রবিবার ২৩ মার্চ ২০২৫, ৯ চৈত্র ১৪৩১
প্রকাশিত: ২০২৫-০২-২৮ ১৭:৫৫:৪০
ইসরাইলি কারাগারে ৪৫ বছর ধরে বন্দি থাকা সবচেয়ে ফিলিস্তিনি রাজনীতিবিদ নায়েল বারগুতিকে মুক্তি দিয়ে মিশরে পাঠানো হয়েছে। ইহুদিবাদী ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের মধ্যে বন্দি বিনিময় চুক্তির অংশ হিসেবে ৬৭ বছর বয়সী বারগুতিকে দেওয়া হয়েছে। তিনি বৃহস্পতিবার মিশরে পৌঁছেছেন।
বারগুতি ৪৫ বছর ইসরাইলি কারাগারে থেকেছেন। এর মধ্যে একটানা কেটেছে ৩৪ বছর। আর এর মধ্য দিয়ে বিশ্বে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় কারাগারে থাকা রাজনীতিবিদ হিসেবে ২০০৯ সালে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে তাঁর নাম উঠেছে।
বয়স আর দুঃসহ কারাজীবনে অনেকটা নাজুক হয়ে পড়া নায়েলকে গতকাল (বৃহস্পতিবার) মুক্তি দেয় ইসরাইল। তবে, দখলদার বাহিনী শর্ত দেয়, এবার মুক্তি পেয়ে বারগুতিকে ফিলিস্তিনের বাইরে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হবে। সেই শর্ত অনুযায়ী বাসে করে মিশরে গেছেন বারগুতি।
বারগুতি ফিলিস্তিনি বন্দিদের মধ্যে ‘আবু আল-নুর’ নামে পরিচিত। ২০১১ সালে ইসরাইলি সেনা ‘গিলাদ শালিত’ বন্দিবিনিময়ের অংশ হিসেবে বারগুতিকে মুক্ত করে এনেছিল হামাস। মুক্তির পর অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লার কাছে নিজ শহর কোবারে ফেরেন তিনি। তবে সেই ছাড়া পাওয়া খুব বেশি দিনের জন্য হয়নি। ২০১৪ সালের জুনে ইসরাইল বারগুতিকে আবারও গ্রেফতার করে। চুক্তির শর্ত ভাঙার অভিযোগে পুনর্বহাল করা হয় ইতোপূর্বে তাঁকে দেওয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। রামাল্লাহ'র উত্তরে একজন ইসরাইলি কর্মকর্তাকে হত্যার অভিযোগে তাকে ৩০ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল কিন্তু তার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আরও ১৮ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রামাল্লাহ'র কোবার গ্রামের বাসিন্দা বারগুতির বাবা ২০০৪ সালে মারা যান। ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ তার বাবার দাফন অনুষ্ঠানে যোগদানের অধিকারও থেকে তাকে বঞ্চিত করে। বারগুতির মা ফারহা ছিলেন একজন লেখিকা ও কবি। তিনিও তার কারাবন্দি ছেলের জন্য অপেক্ষা করতে করতে একসময় দুনিয়া ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমান।
নায়েল বারগুতি রামাল্লাহ'র উত্তরে ফিলিস্তিনি গ্রাম কোবারে ১৯৫৭ সালের ২৩ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। ফিলিস্তিনে ব্রিটিশ ও ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শামিল হওয়া ঐতিহ্যবাহী একটি পরিবারে তাঁর জন্ম।
বারগুতির বাবাও ব্রিটিশ বাহিনীর হাতে আটক হয়েছিলেন। আর চাচা ১৯৩৬ সালে ‘গ্রেট আরব রিভল্ট’–এর সময় নিহত হন।
তার ভাই ওমর এবং তার চাচাতো ভাই ফাখরিকেও ইসরাইল সরকার কর্তৃক গ্রেফতার করা হয়েছিল। ওমর ২৬ বছর কারাগারে কাটিয়েছিলেন এবং তাকে মুক্তি দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তাকে হয়রানি করা অব্যাহত ছিল।
বারগুতির একমাত্র বোন হানান যখন প্রথমবার গ্রেফতার হন, তখন তার বয়স ছিল ১২ বছর। এখন তিনি একজন দাদী।
বয়স যখন মাত্র ১০ বছর, সে সময়ই অর্থাৎ ১৯৬৭ সালে গাজা উপত্যকা, পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরের বাকি অংশের পাশাপাশি নিজ গ্রামে ইসরাইলি আগ্রাসনের সাক্ষী হয়েছিলেন বারগুতি। আধুনিককালের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দখলদারির ঘটনা এটি।
নায়েল বারগুতির বোন হানান বারগুতি বলেন, ইসরাইলের দখলদারির বিরুদ্ধে তাঁর ভাইয়ের প্রতিরোধ লড়াই শুরু হয় ওই অতটুকু বয়সেই। একেবারে ছোট থাকতে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে ইসরাইলি বাহিনীর দিকে পাথর ছুড়ে মারতেন বারগুতি। দেয়ালে–দেয়ালে লিখতেন দখলদারির বিরুদ্ধে স্লোগান।
১৯৭০–এর দশকের মাঝামাঝি বারগুতি তাঁর ভাই ওমর ও চাচাতো ভাই ফখরির সঙ্গে মিলে ইসরাইলি বাহিনীকে নিশানা বানাতে থাকেন। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৭৭ সালের ডিসেম্বরে বারগুতি প্রথম গ্রেফতার হন ও কয়েক মাস ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি থাকেন।
মুক্তি পাওয়ার কয়েক মাস পর বারগুতি যখন তাঁর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, সেই সময় আবার ইসরাইলি বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন এবং টানা ৩৪ বছর জেলে থাকেন। পরে এক ইসরাইলি কর্মকর্তাকে হত্যার অভিযোগে ভাই ও চাচাতো ভাইয়ের পাশাপাশি বারগুতিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।#