রবিবার ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৪ ফাল্গুন ১৪৩১
প্রকাশিত: ২০২৪-০৭-৩১ ১৯:২১:৩৪
শারীরিকভাবে অপেক্ষাকৃত দুর্বল নারীদের নিয়ে সামাজিকভাবে এক প্রকার অবহেলা
শারীরিকভাবে অপেক্ষাকৃত দুর্বল নারীদের নিয়ে সামাজিকভাবে এক প্রকার অবহেলা, উদাসীনতা প্রত্যক্ষ করা যায়। নিজেদের সুরক্ষার বিষয়ে তো অনেকখানিই। আত্মরক্ষা করার সুষম সক্ষমতা মেয়েদের কিছুটা পিছিয়ে রাখে এটাই সমাজ সংস্কারের নিয়ম। সেই আদিকাল থেকে আজ অবধি। কিন্তু যুগের পরিবর্তন, নতুন সময়ের আবেদনে নারীদের সদর্পে এগিয়ে চলা বর্তমানে ধারাবাহিক কার্যক্রমের অনুষঙ্গ। এখনো শারীরিক শক্তিময়তায় নারী খেলোয়াড়দের অনেক বাধাবিঘœ অতিক্রম করা নজরে আসতে সময় লাগছে না।
সেটাও কম কিছু নয়। কঠিন কর্মযোগে সম্পৃক্ত হতে গেলে সবার আগে প্রয়োজন সুস্থ, সবল শারীরিক সক্ষমতা। ক্রমান্বয়ে তা পারদর্শিতায় রূপ নিতে দেরি হয় না। যা সমতাভিত্তিক সমাজ-বিনির্মাণের নির্ণায়ক। সম্প্রতি এক খবরে মেয়েদের আত্মরক্ষার প্রস্তুতির ওপর চমকপ্রদ ঘটনা নজরকাড়ার মতো, পরনির্ভরশীলতা, দুর্বলতা, আর কিছুটা অক্ষমতায় পিছিয়ে পড়া মেয়েরা নিজ উদ্যোগে তাদের সবল করার প্রত্যয়ে ব্রতি হয়েছে। এমন ঘটনা ঘটে চট্টগ্রামের আনোয়ারায়। সেখানকার মেয়েরা আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেদের শারীরিক সক্ষমতাকে প্রমাণ করতে এগিয়ে এসেছে।
সত্যি এক অসাধারণ কর্ম সাধনা। ‘সবলা’ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেনÑ নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার কেন নাহি দিবে অধিকারÑ হে বিধাতা, সেটার জন্য অনেক অপেক্ষার পালা সীমা অতিক্রম করেছে। কিন্তু সেটাও যখন হাতের নাগালে তাই যেন সই। সংখ্যায় কম হলেও সামনে আরও বাড়বে। অসাম্য বৈষম্যের বন্ধনজালে আবদ্ধ নারীরা চিরায়ত অপসংস্কারেও আকণ্ঠ নিমজ্জিত। এক সময় খেলাধুলায় তাদের অংশীদারিত্বও ছিল নগণ্য। যুগের হাওয়ায় তা ধুলায় মিশিয়ে দিয়ে নিজেকে যে মাত্রায় প্রমাণ করে যাচ্ছে সেটা নারী জাতির অবিস্মরণীয় বিজয়।
কর্মজীবী নারীরা এখন ক্ষুদ্র পরিবার সামলিয়ে বৃহত্তর সামাজিক আঙিনায় পেশাগত কর্মযোগকেও অপ্রতিরোধ্য করে তুলছে। ভীরু নারীরা আজ সময়ের দুরন্ত আহ্বানে দুঃসাহসিক হয়ে উঠতেও যেন মরিয়া। স্বাবলম্বী হওয়া থেকে আরম্ভ করে শারীরিক সক্ষমতাকে প্রমাণ করা সবই যেন অপার মহিমার সঙ্গে অসম পারদর্শিতাকেও দৃষ্টিনন্দন করে তুলছে।
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় নারীরা আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণের ওপর এক চমকপ্রদ ঘটনা সমসংখ্যককে নতুনভাবে উদ্ভাসিত করা। আপন দক্ষতা আর শক্তিময়তায় আনোয়ারা উপজেলায় বিভিন্ন ক্রীড়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পাশাপাশি ‘শাওলিন কুংফুং অ্যান্ড উন্ড একাডেমি’, ‘বাংলাদেশ টাইগার মার্শাল আর্ট’, ‘শাওলিন উন্ড ট্রেনিং সেন্টার’ নামে তিনটি নারী আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। কোনো কঠিন কাজের সামনে কাঁপন ওঠার মতো দুঃসময় নারীকে এখন আর সেভাবে তাড়া করে না।
তা ছাড়া জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শিশু সংস্থা ইউনিসেফের কার্যক্রমে শিশু-কিশোর সেলফ ডিফেন্স ক্লাব, মহিলা অধিদপ্তরের কিশোর-কিশোরী ক্লাবসহ আরও কিছু কার্যক্রমের মাধ্যমে আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণকে জোরালো করা হচ্ছে। আনোয়ারার এমন চমৎকার পরিবেশে ছেলেমেয়ে উভয়ই পাশাপাশি অবস্থান করে প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়াও সমতাভিত্তিক সুস্থ পরিবেশকে স্বাগত জানানো। ছেলেময়ের সমান অংশগ্রহণে পোশাক-পরিচ্ছেদেও কোনো বিভেদ নেই। এক রকম পোশাক পরে মানুষের মর্যাদায় যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে আধুনিক ও উদীয়মান প্রজন্ম তা আগামীর বাংলাদেশকে বৈষম্যহীনতার আদলে নতুন মোড়কে উন্মোচন তো করবেই।
এ ছাড়াও আছে এনজিও সংস্থার নানামাত্রিক প্রকল্প, যা ছেলেমেয়েকে সমান বিবেচনায় দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে নিয়ত সমতাভিত্তিক কর্মযোগ নিরন্তর করেই যাচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও সেলফ ডিফেন্সের প্রশিক্ষণ নিয়ে নারীরা পারদর্শী আর শারীরিক সক্ষমতায় নিজেদের তৈরি করে যাচ্ছে। আধুনিক ও প্রযুক্তির নতুন বাংলাদেশের নব অধ্যায়ের শুভ সূচনা তো বটেই। তবে মেয়েদের শাশ্বত কর্মযোগকেও সমানভাবে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। যেমন সেলাই, বিউটিশিয়ান হিসেবেও প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেদের স্বাবলম্বী করতেও মেয়েরা এগিয়ে থাকছে।
নারী প্রশিক্ষণ প্রার্থীদের আবেগ-উচ্ছ্বাসেরও কোনো ঘাটতি নেই। পরম আনন্দে, স্বইচ্ছায় উদ্যোগী হয়ে তারা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রে নিজেদের যাত্রাকে সাবলীল আর অবারিত করে যাচ্ছে। তাদের আলাপচারিতায় আরও প্রত্যক্ষ হয় ঘর থেকে বাইরে যেতে গেলে পিতা-মাতা-অভিভাবকরা দুশ্চিন্তায় ভোগেন। নির্বিঘেœ, নিরাপদে যাওয়া-আসা করা যাবে তো? পথে-প্রান্তরে কোনো বিপত্তির আশঙ্কা নেই তো? তাই নিজের নিরাপত্তায় শারীরিকভাবে সক্ষম হওয়াও জরুরি। সঙ্গত কারণে আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণও সময়ের ন্যায্যতা দাবি করে। তার ওপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়ার পথে বখাটে ছেলেদের উৎপীড়ন, উৎপাত বহু সময় ধরে ঘটে যাওয়া এক দুঃসহ ঘটনার পালাক্রম।
সেখানে নিজেদের সুরক্ষায় প্রতিপক্ষকে থামাতে আত্মশক্তির বিকল্প অন্য কিছু নয়। এটা শুধু চট্টগ্রামের আনোয়ারাতে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। বরং বাংলাদেশের শহর-গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন প্রান্তরে এমন কার্যক্রম সম্প্রসারিত করতে হবে। যাতে সারাদেশের মেয়েদের রাস্তাঘাটে কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে যেতে-আসতে কোনো বাধাবিপত্তির মুখোমুখি হলে প্রতিরোধ করার শক্তিও যেন অন্তর্নিহিত বোধে জিইয়ে থাকে।