শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

Logo
Add Image

সাহিত্য দর্পণ

গল্প

আকসার ঐ আবাবিল: সুপ্ত রায়হান সজীব

প্রকাশিত: ২০২৫-০২-০৭ ১৫:২২:১০

News Image

অবরুদ্ধ গাজায় এবার শীতটা একটু বেশিই পড়েছে। তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে একটু কমই বটে। এই তীব্র শীতের সকালে আল সার্ম পার্কের অ্যালুমিনিয়ামের বেঞ্চিতে বসে আনমনে নিজের কৃত্রিম পায়ের ওপর হাত বোলাচ্ছে ফাইজা।

 

অনবদমিত অশ্রুগুলো অন্য হাতে থাকা কুড়িয়ে পাওয়া বাকলাভার উপর অঝোর ধারায় বর্ষিত হচ্ছে। তাঁর মনে কোন দুঃখ নেই। দুঃখ নামক প্রহেলিকা তো কবেই মন থেকে পালিয়ে গেছে। আছে শুধু ক্ষোভ।

 

ক্ষোভটা ঠিক কেমন, সেটাও সে জানে না। ঠিক ক্ষোভ নয়, আক্ষেপ।  কিছু করতে না পারার আক্ষেপ।  কৃত্রিম পা নিয়ে সে কীইবা আর করতে পারবে!

 

ফাইজার বয়স বেশি নয়। সবে ১৬। কিন্তু এই ১৬ বছর বয়সেই তাঁর ১৬ শতাব্দীর অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়েছে। ছোট্ট এই জীবনে মৃত্যু নামক চিরন্তন সত্যকে সে খুব কাছে থেকে দেখতে পেয়েছে। এক বার নয়, বারবার।

 

"মৃত্যু" তাঁর মনে কালিকাময় এক শোকপূর্ণ উপাখ্যান রচনা করেছে। সবাইকে হারিয়ে সে যেন ইমারতের ধ্বংসস্তুপের মাঝে দাঁড়ানো এক ভগ্ন মিনার। জায়নাবাদীদের কনসেনট্রেশান ক্যাম্প থেকে এইতো কয়েকদিন হলো মুক্তি লাভ করেছে।

 

দুইদিন অভুক্ত থাকার পর আজ এই পার্কের ডাস্টবিন থেকে অর্ধগলিত এক টুকরো বাকলাভা কুড়িয়ে পেলো। সেটাই এখন আহারের একমাত্র উপজীব্য।

 

আজ পরিবারের সকলের কথা খুব মনে পড়ছে। বিশেষ করে দাদুর কথা, যদিও সে কোনোদিন তাকে দেখেনি। যিনি ১৯৭৩ সালের চতুর্থ আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে সিরিয়ার হয়ে একজন ফিলিস্তিনি সেনা কমান্ডো হিসেবে কাজ করতেন। তিনি প্রখর মেধাসম্পন্ন ও খোদাভীরু লোক ছিলেন। দিনভর যেমন গোলাবারুদ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন, ঠিক তেমনই সারারাত নিজেকে খোদার ইবাদতে মগ্ন রাখতেন। রমজান মাসেও সারাদিন রোজা রেখে ব্যারেল টু ব্যারেল বারুদ ফুরিয়েছেন। যুদ্ধজয়ের আশা নিয়েই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি।

 

কিন্তু, বিধাতার নির্দেশে এই যুদ্ধের অপমানজনক ইতির পূর্বেই সিনাই উপত্যকায় বুকের পাজরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। জীবনের শেষ সায়াহ্নে সহযোদ্ধারা মশক ভরা পানি নিয়ে দাদুর মুখে ধরে। কিন্তু, তিনি পানি খেতে অস্বীকৃতি জানান। কারণ, তিনি সাওমে রত।

 

পৃথিবীর এই তুচ্ছ পানি পান করে জান্নাতুল বাকীর ঝরণার পানি হতে বঞ্চিত হতে চান না। দাদুর মৃত্যু হলো, কিন্তু যুদ্ধে জয় সম্ভব হলো না। পরিশোধ হলো না দাদুর রক্তের ঋণ। মিসর সিনাই উপত্যকা ফিরিয়ে পাওয়ার বদৌলতে ইসরাইলকে দেয় আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি। যেটা ছিলো ইসরাইলকে দেওয়া কোনো মুসলিম বিশ্বের দিক হতে প্রথম ন্যক্কারজনক কোন পদক্ষেপ।

 

ঘৃণ্য ক্যাম্প-ডেভিড চুক্তিতে শুধুমাত্র স্বার্থ উদ্ধারের জন্য স্বাক্ষর করলেন আনোয়ার সাদাত। শহীদদের লাশের উপর পা রেখে মিথ্যা মানবতা বাঁচানোর হাসি হেসেছিলেন তৎকালীন সাদাত সরকার।

 

ফাইজারা বংশানুক্রমিকভাবে ফিলিস্তিনি ও গাজার অধিবাসী। ওদের প্রপিতামহের পিতামহ ওদের বংশের গোড়াপত্তনকারী। সে জন্ম নিয়েছে সোনার চামচ মুখে নিয়ে নয়, বারুদের ব্যারেল হাতে নিয়ে। সৃষ্টিকর্তা যুদ্ধকে ওদের ভাগ্যের সঙ্গে সীলমোহরের ন্যায় এঁটে দিয়েছেন।

 

একপক্ষীয় যুদ্ধে এরিয়েল শ্যারনের তৈরিকৃত হায়েনাদের বীভৎস আক্রমণে ভীতসন্ত্রস্ত মেষপালের মতো দিগ্বিদিক ছুটে চলছে তাঁরা। শোণিতের উল্টো ধারায় আটকে গেছে তাঁদের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলেও, মূল সমস্যাটা শুরু হয় ২০০৩ সালে।

 

কারণ, ওই বছরেই ওর বাবা হামাসে একজন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে যোগ দেন। এর ফলে ফিলিস্তিনিদের তৎকালীন বৃহৎ সংগঠন ফাতাহ-এর রোষানলে পতিত হন।

 

২০০৬ সালের নির্বাচনে হামাস সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও, এই ঐতিহাসিক গোষ্ঠীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ঘোষণা দেয় ইসরাইল তথা আমেরিকার দালালগুলো। অপরদিকে অহিংসতায় বিশ্বাসী ফাতাহর সামনে মূলা ঝুলিয়ে তো রেখেছেই। তখন, ফাইজার বাবার মতো লক্ষ লক্ষ হামাস যোদ্ধারা রাজপথ ও বিরান মরুভূমির বুকে নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন শুরু করে।

এরপর কি আর হবে?

সকল স্বৈরাচারী শাসকদের ন্যায় আইজাক রবিনও দমন ও পীড়ন নীতি চালু করেন।

বুলেটের দাপটে ব্যালটের অধিকারও রাজপথে বিলীন হয়ে গেলো। তাই বলে কি আর হামাস বসে থাকবে? শুরু হলো প্রচণ্ড প্রতিরোধ।

 

গেরিলা আক্রমণে ইসরাইল নাকানি-চুবানি খেলেও, বারুদের বারতায় পিছু হটতে বাধ্য হলো হামাস। শুরু হলো গাজা উপত্যকায় প্রবল ধরপাকড়। অন্যান্য হামাস নেতার ন্যায় ফাইজার আব্বাকেও ধরে নিয়ে গেল ওরা।

 

তিনমাস কারাগার নামক অঘোষিত নরকে অমানবিক নির্যাতনের পর তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। এদিকে ফাতাহ তথা পি এল ও প্রধান ইয়াসির আরাফাত ইসরাইলের সাথে সমঝোতা চুক্তি করে নোবেল অর্জন করে বিশ্বে শান্তি পয়দা করে বিষ প্রয়োগে অক্কা পেয়েছেন।

 

ইয়াসির অক্কা পাওয়ার পর জায়ানিস্টদের প্রতাপ আরো বেড়ে যায়। এর মাঝেই ফাইজার জন্ম হয়। দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়। আস্তে আস্তে বেড়ে ওঠে ফাইজা। গাজার পরিস্থিতিও দিন দিন ঘোলাটে মেঘে ঢাকা পড়ে। জায়নাবাদী ফোর্সদের অত্যাচারের মাত্রাও তখন সহ্যসীমা ছাড়িয়ে গেছে। গুপ্তহত্যা ক্রমাগত প্রকাশ্য হত্যায় রুপ নিচ্ছে।

 

মিথ্যা ইস্যু তৈরি করে বুনো পাখিদের মতো নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনদের। মা-বোনদের ইজ্জত নিয়ে হোলি খেলায় মেতেছে ওরা। না, আর না। এভাবে মুখে তালা লাগিয়ে বসে থাকা যায় না।

এবার ভাঙতে হবে লোহার শিকল,

শোনাতে হবে মুক্তির গান।

 

হামাসের প্রতিবাদের সুরে সুর মেলালেন ফাইজার বাবাও। হাতিয়ার ছাড়া কি আর হায়েনাদের হটানো যায়? কিন্তু, উন্নতমানের হাতিয়ার ওরা পাবে কোথায়?

তাই, যতোই পরিকল্পনা করা হোক না কেন, উল্লুকদের সমরাস্ত্রের মুখে বার বার হেরে যায় ওরা। বাধ্য হয়ে আশ্রয় নিলেন গেরিলা যুদ্ধের। এতে আধো আধো সূর্যাভের সন্ধান পাওয়া গেল। এভাবেই চলতে থাকে। হঠাৎ, এক রাতে ঘটে গেল এক ট্রাজেডি।

 

ইসরায়েলি বর্বররা জানতে পারলো আব্বুর কথা। ওরা হানা দিলো বাড়িতে। ধরে নিয়ে গেল বাবাকে। হত্যা করা হলো ওর ছোটচাচা, মা ও দাদীকে। বাবার সামনেই ধর্ষণ করা হলো ফাইজাকে। অবলা বোবা মেয়েটা নীরবে সহ্য করলো সেই অপমান।শুধু ধর্ষণ করেই ওরা ক্ষান্ত হলো না, ওকে সঙ্গে করে নিয়ে গেলো কনসেনট্রেশান ক্যাম্পে। সেখানে দীর্ঘ ২ বছর যাবৎ অবর্ণনীয় নির্যাতন ও বিকৃত যৌনাচারের শিকার মাত্র কয়েকদিন হলো ছাড়া পেয়েছে। পাথর দিয়ে পা ভাঙার পর ওর সেখানে কোন মূল্য নেই।

 

তাঁর কি পৃথিবীর বুকে আদৌ কি কোন মূল্য নেই? সে কি এতোটাই মূল্যহীন? বোবা ও খোঁড়া হওয়ার কারণে সে কি মুসলিম জাতির জন্য কিছুই করতে পারবে না? পারবে না বর্বর ইহুদিবাদীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঢাল হতে ? এতোই অচল সে?

তাই কি? নিজেকে অনবরত প্রশ্ন করে ফাইজা।

কোনো উত্তর খুঁজে পায় না। শুধু প্রশ্নগুলোই মনের ব্যালকনিতে বারবার ঘুরপাক খায়। হঠাৎ, মনে পড়ে যায় অক্টোবর মাসের কথা। এই তো গেল যে অক্টোবর মাসটা। ঠিক মাসের কথা নয়। সেই মাসের প্যারাগ্লাইডিং ফাইটারদের কথা।

 

যারা সামান্য কিছু অস্ত্র পুঁজি করে প্যারাসুট নিয়ে, কিটবুজ মরুভূমির জেনিন সীমান্ত পার হয়ে, জায়োনিস্টদের সুপারনোভা মিউজিক ফ্যাস্টিভাল নামক নগ্ন উৎসবে হামলা চালায়। এতো গেলো ৭ ই অক্টোবরের কথা ,বেশিদিন তো গত হয়নি। ওরা পারলে আমি কিছু করতে পারবো না কেন??-এই কথাটি বারবার ওর মাথার ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছে।

বোবার মুখে প্রতিবাদের বুলি ফুটেছে। সেও কিছু করতে চায়। নিজেকে আর কষ্টের কনডেমড সেলের মাঝে বন্দী রাখতে চায় না সে। দেয়ালে যে পিঠ ঠেকে গেছে,

প্রতিবাদ তাই করতেই হবে। না, আর তিলমাত্র ছাড় দেওয়া যাবে না।

 

সময় এসেছে বদলা নেওয়ার। খুনকা বদলা খুন। রক্তের বদলা রক্ত। সমগ্র ফিলিস্তিন ওদের ছিল ওদেরই থাকবে। জানোয়ারদের হিংস্র থাবায় অনেকবার রক্তাক্ত হয়েছে ওরা, এবার সময় এসেছে বেয়নেট দিয়ে সেই থাবা থেঁতলে দেওয়ার।

 

হাতে রাখা অবশিষ্ট বাকলাভা মুখে পুরে উঠে দাঁড়ালো সে। তাঁর সংকল্প এখন একটাই-তিলে তিলে নীরবে নিভৃতে মৃত্যুর চাইতে, শহীদ হওয়াই উত্তম।  মরতে তো একদিন হবেই।

 

২০ দিন পর.......

কিলুত মরুভূমির কোন এক জায়গায় অবস্থান করছে হামাসের ইন্টেলিজেন্স ও সাঁজোয়া ফোর্সের কয়েকজন সদস্য। একটু দূরে একটা ওয়াদি পেরোলেই আজিবা সীমান্তের কাঁটা তারের বেড়া। ওর অল্প একটু দূরেই মুসলমানদের পবিত্রভূমি জেরুজালেম।

সেখানেই বিদ্যমান মুসলমানদের প্রথম কিবলা মসজিদ আল আকসা বা বাইতুল মুকাদ্দাস। যেখান থেকে মানবতার অগ্রদূত ও নবীকূলের শিরোমণি হযরত মোহাম্মদ (সা.) বোরাক নামক প্রাণীতে আরোহণ করে ঊর্ধ্বাকাশে তথা মিরাজে গমন করেছিলেন। সেই স্থান আজ ওই নব্য ক্রুসেডার ও দাজ্জালের জায়নাবাদী দালালদের দখলে।

 

খ্রিস্টান ও ইহুদি জাতি দুটোই আজ এক হয়ে এই বিশ্বের বুকে অন্যতম পরাশক্তি হয়ে আত্মপ্রকাশ করে মুসলমানদের বিপক্ষে মৃত্যুর তাণ্ডবলীলা চালাচ্ছে। তাই তো এই মসজিদের পাশে গড়ে তুলেছে ওয়ালিং ওয়াল এবং টাওয়ার অব ডেভিডসহ আরো কতো কি। চলছে আল আকসা ভেঙে থার্ড টেম্পল গড়ার কুচক্রী পরিকল্পনা।

জাতিসংঘ নামক সংগঠনটি ব্যার্থ মনোরথে নীরব দর্শক হয়ে সবকিছু তাকিয়ে দেখছে।

কিছুই করার নেই। কারণ, বিশ্বকে ওরা নিজেদের কব্জায় টেনে নিয়েছে।

 

এখন শুধু ঈমাম মাহদী ও ঈসা ইবনে মারিয়মের জন্য অপেক্ষা প্রহর গোণা ছাড়া বিকল্প কিছু নেই। কারণ, আমাদের কোন নেতা নেই। নেতাহীন এই মুসলিম বিশ্ব মার খেতে খেতে যেনো অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।

শুধু কি ফিলিস্তিন!

চীন, মিয়ানমার, বসনিয়া, চেচনিয়া, ককেশাস, সোমালিয়া, বুরকিনা ফাসো, আজারবাইজান, লেবানন, সিরিয়া, পাশ্ববর্তী দেশ ভারত ও মায়ানমার-এসব দেশে মুসলমানদের হাহাকার ও আর্তনাদ বিশ্বের বুকে মানবতাকে অবিরাম ধর্ষণ করে চলছে নিয়মিত।

 

তবুও কি বসে থাকা যায়? নির্যাতন সহ্য করতে করতে দেয়ালে যখন পিঠ ঠেকে যায়, পায়ের নিচ হতে মাটি সরে আসে, ঠিক তখনই মানুষ বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।

কারণ, তিলে তিলে মৃত্যুর চাইতে অত্যাচারীর মসনদে সিংহের থাবা বসিয়ে, ঘায়েল করে একটা চিহ্ন বসিয়ে মৃত্যুবরণ করা অধিক তৃপ্তিময়।

তাই তো মাজলুমানেরা যুগে যুগে জালিমের শাসনে অতিষ্ঠ হয়ে বিদ্রোহের বারতা শুনিয়ে শান্তির ধ্বজা উত্তোলন করে আমাদের পথ প্রদর্শক হয়ে চির ভাস্বর হয়ে আছেন।

তাই আজ এই আয়োজন। এই দলের উদ্দেশ্য হলো: আজ তাঁরা আকসা জয় করবেই।

অদম্য সে সংকল্প। তাই আজকের অভিযানের নাম দিয়েছে: "অপারেশন আল আকসা ফ্লাড"।

 

শুরু হলো কার্যক্রম। একে একে প্যারাসুট পিঠে বেঁধে সীমান্ত অতিক্রম করলো কয়েকজন। হঠাৎ, অবাক করে দিয়ে সেখানে হাজির আমাদের ফাইজা। কিন্তু সে সাধারণ কোনো বেশে নয়, একজন প্যারাগ্লাইডিং যোদ্ধার পোশাক পরিধান করে বান্দা হাজির।  হুইল চেয়ারের সাথে উড়ন্ত প্যারাসুট, হাতে উদ্যত কালাকশিনভ।

আবাবিল। হ্যাঁ, আবাবিল। একুশ শতকের আবাবিল। যে আবাবিলের মুখে পাথর নেই,বুকে শুধু পাথরচাপা কষ্ট। কষ্ট, হরেক রকম কষ্ট।

স্বজন হারানোর কষ্ট,  নীরবে নির্যাতিত হওয়ার কষ্ট, মৌলিক অধিকার খর্ব হয়ে যাওয়ার কষ্ট, পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হওয়ার কষ্ট।

 

আবরাহা নেই, আছে শুধু তাঁর উত্তরসূরীরা। তাই, নব্য আবরাহাদের বিরুদ্ধে ফাইজাদের এই অভিযান। সবাইকে অবাক করে দিয়ে সে আকাশে ওড়ে গেলো। আজ তাঁর স্বপ্ন পূরণের দিন। ছোট্ট বেলায় তাঁর স্বপ্ন ছিলো আকসার ঐ গম্বুজ দু হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখবে। সোনালী রঙের গম্বুজটা কতোই না মনোহর!

 

আজ সেটা সত্যি হবে কি? বাতাসের গতির সাথে তালে তাল মিলিয়ে উড়ে যাচ্ছে ফাইজার হুইল চেয়ার। অল্প সময় পর সেও জেরুজালেমে প্রবেশ করলো। এ যে দূরে দেখা যাচ্ছে আকসার ঐ সোনালী গম্বুজ। নিচ থেকে জায়োনিস্ট জানোয়ারদের কোলাহল শোনা যাচ্ছে।

 

গুলিও করছে অনবরত। না।  আর চুপ থাকা যায় না। গর্জে উঠলো ফাইজার কালাকশিনভ। নিমিষেই কয়েক ডজন শত্রু খতম। নিজের হাতকে বিশ্বাস করতে পারছে না ফাইজা। অগ্রে আসা সহযোদ্ধারা বারুদের তুফান সৃষ্টি করে চলেছে।

 

মুহূর্তের একটি খণ্ডযুদ্ধে বিজয় হলো আল আকসা। সবার চোখে আনন্দ অশ্রু। কিন্তু, ফাইজা কোথায়? সবাই ফাইজাকে খুঁজছে। কিন্তু, কোথায় সে?

হঠাৎ পিছন থেকে কেউ একজন বলে ওঠলো: কুব্বাতুস সাখরার দিকে তাকাও??

 

নিমিষেই সবার দৃষ্টি সেদিকে আবদ্ধ হলো। গম্বুজকে জড়িয়ে ধরে একটি নিথর দেহ দাঁড়িয়ে আছে। ছায়ামূর্তিটি অস্পষ্ট। সহযোদ্ধারা কাছে যেতেই দেহটি নিস্তেজ হয়ে ভূমিতে ঢলে পড়লো। এ যে আমাদের ফাইজা। সকলে সমস্বরে বলে ওঠলো : 'আল্লাহু আকবার,আল্লাহু আকবার'।

'ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন'।

 

শাহাদাত? হ্যাঁ, শাহাদাত!! শাহাদাত বরণ করেছে আমাদের ফাইজা। শাহাদাত বরণ করেছে পৃথিবীর এই আবাবিল। একুশ শতকের ডানাবিহীন এক আবাবিল।#

Logo
Logo





Logo
Logo

সম্পাদক : আবু তাহের

© ২০১৪-২০২৫ টাঙ্গাইল দর্পণ, অনলাইন নিউজ পেপার ২৪/৭