রাজনাথের বক্তব্যে যতটা উদ্বিগ্ন তারচেয়ে বেশি অবাক হয়েছি: তৌহিদ হোসেন

রাজনাথের বক্তব্যে যতটা উদ্বিগ্ন তারচেয়ে বেশি অবাক হয়েছি: তৌহিদ হোসেন

তৌহিদ হোসেন
বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। আজ (রোববার) দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি যতটা উদ্বিগ্ন তার থেকে বেশি অবাক যে, উনি এ ধরনের কথা কেন বললেন। এটা আমি এটার কোনো কারণ খুঁজে পাই না।"

গত বৃহস্পতিবার উত্তর প্রদেশের লক্ষ্ণৌতে সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডারদের প্রথম যৌথ সম্মেলনে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের পাশাপাশি বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, "ভারত শান্তিপ্রিয় দেশ। শান্তি রক্ষার জন্য ভারতের সশস্ত্র বাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।"


ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, "আমি যতটা উদ্বিগ্ন তার থেকে বেশি অবাক যে উনি কেন এ কথা বললেন? আমি এটার কোনো কারণ খুঁজে পাই না। আমি কোনো অবস্থাতেই মনে করি না ভারতের সঙ্গে আমাদের যুদ্ধ-বিগ্রহ হওয়ার কোনো আশঙ্কা আছে। উনি এটা তার নিজের দেশের কনজামপশনের জন্য বলেছেন কি না সেটা আমাদের বুঝতে হবে। উনি যেভাবে বলেছেন বিটিং অ্যারাউন্ড দ্য বুশ অনেকটা। কারণ ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে তো ভারতের যুদ্ধের প্রস্তুতির কোনো প্রয়োজন দেখি না। হামাসের সঙ্গে যে সমস্যা হচ্ছে তাতে ভারতের কী সম্পর্ক। ইউক্রেন- হামাসের সঙ্গে বাংলাদেশ কী করে তুলনীয় হয়, এটাও আমার বোধগম্যতার বাইরে। আমি কোনো রিঅ্যাকশন দেখাতে চাই না। আমরা অবশ্যই দেখব উনি কেন এ কথা বলেছেন।" 

এ ধরনের বক্তব্য বাংলাদেশের জন্য হুমকি কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, "আমি এখনো মনে করি এটা উনি নিজস্ব অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে বলেছেন। কাজেই কোনো অনুমান করতে চাই না।"

এর আগে গতকাল (শনিবার) এক বিবৃতিতে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের বক্তব্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং উস্কানিমূলক বলে মন্তব্য করেন। একইসঙ্গে ভারতের এই অবস্থান নিয়ে গভীর উদ্বেগ ও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।  


মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, "ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। এটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বিষয়। কিন্তু তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন, ইসরাইল-হামাসের পাশাপাশি বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের কথা বলেছেন। যা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। বাংলাদেশে কোনো যুদ্ধ পরিস্থিতি নেই। বরং বাংলাদেশ অতি সমপ্রতি দেশের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটিয়ে গত ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে স্বস্তিতে আছে। রাজনাথ সিংয়ের রাশিয়া, ইউক্রেন, ইসরাইল ও হামাসের সঙ্গে সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করা দুরভিসন্ধিমূলক।"

তিনি বলেন, "প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতের কাছ থেকে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রত্যাশা করি। এমন কোনো মন্তব্য ভারতের কাছ থেকে আসা উচিত নয়, যা দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।"

বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচার সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর দাবি জানিয়ে মান্না বলেন, "আমরা অন্য সব রাষ্ট্রের মতো প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই। কিন্তু এই বন্ধুত্বে হতে হবে ন্যায্যতার ভিত্তিতে এবং দুইদেশের জনগণের প্রত্যাশাকে সম্মান জানিয়ে। অন্যথায় শেখ হাসিনার শাসন পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ কূটনৈতিকভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে এবং ভারতের মনে রাখা উচিত সেই সক্ষমতা আমাদের আছে।" সূত্র : পার্সটুডে