রবিবার ২৩ মার্চ ২০২৫, ৯ চৈত্র ১৪৩১

Logo
Logo

আন্তর্জাতিক

ইন্ডিয়া হেট ল্যাব’-এর নতুন প্রতিবেদন

ভারতে ২০২৪ সালে ধর্মীয় সংখ্যালঘুবিদ্বেষী বক্তব্য ৭৫% বেড়েছে

প্রকাশিত: ২০২৫-০২-১১ ২০:৪৩:৫০

News Image

ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘু বিশেষকরে মুসলমানদের প্রতি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ২০২৪ সালে উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ইন্ডিয়া হেট ল্যাব’-এর নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর ১,১৬৫টি বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৭৪ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি।

 

এসব বিদ্বেষমূলক ঘটনার ৮৯ দশমিক ৫ শতাংশই ঘটেছে দেশটির মুসলিমদের বিরুদ্ধে। হয় সরাসরি মুসলিমদের নিয়ে, নয়ত মুসলিম ও খ্রিস্টান মিলিয়েও বিদ্বেষমূলক কথা বলা হয়েছে। এছাড়া, প্রায় ১০ শতাংশ বিদ্বেষমূলক বক্তব্য খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে করা হয়েছে।

 

'ইন্ডিয়া হেট ল্যাব’ ওয়াশিংটন-ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব অর্গানাইজড হেট’-এর একটি প্রকল্প। তাদের প্রতিবেদনে ভারতে, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও এর মিত্রদের শাসিত রাজ্যগুলোতে ঘৃণা বক্তব্য বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

 

জাতিসংঘের মতে, যেকোনও ধরণের যোগাযোগ, বক্তৃতা, লেখা বা আচরণের মাধ্যমে যদি কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ধর্ম, জাতীয়তা, বর্ণ, বংশ, লিঙ্গ বা পরিচয়কে অবমাননা করা হয়, তবে তা ঘৃণামূলক বক্তব্য হিসেবে বিবেচিত হবে।

 

ইন্ডিয়া হেট ল্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে রেকর্ড করা বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের ৭৯ দশমিক ৯ শতাংশই (৯৩১টি) বিজেপি শাসিত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোতে ঘটেছে, যা খুবই উদ্বেগজনক।

 

অন্যদিকে, ভারতে বিরোধীদল শাসিত রাজ্যগুলোতে ২০২৪ সালে ঘৃণামূলক বক্তব্যের মাত্র ২০ শতাংশ ঘটতে দেখা গেছে। ভারতের উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও মধ্যপ্রদেশ রাজ্য বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের ঘটনা ঘটেছে সবচেয়ে বেশি। মোট ঘটনার প্রায় অর্ধেকই বিজেপি-শাসিত এই তিন রাজ্যে সংঘটিত হয়েছে।

 

প্রতিবেদন বলছে, বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের ঘটনাগুলোর ৩২ শতাংশই ঘটেছে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময়। এসব ঘটনার মধ্যে অন্তত ২৫৯টি ঘটনা সরাসরি সহিংসতা উস্কে দেওয়ার মতো ছিল বলে উল্লেখ করেছে ইন্ডিয়া হেট ল্যাব। সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণা বক্তব্যের প্রবণতা এখনও অব্যাহত রয়েছে। এ ধরনের বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের প্রবণতা খুবই উদ্বেগজনক। এসব ঘৃণাত্মক বক্তব্য এখন আর শুধু সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের হাতিয়ার নেই, বরং ভারতীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং নির্বাচনী প্রচারের অত্যাবশ্যক অংশ হয়ে উঠেছে।

 

প্রতিবেদনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দায়িত্বহীনতার কথা উল্লেখ করে তাদেরও সমালোচনা করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্লাটফর্মগুলো ঘৃণা বক্তব্য বাড়াতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ৯৯৫টি বিদ্বেষমূলক ভিডিও বক্তব্য প্রথমে ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম বা এক্স-এ শেয়ার বা লাইভ-স্ট্রিম করা হয়েছে। অথচ এই ভিডিও গুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নীতিমালা লঙ্ঘন করার পরও এসব ভিডিও সরানো হয়নি।

 

'সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব অর্গানাইজড হেট’-এর নির্বাহী পরিচালক বলেন, মোদী সরকারের ধর্মীয় পরিচয়ের রাজনীতিকরণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বিরোধী দলগুলোর নেতারাও মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের প্রকাশ্য নিন্দা করতে পিছিয়ে যাচ্ছেন।

 

ইন্ডিয়া হেট ল্যাবের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৩ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে দেশব্যাপী ঘৃণ্য বক্তব্যের ঘটনা ৭৪ দশমিক ৪ শতাংশ বাড়লেও কর্ণাটকে ২০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, ২০২৪ সালে ৩২ টি ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে, যা আগের বছর ৪০ টি ছিল। এর মধ্যে ছয়টি ঘটনা ঘটেছে ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারের সময়।

 

২০২৩ সালের মে মাসে কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত দক্ষিণের এই রাজ্যটি ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) শাসন করত। নতুন প্রশাসন এমন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছে, যা ঘৃণা বক্তব্যের ঘটনা হ্রাসে অবদান রেখেছে।#





সম্পাদক : আবু তাহের

© ২০১৪-২০২৫ টাঙ্গাইল দর্পণ, অনলাইন নিউজ পেপার ২৪/৭