শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২
প্রকাশিত: ২০২৫-০৬-২৮ ২০:০৭:০৩
টাঙ্গাইল দর্পণ অনলাইন ডেস্ক: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মহাসমাবেশ থেকে ১৬ দফা দাবি জানিয়েছে এবং একটি ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে দাবিগুলো তুলে ধরা হয়।
২৮ জুন, শনিবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলটির মহাসমাবেশে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন দলের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান।
১৬ দফা ঘোষণাপত্রের মধ্যে রাষ্ট্রীয় সংস্কার, বিচার ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক (পিআর) নির্বাচন গ্রহণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
সংবিধানের বিধি ও নির্দেশিকা নীতিগুলোর মধ্যে ‘আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন, সংসদের উভয় প্রস্তাবিত কক্ষে আনুপাতিক ভোটদান (পিআর) পদ্ধতি চালু এবং বৈষম্যহীন শোষণ নিপীড়ন ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে আগামী মাসে ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ভবিষ্যতের স্বৈরতন্ত্রকে রোধ করতে দলটি দ্রুত, মৌলিক সংস্কার, জনপ্রশাসন পুনর্গঠন, নির্বাচনে সমান সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য এবং ‘পতিত ফ্যাসিবাদের’ সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত কর্মকর্তাদের অপসারণের আহ্বান জানিয়েছে।
দুর্নীতির বিচার, পলাতকদের ফিরিয়ে আনা, পাচার করা অর্থ পুনরুদ্ধার এবং চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসবাদ এবং হত্যার বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও জোর দেওয়া হয়েছে ঘোষণাপত্রে।
ঘোষণাপত্রে ভারতের সঙ্গে সকল চুক্তি প্রকাশ এবং যেকোনো ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ চুক্তি বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে। এটি পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের আগে সকল স্তরের স্থানীয় নির্বাচন সম্পন্ন করার এবং একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এই ধরনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে।
চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি, চাঁদাবাজ, ঋণ খেলাপি এবং অপরাধীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে অযোগ্য ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছে দলটি। একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনী পরিবেশ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহার এবং ধর্ম ও রাষ্ট্রের প্রতি বিরূপ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যেরও আহ্বান জানিয়েছেন।
ইসলামী আন্দোলন সার্বভৌমত্ব রক্ষা, নাগরিকদের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা এবং টেকসই শান্তি ও অগ্রগতি নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচনসহ শাসনব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে ইসলামী মূল্যবোধ অনুশীলনের আহ্বান জানানো হয়েছে ঘোষণায়।
ঘুষ, দুর্নীতিসহ সকল প্রকার নাগরিক হয়রানি বন্ধ করতে হবে। কোনো নিরপরাধ ব্যক্তির বিরুদ্ধে শুধু রাজনৈতিক কারণে হয়রানিমূলক মামলা বন্ধ করতে হবে। হয়রানিমূলক সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। দেশের কোথাও কোনো রকম ‘মব’ সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া যাবে না। ‘মব’ সৃষ্টিকারীদের দমনে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ইসলাম ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিরোধী যেকোনো কার্যক্রমে দ্রুততম সময়ে আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে গণবিক্ষোভ পুঞ্জীভূত না হয়।
দেশবিরোধী ও ইসলামবিরোধী সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত মোকাবেলায় সাম্রাজ্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ ও আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
আগামী জাতীয় নির্বাচনে দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক ও ইসলামি শক্তির ইস্পাতকঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের সুরক্ষা, জনগণের জান-মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা বিধান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সুরক্ষা, সর্বত্র শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং কাঙ্ক্ষিত উন্নতি ও অগ্রগতির লক্ষ্যে রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ে ইসলামের সুমহান আলোকিত আদর্শের অনুশীলন করতে হবে।
এক নজরে ১৬ দফা:
১. সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাষ্ট্র পরিচালনার মূল নীতিরূপে পুনঃস্থাপন।
২. সংসদের উভয় কক্ষে সংখ্যানুপাতিক পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন।
৩. জুলাই সনদের ঘোষণা ও শোষণমুক্ত রাষ্ট্র বিনির্মাণে জাতীয় ঐকমত্য।
৪. ভবিষ্যৎ স্বৈরাচার ও দলীয় কর্তৃত্ববাদ রোধে মৌলিক রাষ্ট্র সংস্কার।
৫. সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রশাসনে ফ্যাসিবাদী প্রভাবমুক্ত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা।
৬. পতিত ফ্যাসিবাদের বিচার ও পালাতক অপরাধীদের ফিরিয়ে আনার কূটনৈতিক পদক্ষেপ।
৭. পাচার করা অর্থ উদ্ধার ও দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ।
৮. সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও খুনখারাবি রোধে প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা।
৯. ভারতের সঙ্গে করা সব চুক্তি প্রকাশ ও দেশবিরোধী চুক্তির বাতিল।
১০. জাতীয় নির্বাচনের আগে সব পর্যায়ে স্থানীয় নির্বাচন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিধান প্রণয়ন।
১১. দুর্নীতিবাজ, ঋণখেলাপি ও সন্ত্রাসীদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা।
১২. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পরিবেশ নিশ্চিত করা।
১৩. ঘুষ-দুর্নীতি ও রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা বন্ধ এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার।
১৪. ইসলাম ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ববিরোধী কর্মকাণ্ডে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ।
১৫. জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে দুর্নীতিবাজ ও চাঁদাবাজদের প্রতিহত করা।
১৬. রাষ্ট্রের সর্বস্তরে ইসলামের আলোকিত আদর্শ বাস্তবায়নের আহ্বান।