শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

Logo
Add Image

জাতীয়

আইন বা সংবিধান পরিবর্তন করেই গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় -দায়রা'র অংশীজন সংলাপে বক্তারা

প্রকাশিত: ২০২৫-০৬-০১ ০০:১৮:০৭

News Image

খোন্দকার এরফান আলী বিপ্লব, বিশেষ প্রতিনিধি:

৩১মে বিকেলে ঢাকা ইনস্টিটিউট অফ রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালেটিকস (দায়রা) এর উদ্যোগে রাজধানীর পিআইবি মিলনায়তনে “বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের যাত্রা ও প্রাতিষ্ঠানিক অবক্ষয়: ভবিষ্যৎ কোন দিকে?” - শীর্ষক এক অংশীজন সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

 

সংলাপটিতে বাংলাদেশের চলমান গণতান্ত্রিক রুপান্তরের সঙ্গে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বল কাঠামো ব্যবস্থার সম্পর্ক তুলে ধরা হয়। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অস্থিরতা, দমনমূলক শাসন ও প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মের অবক্ষয়ের প্রেক্ষাপটে সংলাপ অনুষ্ঠানে বক্তারা প্রতিষ্ঠানগত দুর্বলতার মূল কারণ ও এর ফলাফল নিয়ে আলোচনা করেন। একইসাথে এ সকল প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা দ্বারা কীভাবে জবাবদিহিতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং প্রশাসনের নিরপেক্ষতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেসব বিষয়ও উঠে আসে।

 

অনুষ্ঠানের শুরুতে ধারণাপত্র পাঠ করেন লন্ডনের SOAS ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক ড. মুশতাক এইচ. খান। কীভাবে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে বাংলাদেশে স্বৈরাচার, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে গণতন্ত্র ও প্রতিষ্ঠানসমূহ ভেঙে পড়েছে, সে বিষয়ে তিনি আলোচনা করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, কেবল আইন বা সংবিধান পরিবর্তন করেই গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়, এর জন্য দরকার ক্ষমতার সুষম বণ্টন। তিনি আরও বলেন, ছাত্র আন্দোলন, তরুণ উদ্যোক্তা, ক্ষুদ্র ব্যবসা ও নাগরিক সমাজের মতো নতুন শক্তিকে সংগঠিত করে এমন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক কাঠামো গড়ে তুলতে হবে, যারা নিজেদের স্বার্থে নীতিগত পরিবর্তনের দাবি জানাবে এবং তা বাস্তবায়নেও ভূমিকা রাখবে।

অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত কেমন হওয়া উচিত? যেসব প্রতিষ্ঠান অতীতে জনস্বার্থ রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য নতুন সাংগঠনিক শক্তি কীভাবে গড়ে তোলা যায়? সংলাপটিতে এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন বক্তারা। 

 

স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় গণমানুষের সম্পৃক্ততা নিয়ে কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কাজী মারুফল হক। 

 

প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) -এর মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ মন্তব্য করেন, “আমরা যদি আর রক্তপাত না চাই তাহলে আমাদের প্রয়োজনীয় সংস্কার করতেই হবে, সংস্কার ব্যতীত আমাদের নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের স্বপ্ন কখনোই বাস্তবায়ন হবে না”। 

 

এ সময়ে বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী ও নারী সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরিন হক অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে নারী ও তৃণমূল মানুষের অধিকারের উপর জোর দেয়ার কথা বলেন। তিনি বলেন, “আমরা মানবিক রাষ্ট্র চাই। যেই রাষ্ট্র সবার কথা ভাববে”।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা জাতি হিসেবে আমাদের ঐতিহাসিক সংগ্রাম এবং অর্জনকে মনে রেখে আমাদের গণতন্ত্রের পথে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। 


গণতন্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান গুলো কিভাবে তৈরি হবে? এ প্রশ্ন তোলেন আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) -এর মহাসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। তিনি বলেন,  “আমাদের সংস্কারের উদ্যোগগুলো সব জায়গা থেকে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে, যা প্রচন্ড হতাশার”।


জনমানুষকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে ক্ষমতার বিন্যাসের ভারসাম্য আনয়ন প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলেন ব্রাক ইনস্টিটিউট অফ গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) -এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রুবাইয়া মোর্শেদ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) -এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জিনা তাসরিন বৃহত্তর ঐক্য প্রতিষ্ঠায় সকল প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার উপর জোর দেন। 


ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক এহতেশাম হক বলেন, “পাঁচই আগস্টের পরে বিপ্লব শেষ হয়ে যায় নি। বিপ্লব চলমান প্রক্রিয়া। গনতান্ত্রিক ধারা অব্যহত রাখতে বিপ্লব জারি রাখতে হবে”। 


সংলাপটি সঞ্চালনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন এর অধ্যাপক ড. আসিফ মোহাম্মদ শাহান। দায়রার পক্ষ থেকে সমাপনী বক্তব্য রাখেন পলিসি অ্যানালিস্ট মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই ধরনের সংলাপের গুরুত্ব তুলে ধরেন তিনি।


অংশীজন সংলাপটিতে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তানভীর সোবহান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সাদাব মুবতাসিম প্রান্তিক এবং দুদক সংস্কার কমিশনের ছাত্র প্রতিনিধি মুনিম মুবাসশির প্রমুখ।
 

Logo
Logo





Logo
Logo

সম্পাদক : আবু তাহের

© ২০১৪-২০২৫ টাঙ্গাইল দর্পণ, অনলাইন নিউজ পেপার ২৪/৭