শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

Logo
Add Image

স্বাস্থ্য দর্পণ

সুপেয় পানির অভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে কালিহাতীর পাঁচ শতাধিক পরিবার

নিজস্ব প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বিলছায়া গ্রামে মাত্রাতিরিক্ত আয়রনযুক্ত পানির কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার। দীর্ঘদিনের সুপেয় পানি সমস্যার সমাধানে উপজেলা প্রশাসন ও জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে দীর্ঘদিন ধরে আয়রনযুক্ত পানি পানে এলাকাবাসীর স্বাস্থ্যে ইতোমধ্যে নানা বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। 


জানা যায়, টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার সল্লা ইউনিয়নের বিলছায়া গ্রামে পাঁচ শতাধিক পরিবারের বসবাস। প্রায় ৩০ বছর যাবত ওই গ্রামের মানুষ আয়রনযুক্ত পানি অর্থাৎ এক প্রকার বিষপান করে যাচ্ছে। প্রতিটি পরিবারের অগভীর নলকূপের পানি পান করেন। নলকূপের নিচে লালচে রঙের স্তর জমা হয়ে রয়েছে।  


সরেজমিনে স্থানীয়রা জানায়, প্রায় ৩০ বছর যাবত আয়রনযুক্ত পানি পান করে পরিবারের অনেকেই পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শুধুমাত্র বিশুদ্ধ পানির অভাবে ওই গ্রামের মানুষ প্রায় সারা বছরই নানা ধরনের চর্ম রোগে ভুগছে। চর্ম রোগ যেন তাদের নিত্যসঙ্গী। আয়রনযুক্ত পানি দীর্ঘদিন পান করায় ক্যান্সার সহ বিভিন্ন জটিল রোগের সৃষ্টি হওয়ার আতঙ্কের মধ্যেও ওই পানিই পান করতে বাধ্য হচ্ছে গ্রামবাসী। 


তারা জানায়, গ্রামের পরিবারগুলোর টিউবওয়েলের পানিতে আর্সেনিকের জীবাণু আছে কী-না তা তারা জানেন না। এ পর্যন্ত কেউ পরীক্ষা করতেও আসেনি। গ্রামের টিউবওয়েলের আয়রনযুক্ত পানির আর্সেনিক পরীক্ষা করে সুপেয় বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থার দাবি তাদের। 


স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রহিম, সুমন আহমেদ, মো. লতিফ সহ অনেকেই জানান, আয়রনমুক্ত নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে নিরুপায় হয়ে জেনে-শুনেই তাদেরকে প্রতিদিন ওই নিরব বিষপান করতে হচ্ছে। ওই গ্রামের নারী-পুরুষ ছাড়াও কোমলমতি শিশুরা জন্মের পর থেকেই আয়রনযুক্ত পানি পান করতে বাধ্য হচ্ছে। এলাকার পানিতে আয়রন ছাড়াও আর্সেনিক আছে কী-না না জেনে ছোটবেলা থেকে এ রকম পানি খেয়ে তারা বড় হয়েছেন।  


তারা জানায়, বিলছায়া গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে। অনেকেই পানি ফোটানোর জন্য ভালো ফিল্টার ব্যবহার করতে পারছে না। দারিদ্রতার কারণে অনেকেই পাতিল, ইট, পাথর ও বালু দিয়ে পানি ফুটানো ফিল্টার তৈরি করে নিচ্ছে। সে ফিল্টারও দু-একদিন যেতে না যেতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পুনরায় তাদেরকে আয়রনযুক্ত পানি খেতে হচ্ছে। 


গৃহবধূ আন্না খাতুন, সামিয়ারা আক্তার, রিনা সুলতানা সহ অনেকেই জানান- বিশুদ্ধ পানির অভাবে তাদের জীবনে শান্তি নেই। আয়রনযুক্ত পানির কারণে কাপড় ধুঁতে গেলে লালচে হয়ে থাকে। খাবারের প্লেট, জগ, গ্লাস লালচে হয়ে থাকে। দেখতে ভালো দেখায়না। যেকোনো পাত্রে ঘণ্টাখানেক পানি রেখে দিলে সে পাত্রের রঙ লালচে হয়ে ওঠে। লালচে পানি গরুর প্র-্রাবের মতো দেখায়। সে পানি পান করতে অরুচি হয়। 


ওই গ্রামের গৃহবধূদের কেউ কেউ জানায়, তাদের এ কষ্ট দীর্ঘদিনের। যুবতী অবস্থায় বিয়ে হয়ে বিলছায়া গ্রামে এসেছিলেন, এখন মাঝ বয়স। এতোদিনেও পানির কষ্ট দূর হলো না। তারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিশুদ্ধ পানির দাবি জানায়। 


সল্লা ইউনিয়নের বিলছায়া গ্রামের রুস্তম আলী জানান, তারা ৩০ বছরের অধিক সময় ধরে আয়রনযুক্ত পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। ওই গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবারের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু স্বচ্ছল পরিবার আয়রনমুক্ত নলকূপ ব্যবহার করছে। বাকি সবাই আয়রনযুক্ত পানি পান করছে। তিনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে ওই গ্রামে গভীর নলকূপ স্থাপন করে আয়রনমুক্ত বিশুদ্ধ সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।  

 
কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. খায়রুল ইসলাম জানান, বিলছায়া গ্রামের বাসিন্দাদের দীর্ঘদিন ধরে সুপেয় পানির সমস্যা রয়েছে- এটা এ পর্যন্ত তাকে কেউ জানায়নি বা কোনো অভিযোগও দেয়নি। দ্রুত ওই গ্রাম পরিদর্শন করে বিশুদ্ধ সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন। 


টাঙ্গাইলের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনোয়ারুল ইসলাম খান জানান, তিনি টাঙ্গাইলে নতুন যোগদান করেছেন। তিনি অতিমাত্রায় আয়রন থাকা বিলছায়া গ্রামটি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তিনি মনে করেন টাঙ্গাইলের পানিতে অন্য জেলার তুলনায় আয়রনের পরিমাণটা একটু বেশি রয়েছে। বিলছায়া গ্রামের পানিতে আর্সেনিক না থাকার সম্ভাবনা বেশি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
 

সর্বশেষ

Logo

সম্পাদক : আবু তাহের

© ২০১৪-২০২৫ টাঙ্গাইল দর্পণ, অনলাইন নিউজ পেপার ২৪/৭