গোপালগঞ্জে বৃদ্ধি পাচ্ছে লাভজনক কন্দাল ফসলের আবাদ

গোপালগঞ্জে বৃদ্ধি পাচ্ছে লাভজনক কন্দাল ফসলের আবাদ

গোল আলু, মিষ্টি আলু, পানি কচু, লতি কচু, ওলকচু, মুখিকচু, গাছ আলু কন্দাল জাতীয় ফসল। কন্দাল ফসল চাষবাদ খুবই লাভজনক। এ কারণে প্রতিবছর সদর উপজেলায় কন্দাল ফসলের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এ ফসল আবাদে কীটনাশক তেমন একটা ব্যবহার করা হয় না। মানব দেহের জন্য এ ফসল নিরাপদ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজ আক্তার এ তথ্য জানিয়েছেন।

ওই কর্মকর্তা বলেন, ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ৯০ হেক্টরে গোলা আলু, ১১ হেক্টরে মিষ্টি আলু, ৯২ হেক্টরে  পানি কচু ও লতি কচু, ০২ হেক্টরে মাদ্রাজী ওল কচু, ০৮ হেক্টরে বিলাসী মুখিকচু, ৩ হেক্টরে স্থানীয় জাতের গাছ আলুর আবাদ হয়েছে।

তিনি  বলেন, গোল আলু হেক্টরে ২২.৬৯ মেটিক টন ফলন দিয়েছে। ৯০ হেক্টরে এ আলু ২ হাজার ৪২ টন ১০ কেজি ফলন দিয়েছিলো। ১ হেক্টরে উৎপাদিত আলু বিক্রি নেমেছে ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৮০০ টাকায়। হেক্টর প্রতি ৩ লাখ ৩ হাজার ৮০০ টাকা আলু উৎপাদন খরচ হয়েছে। খরচ বাদে এ আলু আবাদে কৃষকের হেক্টর প্রতি লাভ হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। মিষ্টি আলু হেক্টরে ২৯ টন ৭৫ কেজি ফলেছে। সে হিসেবে ১১ হেক্টরে এ আলু ৩২৭ টন ২৫ কেজি ফলন দিয়েছে। প্রতি হেক্টরে মিষ্টি আলুর বিক্রি নেমেছে ৬ লাখ ৫৪ হাজার ৫০০ টাকা। আবাদে খরচ হয়েছে ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৫০০ টাকা টাকা। খরচ বাদে কৃষকের হেক্টরে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। পানিকচু ও লতিকচু হেক্টরে ৪২ টন ২৫ কেজি ফলন দিয়েছে। ৯২ হেক্টরে এ কচু ৩ হাজার ৮৮৭ টন ফলেছে। 

এক হেক্টরের উৎপাদিত কচু ১০ লাখ ৫৬ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কচু উৎপাদনে ব্যয় হয়েছে ৮ লাখ ৫৬ হাজার ২০০ টাকা।  খরচ বাদে হেক্টরে লাভ হয়েছে ২ লাখ টাকা। ওলকচু প্রতি হেক্টরে ৩৫ টন ২ কেজি ফলন দিয়েছে। সেই হিসাবে ২ হেক্টরে ওলকচু ফলেছে ৭০ টন ৪০ কেজি । ১ হেক্টরে উৎপাদিত ওলকচু বিক্রি হয়েছে ১১ লাখ ২৬ হাজার ৪০০ টাকা। উৎপাদন খরচ ৯ লাখ ১৬ হাজার ৪০০ টাকা বাদে ১ হেক্টরে উৎপাদিত ওলকচুতে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা লাভ করেছেন কৃষক। মুখিকচু হেক্টরে ২২ টন ফলন দিয়েছে। ৮ হেক্টরে এ কচু ফলেছে ১৭৬ টন। হেক্টর প্রতি  এ কচু চাষে ব্যয় হয়েছে ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা। বিক্রি নেমেছে ৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা। খরচ বাদে হেক্টর প্রতি লাভ হয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। গাছ আলু প্রতি হেক্টরে  ফলন দিয়েছে ২০ মেট্রিক টন। ৩ হেক্টরে এ আলু ৬০ টন ফলন দিয়েছে। ১ হেক্টরে উৎপাদিত এ আলু বিক্রি নেমেছে ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা। খরচ বাদে  লাভ হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

মাফরোজ আক্তার বলেন, কন্দাল জাতীয় ফসলে প্রচুর পরিমাণ খনিজ ও ভিটামিন উপাদান রয়েছে। এ ফসলে কোন বিষ নেই। এ ফসল মানব দেহের জন্য নিরাপদ ও উপকারী। প্রতি বছরই এ উপজেলায় কন্দাল ফসলের আবাদ বাড়ছে। কন্দাল ফসল আবাদ করে কৃষক প্রচুর আয় করছেন।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরা গ্রামের কৃষক আব্দুল হাকিম বলেন, কন্দাল জাতীয় ফসল আবাদে সার ও কীটনাশকের ব্যবহার খুবই কম। এ ফসল প্রচুর পরিমাণে ফলন দেয়। অন্য যেকোন ফসলের তুলনায় কন্দাল ফসল আবাদে বেশি লাভ হয়। তাই লাভের টাকা ঘরে তুলতে আগামীতে এ জাতীয় ফসলের আবাদ আমি আরো বৃদ্ধি করছি। আমার দেখাদেখি অনেকেই পানিকচুও লতিকচু, মুখিকচু ও ওলকচুর আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।