগের জায়গায় নেই। সেখান থেকে একটি ছাত্র সংগঠন তৈরি হয়েছে।’


তার ভাষ্যে, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে একটি রাজনৈতিক দল তৈরি হয়েছে বলে ‘বৈষম্যবিরোধী’ বা ‘সমন্বয়ক’ বলে যে পরিচয়টা, সেটা এখন আর এক্সিস্ট করে না সেই অর্থে।”


“ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অনুরোধ থাকবে, যদি কেউ ‘বৈষম্যবিরোধী’ বা ‘সমন্বয়ক’ পরিচয় ব্যবহার করে অপকর্ম করে, তাহলে তারা তাদের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।”


এনসিপির কার্যক্রম নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন রাজনৈতিক নিবন্ধনের শর্তাবলী নিয়ে মনযোগী হচ্ছি। তৃণমূলে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেছি। রোজার পর পুরোদমে শুরু করব। আমরা নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করছি। জোট গঠনের বা নির্বাচনের প্রার্থীর বিষয়ে আমাদের অবস্থান ব্যক্ত করতে আরও সময় লাগবে।’


এ সময় এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, প্রধান সমন্বয়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারীসহ দলটির অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
 

নারীর অধিকার, ক্ষমতায়ন, মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক

-মোঃ মাহবুব আলম চৌধুরী জীবন, লেখক, সাংবাদিক, সংগঠক

আজ (৮ মার্চ) আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন নারী ও কন্যার উন্নয়ন’ প্রতিপাদ্য নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদযাপিত হবে দিবসটি। নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নারীদের প্রতি ন্যায় ও সমতার ভিত্তিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তাকে আরও একবার মনে করিয়ে দেয় এই স্লোগান। 

 

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের তথ্য অনুসারে, অগ্রগতির বর্তমান হারে, পূর্ণ লিঙ্গ সমতা অর্জনে সময় লাগবে ২১৫৮ সাল পর্যন্ত, যা এখন থেকে প্রায় পাঁচ প্রজন্ম। ত্বরান্বিত পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে লিঙ্গ সমতা অর্জনের জন্য দ্রুত এবং সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের গুরুত্বের উপর জোর দেওয়া হয়েছে এ বছরের নারী দিবসে। এটি ব্যক্তিগত এবং পেশাদার উভয় ক্ষেত্রেই নারীরা যে বাধা এবং পক্ষপাতের মুখোমুখি হন, তা মোকাবিলায় বর্ধিত গতি এবং জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান জানায়।

 

এই দিনটির শুরু ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একটি সুচ কারখানার নারী শ্রমিকেরা দৈনিক শ্রম ১২ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে আট ঘণ্টায় আনা, ন্যায্য মজুরি এবং কর্মক্ষেত্রে সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন। আন্দোলন করার অপরাধে সেসময় গ্রেফতার হন বহু নারী। কারাগারে নির্যাতিত হন অনেকেই। তিন বছর পরে ১৮৬০ সালের একই দিনে গঠন করা হয় ‘নারীশ্রমিক ইউনিয়ন’। ১৯০৮ সালে পোশাক ও বস্ত্রশিল্পের কারখানার প্রায় দেড় হাজার নারীশ্রমিক একই দাবিতে আন্দোলন করেন। অবশেষে আদায় করে নেন দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করার অধিকার। ১৯১০ সালের এই দিনে ডেনমাকের্র কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে জার্মানির নেত্রী ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর থেকেই সারা বিশ্বে দিবসটি আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

 

জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালে আন্তর্জাতিক নারীবর্ষে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করা শুরু করে। এর দুই বছর পর ১৯৭৭ সালে জাতিসংঘ দিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। নারী দিবস হচ্ছে সেই দিন, যেই দিন জাতিগত, গোষ্ঠীগত, ভাষাগত, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক কিংবা রাজনৈতিক সব ক্ষেত্রে বৈষম্যহীনভাবে নারীর অর্জনকে মর্যাদা দেবার দিন। এদিনে নারীরা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাসকে স্বরণ করে এবং ভবিষ্যতের পথ পরিক্রমা নির্ধারণ করে, যাতে আগামী দিনগুলো নারীর জন্য আরও গৌরবময় হয়ে ওঠে।

 

নারী নির্যাতন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা এখনো নারীদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। গার্হস্থ্য সহিংসতা, যৌন হয়রানি, কর্মস্থলে বৈষম্য এবং মানব পাচারের মতো সমস্যা বিশ্বজুড়ে রয়েছে। অনেক দেশে আইনি ব্যবস্থা থাকলেও, কার্যকর বাস্তবায়ন না থাকার কারণে নারীরা ন্যায়বিচার পায় না। আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি সচেতনতা বাড়ানো ও পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনও গুরুত্বপূর্ণ। নারীর স্বাস্থ্যসেবা, বিশেষ করে প্রজনন স্বাস্থ্য ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি করতে হবে। অনেক দেশে নারীরা মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা থেকেও বঞ্চিত হয়, যা মাতৃমৃত্যুর হার বাড়ায়। সুলভ ও মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা গেলে নারীরা আরও সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকতে পারবে।

 

সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন নারীর ক্ষমতায়নের জন্য অপরিহার্য। বহু সংস্কৃতিতে এখনো নারীদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে দেখা হয়। নারীরা যাতে সমান মর্যাদা পায় এবং নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিতে পারে, তা নিশ্চিত করতে শিক্ষা ও গণমাধ্যমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। নারীদের অর্জন ও সক্ষমতাকে প্রচার করা হলে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। নারীর ক্ষমতায়ন শুধুমাত্র নারীদের জন্য নয়, বরং গোটা সমাজের উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। যখন নারীরা সমান সুযোগ পায়, তখন পরিবার, সমাজ ও অর্থনীতি লাভবান হয়। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজিএস) অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে লিঙ্গসমতা অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে সরকার, বেসরকারি সংস্থা, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান ও সর্বস্তরের মানুষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

 

আজকের বিশ্বে নারীদের অগ্রগতি স্পষ্ট, কিন্তু এখনো অনেক পথ বাকি। আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৫ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, নারীদের সমানাধিকার, সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। প্রযুক্তির উন্নয়ন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, সামাজিক ন্যায্যতা—সব কিছুতেই নারীদের অবদান অপরিহার্য। সমাজের প্রতিটি স্তরে নারীর সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে আমরা একটি উন্নত, প্রগতিশীল ও ন্যায়সঙ্গত বিশ্ব গড়ে তুলতে পারব।

 

নারী দিবসে বিশ্বের সর্বস্তরের নারীদের অবদানকে কুর্নিশ জানাই। জল ছাড়া যেমন জীবন অচল, তেমনই নারী ছাড়া অচল একটা সভ্যতা ও সমাজ। তাই নারীদের সম্মান ও শ্রদ্ধা জানিয়ে পালন করা হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ৮ মার্চ সারা বিশ্বে এই বিশেষ দিনটি উদযাপিত হয়। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে প্রিয় ও পরিচিত নারীদের উপহার দেওয়ার পাশাপাশি তাদের জানাতে পারেন দিনটির শুভেচ্ছা। এতে চলার সূচনাও হবে ইতিবাচকভাবে। সভ্যতার মেরুদণ্ড হল নারী। তাদের অবমাননা হলে সমাজও ধসে যায়। নারীদের অবদানকে তাই নিরন্তর কুর্নিশ। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বিশ্বের সর্বস্তরের নারীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন এবং শুভকামনা।

 

একটি শিশুকে জন্ম দেওয়া থেকে বড় করে তোলা পর্যন্ত নারীদের অবদান অসীম। এই অবদানের কথাই মনে করিয়ে দেয় নারী দিবসের মতো একটি বিশেষ দিন। যেখানে নারীর সম্মান রয়েছে, সেখানে সমাজসংস্কৃতির উত্থান হবেই। নারীকে যে দেশ, যে সমাজ সম্মান জানায়, সেই দেশ অনেক উন্নতি করে। নারীদের শ্রমই একটি সমাজকে গড়ে তোলে। রান্না করে খাওয়ানো থেকে বিকেলে পড়তে বসানো, মনের সব কথা খুলে বলা থেকে বিপদে পাশে পাওয়া। বারবার নারীরা পাশে এসে দাঁড়ায়, সঙ্গে থাকে। স্নেহ, মায়া, মমতা দিয়ে শিশুদের নয়, একটা সমাজও সভ্যতাকে বড় করে তুলছে নারীরা। তাই তাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা অসীম। কখনও মায়ের রূপে, কখনও বোন হয়ে, কখনও বন্ধু বা কখনও প্রেয়সী হয়ে বারবার নারীরা জীবন সমৃদ্ধ করে তোলে। বাড়ি আর বাইরের জগতে দুই স্থানেই আজ সমান দক্ষতায় লড়াই করে চলেছে নারীরা। তাদের এই লড়াইকে কুর্নিশ জানাই।

 

নারীদের স্নেহছায়া আর যত্ন একটি শিশুর বড় হওয়ার জন্য জরুরি। আর শিশুরাই দেশ ও সমাজের ভবিষ্যত। একটি সভ্যতার ভবিষ্যতনির্মাতাদের আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে সংগ্রামী নারীদের স্যালুট জানাই। নারীদের অনবরত ত্যাগ রয়েছে বলেই আজ সভ্যতা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছে। নারীদের এই অবদান কোনওমতেই ভুলে যাওয়ার নয়।

 

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে আমি বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল নারীর সুখী সমৃদ্ধশালী ও সম্মানজনক জীবন কামনা করে তাদেরকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানাচ্ছি। এবারের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের মূল থীম "অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন নারী ও কন্যার উন্নয়ন” এর সফলতা কামনা করছি।
 

নতুন কালেকশন নিয়ে কে ক্র্যাফট

বৈচিত্র্যময় পোশাকের বিশেষ আয়োজন নিয়ে এসেছে কে ক্র্যাফট। তাই সকাল, বিকেল এবং সন্ধ্যায় কাক্সিক্ষত বা উপযোগী পোশাক নির্বাচনে ক্যাজুয়াল কিংবা এক্সক্লুসিভ সবই মিলবে এবারের আয়োজন থেকে। এছাড়া লম্বা ছুটিতে যেখানেই যান তার জন্য প্রয়োজন স্টাইলিশ কিন্তু রিলাক্সড পোশাক। আবহাওয়া ও পরিবেশের সঙ্গে মানানসই এমনি সব পোশাক থাকবে এবারের আয়োজনে। 

 
মেয়েদের জন্য সালোয়ার কামিজ এবং কুর্তিতে ফ্রক স্টাইল, এ লাইন এবং রেগুলার শেপ ছাড়াও স্ট্রেইট কাট, রাফল, প্লিটেড, বক্স প্লিটেড স্টাইল থাকবে। নিজস্ব ডিজাইনের শাড়িতে মোটিফের ব্যবহার, কালার কম্বিনেশন এবং ভ্যালু অ্যাডিশনে নানা মিডিয়ার ব্যবহার সকলের দৃষ্টি  কাড়বে। ছেলেদের জন্য রয়েছে পছন্দের ব্র্যান্ড কে ক্র্যাফটের রেগুলার ও ফিটেড পাঞ্জাবি। এছাড়াও পাওয়া যাবে স্মার্ট ক্যাজুয়াল শার্ট, এথনিক শার্ট, ফতুয়া। কে ক্র্যাফটের ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, কুমিল্লার সকল শো-রুম ছাড়াও অনলাইন শপ kaykraft.com থেকে ঈদ আয়োজন এর পোশাক পাওয়া যাবে সাশ্রয়ী মূল্যে। এছাড়াও অর্ডার করা যাবে ফেসবুক পেজ থেকেও । 

আত্মরক্ষায় মেয়েদের উদ্যোগ

শারীরিকভাবে অপেক্ষাকৃত দুর্বল নারীদের নিয়ে সামাজিকভাবে এক প্রকার অবহেলা, উদাসীনতা প্রত্যক্ষ করা যায়। নিজেদের সুরক্ষার বিষয়ে তো অনেকখানিই। আত্মরক্ষা করার সুষম সক্ষমতা মেয়েদের কিছুটা পিছিয়ে রাখে এটাই সমাজ সংস্কারের নিয়ম। সেই আদিকাল থেকে আজ অবধি। কিন্তু যুগের পরিবর্তন, নতুন সময়ের আবেদনে নারীদের সদর্পে এগিয়ে চলা বর্তমানে ধারাবাহিক কার্যক্রমের অনুষঙ্গ। এখনো শারীরিক শক্তিময়তায় নারী খেলোয়াড়দের অনেক বাধাবিঘœ অতিক্রম করা নজরে আসতে সময় লাগছে না।

সেটাও কম কিছু নয়। কঠিন কর্মযোগে সম্পৃক্ত হতে গেলে সবার আগে প্রয়োজন সুস্থ, সবল শারীরিক সক্ষমতা। ক্রমান্বয়ে তা পারদর্শিতায় রূপ নিতে দেরি হয় না। যা সমতাভিত্তিক সমাজ-বিনির্মাণের নির্ণায়ক। সম্প্রতি এক খবরে মেয়েদের আত্মরক্ষার প্রস্তুতির ওপর চমকপ্রদ ঘটনা নজরকাড়ার মতো, পরনির্ভরশীলতা, দুর্বলতা, আর কিছুটা অক্ষমতায় পিছিয়ে পড়া মেয়েরা নিজ উদ্যোগে তাদের সবল করার প্রত্যয়ে ব্রতি হয়েছে। এমন ঘটনা ঘটে চট্টগ্রামের আনোয়ারায়। সেখানকার মেয়েরা আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেদের শারীরিক সক্ষমতাকে প্রমাণ করতে এগিয়ে এসেছে।

 

সত্যি এক অসাধারণ কর্ম সাধনা। ‘সবলা’ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেনÑ নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার কেন নাহি দিবে অধিকারÑ হে বিধাতা, সেটার জন্য অনেক অপেক্ষার পালা সীমা অতিক্রম করেছে। কিন্তু সেটাও যখন হাতের নাগালে তাই যেন সই। সংখ্যায় কম হলেও সামনে আরও বাড়বে। অসাম্য বৈষম্যের বন্ধনজালে আবদ্ধ নারীরা চিরায়ত অপসংস্কারেও আকণ্ঠ নিমজ্জিত। এক সময় খেলাধুলায় তাদের অংশীদারিত্বও ছিল নগণ্য। যুগের হাওয়ায় তা ধুলায় মিশিয়ে দিয়ে নিজেকে যে মাত্রায় প্রমাণ করে যাচ্ছে সেটা নারী জাতির অবিস্মরণীয় বিজয়।

 

কর্মজীবী নারীরা এখন ক্ষুদ্র পরিবার সামলিয়ে বৃহত্তর সামাজিক আঙিনায় পেশাগত কর্মযোগকেও অপ্রতিরোধ্য করে তুলছে। ভীরু নারীরা আজ সময়ের দুরন্ত আহ্বানে দুঃসাহসিক হয়ে উঠতেও যেন মরিয়া। স্বাবলম্বী হওয়া থেকে আরম্ভ করে শারীরিক সক্ষমতাকে প্রমাণ করা সবই যেন অপার মহিমার সঙ্গে অসম পারদর্শিতাকেও দৃষ্টিনন্দন করে তুলছে। 
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় নারীরা আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণের ওপর এক চমকপ্রদ ঘটনা সমসংখ্যককে নতুনভাবে উদ্ভাসিত করা। আপন দক্ষতা আর শক্তিময়তায় আনোয়ারা উপজেলায় বিভিন্ন ক্রীড়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পাশাপাশি ‘শাওলিন কুংফুং অ্যান্ড উন্ড একাডেমি’, ‘বাংলাদেশ টাইগার মার্শাল আর্ট’, ‘শাওলিন উন্ড ট্রেনিং সেন্টার’ নামে তিনটি নারী আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। কোনো কঠিন কাজের সামনে কাঁপন ওঠার মতো দুঃসময় নারীকে এখন আর সেভাবে তাড়া করে না।

তা ছাড়া জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শিশু সংস্থা ইউনিসেফের কার্যক্রমে শিশু-কিশোর সেলফ ডিফেন্স ক্লাব, মহিলা অধিদপ্তরের কিশোর-কিশোরী ক্লাবসহ আরও কিছু কার্যক্রমের মাধ্যমে আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণকে জোরালো করা হচ্ছে। আনোয়ারার এমন চমৎকার পরিবেশে ছেলেমেয়ে উভয়ই পাশাপাশি অবস্থান করে প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়াও সমতাভিত্তিক সুস্থ পরিবেশকে স্বাগত জানানো। ছেলেময়ের সমান অংশগ্রহণে পোশাক-পরিচ্ছেদেও কোনো বিভেদ নেই। এক রকম পোশাক পরে মানুষের মর্যাদায় যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে আধুনিক ও উদীয়মান প্রজন্ম তা আগামীর বাংলাদেশকে বৈষম্যহীনতার আদলে নতুন মোড়কে উন্মোচন তো করবেই।

এ ছাড়াও আছে এনজিও সংস্থার নানামাত্রিক প্রকল্প, যা ছেলেমেয়েকে সমান বিবেচনায় দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে নিয়ত সমতাভিত্তিক কর্মযোগ নিরন্তর করেই যাচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও সেলফ ডিফেন্সের প্রশিক্ষণ নিয়ে নারীরা পারদর্শী  আর শারীরিক সক্ষমতায় নিজেদের তৈরি করে যাচ্ছে। আধুনিক ও প্রযুক্তির নতুন বাংলাদেশের নব অধ্যায়ের শুভ সূচনা তো বটেই। তবে মেয়েদের শাশ্বত কর্মযোগকেও সমানভাবে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। যেমন সেলাই, বিউটিশিয়ান হিসেবেও প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেদের স্বাবলম্বী করতেও মেয়েরা এগিয়ে থাকছে।

নারী প্রশিক্ষণ প্রার্থীদের আবেগ-উচ্ছ্বাসেরও কোনো ঘাটতি নেই। পরম আনন্দে, স্বইচ্ছায় উদ্যোগী হয়ে তারা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রে নিজেদের যাত্রাকে সাবলীল আর অবারিত করে যাচ্ছে। তাদের আলাপচারিতায় আরও প্রত্যক্ষ হয় ঘর থেকে বাইরে যেতে গেলে পিতা-মাতা-অভিভাবকরা দুশ্চিন্তায় ভোগেন। নির্বিঘেœ, নিরাপদে যাওয়া-আসা করা যাবে তো? পথে-প্রান্তরে কোনো বিপত্তির আশঙ্কা নেই তো? তাই নিজের নিরাপত্তায় শারীরিকভাবে সক্ষম হওয়াও জরুরি। সঙ্গত কারণে আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণও সময়ের ন্যায্যতা দাবি করে। তার ওপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়ার পথে বখাটে ছেলেদের উৎপীড়ন, উৎপাত বহু সময় ধরে ঘটে যাওয়া এক দুঃসহ ঘটনার পালাক্রম।

সেখানে নিজেদের সুরক্ষায় প্রতিপক্ষকে থামাতে আত্মশক্তির বিকল্প অন্য কিছু নয়। এটা শুধু চট্টগ্রামের আনোয়ারাতে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। বরং বাংলাদেশের শহর-গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন প্রান্তরে এমন কার্যক্রম সম্প্রসারিত করতে হবে। যাতে সারাদেশের মেয়েদের রাস্তাঘাটে কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে যেতে-আসতে কোনো বাধাবিপত্তির মুখোমুখি হলে প্রতিরোধ করার শক্তিও যেন অন্তর্নিহিত বোধে জিইয়ে থাকে।

 
 

চায়ের সাথে ভুলেও যে ৪ খাবার খাবেন না

চা বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয়। এর প্রশান্তিদায়ক উষ্ণতা এবং অগণিত স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। তবে শুধু চা হলে জমে না অনেকের, এর সঙ্গে প্রয়োজন হয় অল্পস্বল্প কিছু খাবার। এরকম খাওয়া যেতেই পারে। তাতে ক্ষতির কিছু নেই। 

দুগ্ধজাত পণ্য

 

আমাদের দেশে জনপ্রিয় সব পানীয়ের মধ্যে অন্যতম হলো দুধ চা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চায়ের সঙ্গে দুগ্ধজাত কোনো খাবারই না খেতে। দুগ্ধজাত প্রোটিন চায়ের সূক্ষ্ম গন্ধকে পরিবর্তন করে এবং একে কম উপভোগ্য করে তোলে। যদিও আপনার চায়ে কিছুটা দুধ মেশানো গ্রহণযোগ্য হতে পারে, তবে চায়ের সঙ্গে পনির, দই বা ক্রিম খাওয়া এড়িয়ে যাওয়াই উত্তম।

 

সাইট্রাস ফল

কমলা, লেবু এবং আঙ্গুরের মতো সাইট্রাস ফল ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। এগুলো চায়ের ট্যানিনের সঙ্গে সংঘর্ষ করতে পারে, যার ফলে একটি তিক্ত বা ধাতব স্বাদ তৈরি হয়। সাইট্রাস ফলের অম্লতা চায়ের সঙ্গে মিলিত হলে পেট খারাপ হতে পারে, যা হজমের অস্বস্তি তৈরি করে। অনেকে চায়ের সঙ্গে লেবু মিশিয়ে খান, সামান্য লেবুর রসে সমস্যা নেই তবে আস্ত সাইট্রাস ফল চায়ের সঙ্গে খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

 

ঝাল খাবার

চায়ের সঙ্গে পাকোড়া, পুড়ি, সিঙ্গারা ইত্যাদি খাওয়ার অভ্যাস আমাদের অনেকেরই রয়েছে। কিন্তু এ ধরনের খাবার চায়ের সূক্ষ্ম স্বাদকে নষ্ট করতে পারে। সেইসঙ্গে ঝাল জাতীয় খাবারে থাকা ক্যাপসাইসিন এবং চায়ে থাকা ট্যানিনের সংমিশ্রণ গ্যাস্ট্রিক জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে। তাই চায়ের সঙ্গে যেকোনো ঝাল জাতীয় খাবার এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার

উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার, যেমন কাঁচা শাক-সবজি, গোটা শস্য এবং লেবু স্বাস্থ্যকর খাদ্যের জন্য অপরিহার্য। তবে এগুলো চায়ের সঙ্গে খাওয়া হলে তা আয়রনের মতো নির্দিষ্ট খনিজ শোষণে বাধা দিতে পারে। চায়ে অক্সালেট নামক যৌগ রয়েছে, যা খনিজের সঙ্গে আবদ্ধ হয় এবং তার শোষণকে বাধা দেয়। তাই চায়ের সঙ্গে উচ্চ ফাইবার যুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

সম্পাদক : আবু তাহের

© ২০১৪-২০২৫ টাঙ্গাইল দর্পণ, অনলাইন নিউজ পেপার ২৪/৭