বুধবার ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

Logo
Logo

সংগ্রাম শেষ হয়নি, গণতন্ত্র এখনো দূরে: মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত: ২০২৫-০৪-২০ ২৩:০১:৫৪

News Image

টাঙ্গাইল দর্পণ অনলাইন ডেস্ক:

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ এক অস্থির পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, “এই সময়টা আমাদের জন্য এক কঠিন পরীক্ষা। পত্রপত্রিকা, টেলিভিশনের টক শো—সবখানে এক ধরনের অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে।”


রোববার রাজধানীর কাকরাইলের ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের আয়োজনে প্রয়াত বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানের স্মরণে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।


মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা এখনো নির্বাচনের মাধ্যমে কোনো নির্বাচিত সরকার বা সংসদ পাইনি। গণতন্ত্র এখনো প্রতিষ্ঠা পায়নি। তাই সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। সংগ্রাম শেষ হয়নি।” তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান, সতর্কতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।


সংস্কার ও নির্বাচনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বর্তমানে ‘সংস্কার’ ও ‘নির্বাচন’ শব্দ দুটি সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হচ্ছে। এসব ইস্যুতে সব রাজনৈতিক দলের উচিত হবে সংলাপের মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছানো।”


বক্তব্যে শ্রমজীবী মানুষের দুর্দশার কথাও তুলে ধরেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, “কৃষক তার পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় না, শ্রমিকের সন্তান ভালো স্কুলে যেতে পারে না, গেলেও বই পায় না। অথচ টক শো, নাটক এমনকি সংবাদ মাধ্যমেও এদের কোনো উপস্থিতি নেই।”


তিনি প্রশ্ন তোলেন, “যে অন্তর্বর্তী সরকারের কথা বলা হচ্ছে, সেখানে কি শ্রমজীবী মানুষের জন্য কোনো সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে?”


প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, “তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। যারা এই সময় একজন ত্যাগী ছাত্রনেতাকে হত্যা করতে পারে, তারা কখনোই গণতন্ত্র বা বাংলাদেশের পরিবর্তনের পক্ষে থাকতে পারে না। তারা বিভাজন সৃষ্টিকারী।”


আলোচনায় প্রয়াত আবদুল্লাহ আল নোমানের স্মৃতিচারণা করে মির্জা ফখরুল বলেন, “এই সন্ধিক্ষণে নোমান ভাইয়ের অভাব আমরা সবচেয়ে বেশি অনুভব করছি। তিনি ছিলেন এমন একজন নেতা, যিনি প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও জনমত গঠন করে আন্দোলন গড়ে তুলতেন।”


তিনি আরও বলেন, “আজকে যখন পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তখন জনগণকে সঠিক পথে নেওয়ার কাজটা সবচেয়ে জরুরি। এই কাজে নোমান ভাই পারদর্শী ছিলেন।”


নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমান বলেন, “আমার বাবা রাজনীতি করতেন আদর্শ নিয়ে, বিনিময়ে কিছু চেয়ে নয়। তিনি বিশ্বাস করতেন—রাজনীতিতে দেওয়ার আছে, নেওয়ার নয়।”


জুলাই-আগস্টে আন্দোলনে শ্রমিকদের ভূমিকা স্মরণ করে ফখরুল বলেন, “এ আন্দোলনে শ্রমিকরা প্রাণ দিয়েছে, ত্যাগ স্বীকার করেছে। আমি আশা করি, শ্রমিক দলের নেতারা সেই আত্মত্যাগের একটি তালিকা প্রস্তুত করবেন, যেন ইতিহাস তাদের স্মরণ রাখতে পারে।”


তিনি বলেন, “সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিক নেতৃত্বও পরিবর্তন হয়, এটি হওয়া উচিত নয়। শ্রমিকদের কথা বলবে শ্রমিকরাই। এজন্য শ্রমিকদের নিজেদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।”


অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন। বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আহমদ আজম খান, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসসহ অনেকেই।


নজরুল ইসলাম খান বলেন, “নোমান ভাই ছিলেন নেতাদের নেতা। তিনি তার রাজনীতির পুরো সময় শ্রমিকদের জন্য নিবেদিত ছিলেন। এমন রাজনীতিক আজকের দিনে খুবই বিরল।”
 

সম্পাদক : আবু তাহের

© ২০১৪-২০২৫ টাঙ্গাইল দর্পণ, অনলাইন নিউজ পেপার ২৪/৭