রুয়েটে প্রফেসর পদে উন্নীত রাণীশংকৈলের আবু সাইদ
রুয়েটে প্রফেসর পদে উন্নীত রাণীশংকৈলের আবু সাইদ
তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের টেস্টিং ও কন্সাল্টেন্সি টিমের একজন বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসাবে কাজ করেন। এই বিশেষজ্ঞ টিম বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক মেগা প্রকল্পের মেটেরিয়ালস টেস্টিং এবং পরামর্শক হিসাবে কাজ করেন।
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিরাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) এর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ‘প্রফেসর’ পদে যোগদান করেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার কৃতি সন্তান ড. মোঃ আবু সাইদ (সুজন)।
তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের টেস্টিং ও কন্সাল্টেন্সি টিমের একজন বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসাবে কাজ করেন। এই বিশেষজ্ঞ টিম বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক মেগা প্রকল্পের মেটেরিয়ালস টেস্টিং এবং পরামর্শক হিসাবে কাজ করেন।
যার মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্প, রাজশাহী শাহমখদুম বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প, সৈয়দপুর বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প, বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক নির্মাণ প্রকল্প উল্লেখযোগ্য।
প্রফেসর ড. মোঃ আবু সাইদ (সুজন) ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামের মোঃ তোজাম্মুল হক ও মোছাঃ খায়রুন নেছা দম্পতির চার ছেলের মধ্যে তৃতীয়। এই গুনি দম্পতির ১ম সন্তান কলেজের শিক্ষক, ২য় সন্তান ব্যাংক কর্মকর্তা এবং চতুর্থ সন্তান সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) হিসাবে কর্মরত।
প্রফেসর ড. সাইদ দুর্লভপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তিনি ১৯৯৮ সালে নেকমরদ আলিমুদ্দীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০০০ সালে সৈয়দপুর ক্যান্টপাবলিক স্কুল ও কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে তিনি রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হন।
২০০৫ সালে কৃতিত্বের সাথে বিএসসি ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী সম্পন্ন করার পরে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ-এ লেকচারার হিসাবে যোগদান করেন। ২০০৬ সালে তিনি ২৭তম বিসিএস এ উত্তীর্ন হয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরে সহকারী প্রকৌশলী হিসাবে যোগদানের সুপারিশপ্রাপ্ত হন। কিন্তু শিক্ষকতা ও গবেষণার প্রতি অধিক আগ্রহের কারনে তিনি গণপূর্ত অধিদপ্তরে যোগদান না করে, সেই সময় রুয়েট এর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে লেকচারার হিসাবে যোগদান করেন।
গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রফেসর ড. সাইদ ২০০৮ সালে জয়েন্ট জাপান ওয়ার্ল্ডব্যাংক গ্রাজুয়েট স্কলারশিপ প্রোগ্রাম এর অধীনে জাপানের সাইতামা ইউনিভার্সিটিতে অধ্যায়ন শুরু করেন।
তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১০ সালে মাস্টার্স ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী কৃতিত্বের সাথে সম্পন্ন করে পূর্বের কর্মস্থল রুয়েটে যোগদান করেন। তিনি ২০১১ সালে পদোন্নতি পেয়ে একই বিভাগে এসিস্টেন্ট প্রফেসর পদে যোগদান করেন।
এরপর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সর্বোচ্চ ডিগ্রী (পিএইচডি) অর্জনের আশায় ২০১২ সালে আইপিআরএস স্কলারশিপ পেয়ে অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন ইউনিভার্সিটিতে গবেষণাকার্য শুরু করেন।
তাঁর পিএইচডি গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল “ÒDesign of Ballasted Railway Track Foundations using Numerical Modelling with Special Reference to High Speed Trains”। এই গবেষণার মাধ্যমে তিনি উচ্চ গতির ট্রেন চলাচলের জন্য রেলপথ তৈরির একটি নতুন ও উন্নত পদ্ধতি আবিস্কার করেন, যা বিশ্বের নামকরা কয়েকটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রফেসর ড. সাইদ ২০১৮ সালে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করে দেশে ফিরে শিক্ষকতা ও গবেষণা শুরু করেন। তিনি ২০১৯ সালে পদোন্নতি পেয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, রুয়েট-এ এসোসিয়েট প্রফেসর পদে এবং গত ১ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে আবার পদোন্নতি পেয়ে একই বিভাগে প্রফেসর পদে যোগদান করেন।
রুয়েট এর প্রাক্তন ছাত্র, বর্তমানে রাজশাহী ওয়াসা এর নির্বাহী প্রকৌশলী, ইঞ্জিনিয়ার মোঃ মাহবুবুর রাহমান বলেন, প্রফেসর ড. মোঃ আবু সাইদ স্যার একজন অত্যন্ত মেধাবী, অভিজ্ঞ ও জনপ্রিয় শিক্ষক। তিনি অনেক সুন্দরভাবে আমাদেরকে শ্রেণীকক্ষে পাঠদান দিতেন। আমি নিজেও যেহেতু ঠাকুরগাঁও এর সন্তান, স্যার এর খুব কাছাকাছি থাকার সুযোগ আমার হয়েছে। শ্রেণীকক্ষের বাইরেও তিনি সবসময় আমাকে পরামর্শ ও সাহস যুগিয়েছেন ভালো কাজ করার। তিনি এখনও আমার খুব কাছের পরামর্শদাতা।
প্রফেসর ড. মোঃ আবু সাইদ (সুজন) বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে তাঁর সঞ্চিত অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে চান। এছাড়া তিনি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পে পরামর্শক হিসাবে কাজ করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অবদান রাখতে চান।
তরুণদের উদ্দেশ্যে প্রফেসর ড. সাইদ বলেন, আমাদের নতুন প্রজন্ম অনেক মেধাবী। তাদেরকে নৈতিক ও কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করে সঠিক পথে চালাতে পারলে দেশ ও জাতি দ্রুত উন্নয়নের চরম শিখরে পৌছাতে পারবে। তিনি উচ্চশিক্ষা বিষয়ে যে কোন পরামর্শ ও সহযোগিতায় যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন এবং এলাকার দরিদ্র মেধাবি শিক্ষার্থীদের কল্যানে কাজ করতে দৃঢ় প্রত্যয়ী।
সফলতার এতদুর পথ অতিক্রম করতে যারা তাঁকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন, তাদের প্রত্যেকের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন এবং সকলের দোয়া কামনা করেন।
বাংলাদেশ জার্নাল/এএম
from BD-JOURNAL https://www.bd-journal.com/bangladesh/183936/রুয়েটে-প্রফেসর-পদে-উন্নীত-রাণীশংকৈলের-আবু-সাইদ