শনিবার ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২
প্রকাশিত: ২০২৫-১০-২০ ১৩:৩৮:৪১
টাঙ্গাইল দর্পণ অনলাইন ডেস্ক:
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জুবায়েদ হোসাইন খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এক প্রেমঘটিত দ্বন্দ্ব থেকেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক ছাত্রী বার্জিস শাবনাম বর্ষা জানিয়েছেন— তার সাবেক প্রেমিক মাহির রহমানের সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙার পর তিনি জুবায়েদকে পছন্দ করার কথা বলেছিলেন। এ কথা জানার পর ক্ষুব্ধ মাহির তার এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে খুনের পরিকল্পনা করেন এবং পুরান ঢাকার নূরবক্স লেনের বাসায় হত্যাকাণ্ডটি ঘটায়। তবে বর্ষা দাবী করেছেন, খুনের বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না।
ওসি বলেন, “বর্ষা ও মাহির ছোটবেলা থেকে পাশাপাশি বাড়িতে বড় হয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রায় ৯ বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিছুদিন আগে সম্পর্ক ভেঙে যায়। এরপর বর্ষা জানায়, সে তার টিউটর জুবায়েদকে পছন্দ করে। যদিও তাদের মধ্যে কোনো প্রেমের সম্পর্কের প্রমাণ আমরা পাইনি। এ কথায় রাগে-ক্ষোভে মাহির তার বন্ধু নাফিসকে নিয়ে জুবায়েদকে হত্যা করে থাকতে পারে বলে ধারণা করছি।”
জুবায়েদ গত এক বছর ধরে পুরান ঢাকার আরমানিটোলার ১৫, নূরবক্স লেনের ‘রৌশান ভিলা’ নামের বাসায় বর্ষাকে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান পড়াতেন।
১৯ অক্টোবর, ২০২৫ রোববার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে ওই বাসার তৃতীয় তলায় তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। সিঁড়ি থেকে তিনতলা পর্যন্ত রক্ত ছড়িয়ে ছিল, তিনতলায় উপুড় হয়ে পড়ে ছিল তার নিথর দেহ।
ঘটনার পর পুলিশ বর্ষা ও তার পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে রাত ১১টার দিকে বর্ষাকে হেফাজতে নেওয়া হয়। ওসি জানান, “জিজ্ঞাসাবাদের সময় বর্ষার মুখে কোনো অনুশোচনা বা আতঙ্ক দেখা যায়নি। তিনি শান্ত ও চিন্তামুক্ত ছিলেন। তদন্ত চলছে।”
নিহত জুবায়েদ কুমিল্লার বাসিন্দা। তিনি কুমিল্লা জেলা ছাত্র কল্যাণ পরিষদের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার সহপাঠী ও সহকর্মীরা হত্যার বিচার দাবীতে রাতে তাঁতীবাজার মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। তারা স্লোগান দেন— “আমার ভাই মর্গে, খুনি কেন বাইরে”, “বিচার চাই”।
অভিযোগ উঠেছে, খুনের ১৮ ঘণ্টা পরও বংশাল থানায় মামলা নেওয়া হয়নি। নিহতের বড় ভাই এনায়েত হোসেন সৈকত জানান, “আমরা বর্ষা, তার বাবা-মা, প্রেমিক মাহির ও তার বন্ধু নাফিসের নামে মামলা দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওসি এতজনের নামে মামলা না দিতে বলেন। তিনি বলেন, এতে মামলা দুর্বল হয়ে যাবে।”
ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে। তদন্তে কারা সরাসরি জড়িত তা নিশ্চিত হওয়ার পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জুবায়েদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে বলে সহপাঠীরা জানিয়েছেন।