শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২
টাঙ্গাইল দর্পণ অনলাইন ডেস্ক:
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং নির্যাতন প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যে ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের (ওএইচসিএইচআর) মিশন স্থাপনের প্রস্তাব চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ।
১০ জুলাই, ২০২৫ বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের ৩৩তম বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের ভিত্তিতে ‘জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়’-এর মিশন স্থাপন সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকের খসড়া চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করা হয়েছে।
এর আগে ২৯ জুন উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে খসড়াটির নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। সেই বৈঠক শেষে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানিয়েছিলেন, ওএইচসিএইচআরের একটি মিশন শাখা বাংলাদেশে খোলার লক্ষ্যে অনেক দিন ধরে আলোচনা চলছিল। সেই আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। সমঝোতা স্মারক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তা চূড়ান্ত করে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ফলকার টুর্কের কাছে পাঠানো হবে। তিনি অনুমোদন দিলে দ্রুতই এই চুক্তি স্বাক্ষরের পথ সুগম হবে বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন তিনি।
আসিফ নজরুল আরও জানান, ওএইচসিএইচআর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল। সেই প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের সঙ্গে সরকারের দীর্ঘদিনের আলোচনা এবং সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত অনুমোদনের মধ্য দিয়ে ঢাকায় এই কার্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নতুন মাত্রা পেল।
এদিকে, ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। বুধবার (৯ জুলাই) সিলেটে হেফাজতের সিলেট মহানগর শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা ও পরিচিতি সভায় দলটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক বলেন, “সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে কার্যালয় স্থাপনের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে আমরা গভীর উদ্বেগ ও আশঙ্কা প্রকাশ করছি। বাংলাদেশে এ কার্যালয় স্থাপন দেশের মানুষ মেনে নেবে না। মেনে নেবে না হেফাজতে ইসলামও।”
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ১৯৯৮ সালে জাতিসংঘের ‘নির্যাতন এবং অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক বা মর্যাদাহানিকর আচরণ বা শাস্তির বিরুদ্ধে কনভেনশন’-এ পক্ষভুক্ত হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানিয়েছে, এই কনভেনশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঐচ্ছিক প্রটোকলেও বাংলাদেশ সম্প্রতি যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। যার মূল উদ্দেশ্য হলো বিশ্বব্যাপী নির্যাতন এবং অমানবিক আচরণ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা আরও জোরদার করা।
ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি ও দায়বদ্ধতার বার্তা দিচ্ছে বলে অভিমত অনেকের। তবে অভ্যন্তরীণ মহলে এ নিয়ে বিরোধী মতও দেখা দিয়েছে, যা বিষয়টিকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলছে।