রবিবার ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৪ ফাল্গুন ১৪৩১
প্রকাশিত: ২০২৪-১২-১১ ২৩:১১:৪৯
বধ্যমূমি, টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইল দর্পণ অনলাইন ডেস্ক: আজ ১১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল পাক হানাদার মুক্ত দিবস। বাংলাদেশের সর্বাধিক সম্মুখযুদ্ধ করতে হয় এই জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের। এই জেলার প্রায় প্রতিটি উপজেলায় গণকবরসহ নানা স্মৃতি রয়েছে। ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে বাংলার দামাল ছেলেরা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কবল থেকে টাঙ্গাইলকে মুক্ত করে। এদিন উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। যুদ্ধকালীন সময়ে টাঙ্গাইলের অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসিকতাপূর্ণ যুদ্ধের কাহিনী দেশের সীমানা পেড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছিল।
টাঙ্গাইলের কৃতি সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে গঠিত ও পরিচালিত ‘কাদেরিয়া বাহিনীর’ সখীপুরের বহেড়াতৈলে অবস্থান করে মহান মুক্তিযুদ্ধে অপরিসীম ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ২৬ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল ১৯৭১ পর্যন্ত টাঙ্গাইল ছিল স্বাধীন। কিন্তু হানাদার বাহিনী ৩ এপ্রিল ১৯৭১ টাঙ্গাইল শহর দখল করে নেয়।
টাঙ্গাইলের প্রতিরোধ যোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে পুরো বাহিনী টাঙ্গাইলের প্রত্যন্ত এলাকা সখীপুরের বহেড়াতলীতে চলে যান। এখানে কাদেরীয়া বাহিনী মুক্তিযুদ্ধে সাহসী ভূমিকা পালন করে। ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর প্রায় পাঁচ হাজার পাক সেনা এবং সাত হাজার রাজাকার আলবদর টাঙ্গাইলে অবস্থান করে।
এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর ৮ তারিখ পর্যন্ত টাঙ্গাইল, জামালপুর, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, সিরাজগঞ্জ ও পাবনায় বিশাল কাদেরিয়া বাহিনী যুদ্ধে করে পরাজিত করে পাক সেনাদের। এ সব যুদ্ধে প্রায় ৩ শতাধিক দেশপ্রেমিক অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হন। ৮ ডিসেম্বর পরিকল্পনা করা হয় টাঙ্গাইল আক্রমণের। মিত্র বাহিনীর সঙ্গে সংর্ঘষ হয় পাক সেনাদের পুংলি নামক স্থানে। যুদ্ধ কৌশলে হার মেনে প্রাণ ভয়ে পাক সেনারা টাঙ্গাইল ছেড়ে ঢাকার দিকে পালায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী চারদিক থেকে সাড়াশী আক্রমণ চালিয়ে পাক সেনাদের টাঙ্গাইল থেকে বিতাড়িত করতে সক্ষম হন বীর মুক্তিযোদ্ধারা ।
৯ আগস্ট ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে সিরাজকান্দি ঘাটে হানাদারদের সাতটি জাহাজ বিপুল গোলাবারুদসহ নোঙ্গর করে। ১১ আগস্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা কোম্পানি কমান্ডার হাবিবের নেতৃত্বে মর্টার শেল, রকেট শেল ছুড়ে জাহাজগুলোতে আক্রমণ করা হয়। পরে এ জাহাজগুলো বালুর চরে আটকা পরে। জাহাজ থেকে ২০ হাজার বাক্সে নানা ধরনের অস্ত্র ও গোলাবারুদ ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা এসব অস্ত্র নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে বিশাল অস্ত্রভান্ডার গড়ে তোলে।
১০ ডিসেম্বর সকালে জামালপুর ও ময়মনসিংহ থেকে হানাদারবাহিনীর বিশাল বহর টাঙ্গাইল হয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। বিকেলে টাঙ্গাইলের পৌলি এলাকায় ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ চালালে সেখানে শতাধিক হানাদার নিহত হয়। হানাদারদের পালানোর সব রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। ১১ ডিসেম্বর সকালে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রাজ্জাকসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধারা টাঙ্গাইল পুরোনো শহরে প্রবেশ করে। সন্ধ্যায় বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কাছে আত্মসমর্পন করার মধ্য দিয়ে টাঙ্গাইল মুক্ত হয়।
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল টাঙ্গাইল জেলার সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মোস্তাফা মিয়া জানান, টাঙ্গাইল হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে আজ বুধবার সকালে মুক্তিযোদ্ধাদের বর্ণাঢ্য র্যালী এবং বিকেলে আলোচনা সভা ও সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।