জয় বাংলা ব্যাট নিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে রকিবুলের নীরব যুদ্ধ

জয় বাংলা ব্যাট নিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে রকিবুলের নীরব যুদ্ধ

জয় বাংলা ব্যাট নিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে রকিবুলের নীরব যুদ্ধ

বাঙালির প্রাণের স্লোগান 'জয় বাংলা।' যা সরাসরি জড়িত দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে। তবে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর মাসখানেক আগেই জয় বাংলা স্লোগানে উজ্জীবিত হয়ে ক্রিকেট মাঠে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন রকিবুল হাসান, বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক

মো.ইমরান হোসেন

বাঙালির প্রাণের স্লোগান 'জয় বাংলা।' যা সরাসরি জড়িত দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে। তবে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর মাসখানেক আগেই জয় বাংলা স্লোগানে উজ্জীবিত হয়ে ক্রিকেট মাঠে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন রকিবুল হাসান, বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক। পুরো পাকিস্তান দলের বিপরীতে দাঁড়িয়ে নিজের ব্যাটে 'জয় বাংলা' স্টিকার লাগিয়ে নেমে পড়েছিলেন মাঠে। বিজয়ের পঞ্চাশ বছর পরে সেই ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে গেলে আজও অন্যরকম উদ্দীপনা চলে আসে রকিবুলের কণ্ঠে।

দিনটি ছিল ২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১। তৎকালীন ঢাকা স্টেডিয়ামে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম) আন্তর্জাতিক একাদশের বিপক্ষে অনানুষ্ঠানিক টেস্টে পাকিস্তান একাদশের হয়ে একমাত্র বাঙালি হিসেবে সুযোগ পান রকিবুল। ম্যাচের আগের দিন পাকিস্তানের সব খেলোয়াড়কে দেওয়া হয় 'গ্রে-নিকোলস' ব্যাট। সেই ব্যাটে ছিল পাকিস্তান পিপলস পার্টির নির্বাচনী প্রতীক তলোয়ার চিহ্ন বসানো। যা দেখে অন্যরকম বুদ্ধি খেলে যায় রকিবুলের মাথায়। তার কণ্ঠে, 'আমাকে দেওয়া হয়েছিল গান এন্ড মুর। বাকি সবার ছিল তলোয়ার বসানো গ্রে নিকলস। তখন আমার মনে হয় এটিই প্রতিবাদের সুযোগ। কারণ এটি করতে পারলে সারা বাংলাদেশের মানুষ জানবে, দেশের বাইরের মানুষও জানবে।'

ম্যাচটি খেলার জন্য খেলোয়াড়রা সবাই ছিলেন পূর্বানী হোটেলে। রাতে তাদের শুভকামনা জানাতে সেখানে যান শেখ মুজিবুর রহমানের ছেলে শেখ কামালসহ আরও অনেকে। তখনই বন্ধুবর শেখ কামালকে নিজের ইচ্ছার কথা জানান রকিবুল, পেয়ে যান সম্মতিও। ছাত্রনেতা মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনকে আওয়ামী লীগ অফিসে পাঠিয়ে আনানো হয় 'জয় বাংলা' স্টিকার। যা নিজ হাতে রকিবুলের ব্যাটে লাগিয়ে দেন শেখ কামাল। সেই ব্যাট নিয়েই পরদিন সকালে পাকিস্তানি ওপেনার আজমত রানাকে নিয়ে মাঠে নেমে যান রকিবুল।

জয় বাংলা স্টিকারকেই বেছে নেয়ার কারণ হিসেবে তিনি জানান, 'আমাদের জাতীয় মুক্তির সনদ হিসেবে 'জয় বাংলা' স্লোগান ততদিনে তুমুল জনপ্রিয়। ব্যাটে স্টিকার লাগানোর জন্য এর চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে!'

শুরুতে কেউ বুঝতে পারেননি ব্যাটে জয় বাংলা স্টিকার নিয়ে নেমেছেন রকিবুল। তবে ফটোগ্রাফাররা ছবি তুলতে গিয়ে বিষয়টি লক্ষ্য করলে এক কান, দু কান করে ছড়িয়ে পড়ে পুরো স্টেডিয়ামে। গ্যালারিতে উপস্থিত ১০-১২ হাজার দর্শক একযোগে শুরু করেন জয় বাংলা স্লোগান। নিজের উদ্দেশ্যে সফল হন রকিবুল। দেশের সংবাদমাধ্যম তো বটেই, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও ছাপা হয় রকিবুলের জয় বাংলা স্টিকার লাগানো ব্যাট নিয়ে খেলতে নামার ছবি। 

সেই ম্যাচের চতুর্থ দিন ছিল পহেলা মার্চ। সেদিনই সংসদে আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা ছিল। কিন্তু পাকিস্তানিদের টালবাহানায় ভেঙে যায় সংসদ, সারা দেশে শুরু হয় প্রতিবাদ মিছিল; যার আঁচ পড়ে ক্রিকেট মাঠেও, জ্বালিয়ে দেয়া হয় স্টেডিয়ামের প্যান্ডেল, অমীমাংসিত অবস্থায়ই পণ্ড হয়ে যায় সেই ম্যাচ। তারই ফাঁকে জনতার আন্দোলনে মিশে যান রকিবুল। পরে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে রকিবুলের পরিবার চলে যায় গোপালগঞ্জে নিজেদের বাড়িতে; আর তারা দুই ভাই বাবার সার্ভিস রিভলবার হাতিয়ে নিয়ে পাড়ি জমান ট্রেনিং ক্যাম্পে, দীক্ষা নেন স্বশস্ত্র যুদ্ধের। যদিও মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগেই পুরো পাকিস্তানের বিপক্ষে নীরব এক যুদ্ধই শুরু করেছিলেন রকিবুল।

বাংলাদেশ জার্নাল/আইএইচ/এমজে

© Bangladesh Journal


from BD-JOURNAL https://www.bd-journal.com/sports/185036/জয়-বাংলা-ব্যাট-নিয়ে-পাকিস্তানের-বিপক্ষে-রকিবুলের-নীরব-যুদ্ধ