রবিবার ২৩ মার্চ ২০২৫, ৯ চৈত্র ১৪৩১
প্রকাশিত: ২০২৫-০২-২৭ ১৫:২৩:৫৮
প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধ পথে না গিয়ে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ থেকে গণতান্ত্রিক ও বাসযোগ্য দেশ গড়ে তুলতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
আজ (বৃহস্পতিবার) বিএনপির বর্ধিত সভায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান। চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে অবস্থান করায় সেখান থেকেই দলের বর্ধিত সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন তিনি।
খালেদা জিয়া বলেন, জনগণের প্রত্যাশা রাষ্ট্র মেরামতের ন্যূনতম সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন সম্পন্ন করতে আমার অবর্তমানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং আপনাদের সকলকে সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে নিরন্তন কাজ করে দলকে সুসংহত করেছেন।
দলের নেতাদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, 'আমি বিশ্বাস করি আপনারা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে আরও উজ্জীবিত হয়ে আগামী নির্বাচনে সাফল্যের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। এমন কোন কাজ করবেন না যাতে আপনাদের এতদিনকার সংগ্রাম আত্মত্যাগ বিফলে যায়।'
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে খালেদা জিয়া তার বক্তব্য শুরু করেন। তিনি বলেন, "আজ দীর্ঘ ছয় বছর পর আপনারা আবার একসাথে ফ্যাসিস্ট মুক্ত বাংলাদেশে একত্রিত হতে পেরেছেন। সেজন্য আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া আদায় করছি। দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী বিরোধী সংগ্রাম যারা শহীদ হয়েছেন এবং সম্প্রতি জুলাই আগস্টের ফ্যাসিবাদী শাসকদের নির্মম ভয়াবহ দমনীতির কারণে গণহত্যায় যারা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। যারা আহত হয়েছেন তাদের প্রতি জানাচ্ছি আন্তরিক সমবেদনা। আমি চিকিৎসার কারণে যুক্তরাজ্যে অবস্থান কর আমি সবসময় আপনাদের পাশেই আছি।"
তিনি বলেন, "দীর্ঘ ১৫ বছর গণতন্ত্র ও আমার মুক্তির জন্য আপনারা যে নিরন্তন সংগ্রাম করেছেন এবং আমাদের অসংখ্য সহকর্মী প্রাণ দিয়েছেন জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং প্রায় সোয়া লক্ষ মিথ্যা মামলায় জর্জরিত হয়েছে। এখনো আদালতের বারান্দায় ন্যায়বিচারের জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আপনাদের এ ত্যাগ শুধু দল নয় জাতি চিরকাল স্মরণ রাখবে। দেশ আজ এক সংকটময় সময় অতিক্রম করছে। আপনাদের এবং ছাত্রদের সমন্বিত আন্দোলনের ফলে ফ্যাসিবাদ বিদায় নিয়েছে।"
খালেদা জিয়া আরও বলেন, "ক্ষুদ্র সংকীর্ণতা ভুলে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে কাজ করতে হবে। এখনো ফ্যাসিস্টের দোসররা এবং বাংলাদেশের শত্রুরা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্জনকে নস্যাৎ করার জন্য গভীর চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। ইস্পাত কঠিন ঐক্যের মাধ্যমে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই চক্রান্তকে ব্যর্থ করে দিতে হবে। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য আমাদের সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। দলকে আন্দোলন, সংগ্রাম ও রাষ্ট্র পরিচালনায় নেতৃত্ব প্রদানে আরও ঐক্যবদ্ধ এবং সুসংতভাবে গড়ে তুলি।"
বর্ধিত সভায় ভার্চুয়ালি দেওয়া ভাষণে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, "জনগণ মনে করে, স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে, সেটি হবে সারা দেশে পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদের পুনর্বাসনের একটি প্রক্রিয়া, যা সরাসরি গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাবিরোধী। গণহত্যাকারী, টাকা পাচারকারী, দুর্নীতিবাজ, মাফিয়া চক্রকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার এই ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না।"
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, "সারা দেশে খুন, হত্যা, ধর্ষণ, চুরি, ছিনতাই ও রাহাজানি বেড়েই চলেছে। বাজার সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণহীন। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। সরকার যেখানে দেশের বাজার পরিস্থিতি কিংবা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জন করতে পারছে না, সেখানে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের নামে কেন দেশের পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করতে চাইছে, এটি জনগণের কাছে বোধগম্য নয়।"
তারেক রহমান বলেন, "স্বৈরাচার শাসক টাকা পাচার আর লুটপাট চালিয়ে দেশের অর্থনীতি ভঙ্গুর করে দিয়েছিল। অকার্যকর করে দেওয়া হয়েছিল দেশের সব সাংবিধানিক ও বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করে জনগণকে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাহীন করে দিয়ে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করে তুলেছিল। এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র সরকার এবং রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের লক্ষ্যে মাদার অব ডেমোক্রেসি বেগম খালেদা জিয়া ২০১৭ সালে ভিশন-২০৩০ দিয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালে বিএনপি ২৭ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে। পরবর্তীতে গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ের পর ঘোষণা করা হয় ৩১ দফা কর্মসূচি। এই ৩১ দফা নিয়ে বিএনপির উদ্যোগে সারা দেশে জনগণের সঙ্গে সংলাপ চলছে।"
তারেক রহমান বলেন, "রাষ্ট্র-সরকার-রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দল মেরামতের জন্য দফা ৩১টি হলেও এর চূড়ান্ত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো—একটি নিরাপদ, গণতান্ত্রিক ও মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ, একইসঙ্গে রাষ্ট্র ও সমাজে জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা। এটি নিশ্চিত করা না গেলে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি কোনটিই টেকসই হবে না।"
তারেক রহমান আরও বলেন, "রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার জন্য জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের কোনো বিকল্প নেই। রাষ্ট্র ও সমাজে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার পূর্বশর্ত হলো প্রতিটি নাগরিকের ভোট প্রয়োগের অধিকার বাস্তবায়ন। এজন্যই জনগণের ভোটে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ সরকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যেই জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানায় বিএনপি।"#