লালমনিরহাটে জাপার সব প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত

লালমনিরহাটে জাপার সব প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত

লালমনিরহাটে জাপার সব প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত

গত ২৮ নভেম্বর কালীগঞ্জ উপজেলায় ৫টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন করে জাপার প্রার্থীদের একজন ৪ অংকের ঘরে পৌঁছাতে পারলেও ৪ জনেই পারেনি। তাঁদের এমন ফলাফলে দলের মাঠপর্যায়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।

বাংলাদেশ

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ৮ টি ইউনিয়নে লাঙ্গল প্রতীকে ৫টিতে নির্বাচন করে। এতে ৫ চেয়ারম্যান প্রার্থী মোট ভোট পেয়েছেন ২৪১২। ফলে এক সময়ের দলটির সেই দুর্গে জামানত হারিয়েছেন সকল প্রার্থীরা।

গত ২৮ নভেম্বর কালীগঞ্জ উপজেলায় ৫টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন করে জাপার প্রার্থীদের একজন ৪ অংকের ঘরে পৌঁছাতে পারলেও ৪ জনেই পারেনি। তাঁদের এমন ফলাফলে দলের মাঠপর্যায়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।

তারা অভিযোগ করেন, নামেই ‘জাতীয় পার্টি’ কিন্তু কাজে ছিল না তারা। জেলার নেতারা নির্বাচনী প্রচারণায় আসেননি। কিন্তু সরকারি দলের নেতারা মাঠপর্যায়ে প্রচারণায় নেমেছিলেন। দলের এমনিতেই নাজুক অবস্থা। সেই সঙ্গে উপযুক্ত প্রার্থী মনোনয়ন না দেওয়া নির্বাচনে দলের সকল প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিস ও জাপা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মদাতী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে জাতীয় পার্টির দলীয় প্রতীক লাঙ্গল নিয়ে নির্বাচন করে দলটির ইউনিয়ন আহবায়ক মোঃ রফিকুল ইসলাম ভোট পেয়েছেন মাত্র ৮৭ টি। দলগ্রাম ইউনিয়নে নির্বাচন করেন ঐ ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সভাপতি মোঃ জাহিদ হাসান ভোট পেয়েছেন মাত্র ১৮০ টি। চলবলা ইউনিয়ন নির্বাচন করেন ইউনিয়ন জাপার আহবায়ক মোঃ আব্দুল আলিম ভোট পেয়েছেন মাত্র ১২৩ টি। কাকিনা ইউনিয়নে জাপার প্রার্থী ইউনিয়ন জাপার সদস্য মোঃ হায়দার আলী ভোট পেয়েছেন ৭৯৩ এবং তুষভান্ডার ইউনিয়ন নির্বাচন করেছেন দলটির উপজেলা কমিটির সদস্য মাসুদ রানা। তিনিই একমাত্র ৪ অংকের ঘরে গিয়ে ভোট পেয়েছেন মাত্র ১২২৪।

জাপার এমন ভরাডুবিতে রাজনৈতিক মহলের অনেকেই মনে করেন, দীর্ঘদিন ধরে দলটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তহীনতা, মাঠ পর্যায়ে ঘর না গুছিয়ে হঠাৎ নির্বাচনে আসায় এমন ভরাডুবি হয়েছে জাতীয় পার্টির। এ ছাড়া দলটিকে আর কেউ বিশ্বাস করতে চায় না বলে নির্বাচনে এখন একের পর এক দলের পরাজয় ঘটছে।

নাম প্রকাশে জাপার স্থানীয় এক নেতা তৃণমূলের এই নির্বাচনে দলের ভরাডুবির কারণ হিসেবে মনে করেন, এখানকার জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতারা কর্মীদের খোঁজখবরও রাখেন না। যারা উপজেলায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা বিভিন্ন কারণে অর্থনৈতিক সংকটে আছেন। এসব কারণেই দিন দিন দলটির জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে। এখন প্রায় তলানিতে এসে পরেছে।

এলাকাবাসী জানায়, একসময় যেকোনো নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর লাঙ্গল মার্কা থাকলেই ওই প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়লাভ করতেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার নির্বাচন, পৌরসভা, উপজেলাসহ সব ধরনের নির্বাচনে চেয়ারম্যান, সদস্য জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছাড়া আর কারও জয়ী হওয়ার তেমন সুযোগ ছিল না। এ কারণে দলের চেয়ারম্যান এরশাদ দম্ভ করে বলতেন তার দল থেকে কলাগাছকে প্রার্থী করা হলেও সে জয়ী হবে। কিন্তু সে অবস্থা এখন আর নেই।

কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউপি নির্বাচনে জাতীয় পার্টির পরাজিত প্রার্থী মাসুদ রানা বলেন, দলের এমন নাজুক অবস্থায় আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। আমাদের পরাজয় হলেও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে আমরা দলের কর্মীদের কাছে পেয়েছি। জেলা পর্যায়ে দলের পক্ষ থেকে যদি এই নির্বাচনে কিছুটা ভূমিকা নেওয়া হতো তাহলে আমরা ভালো কিছু করতে পারতাম। আর একটি কথা হলো এই ইউনিয়নটা হলো  সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এর নিজ ইউনিয়ন, এখনে টিকে থাকাটা খুব কঠিন আর জাতীয় পার্টির যে অবস্থা। বর্তমান পাবলিক চায় টাকা । টাকা যেখানে পাবলিক সেখানে। পাটির চেয়ারম্যানকে বলি আপনি আপনার দলের কর্মীদের উপর নজর দেন তাহলেই সম্ভব, এছাড়া আমাদের নির্বাচন করা সম্ভব নয়।

কালীগঞ্জ উপজেলা জাপার সভাপতি শাহ সুলতানা নাসিরুদ্দিন আহম্মেদ বলেন, আওয়ামিলীগ ক্ষমতায় থাকার কারণে বিভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নিয়ে কারিশমা করেছে আর ৩১ বছর ধরে জাপা ক্ষমতার বাহিরে। দলে নেতৃত্বের সংকট আছে। আমরা আমাদের উপজেলায় দলের প্রার্থীদের জয় নিশ্চিত করতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। দলে এখন আর কোনো কোন্দল নেই। দল আরো এগিয়ে যাবে। দুর্গ ফিরে পেতে আর বেশি সময় লাগবে না।

এই উপজেলার ৮ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামিলীগ প্রার্থীরা ৩ টি, স্বতন্ত্র (বিএনপি) প্রার্থীরা ২ টি ও স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থীরা ২ টি ইউপিতে জয়ী হয়েছেন। বাকি ১ টিতে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র (বিএনপি) প্রার্থী সমান ভোট পাওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী দুই প্রার্থীর মধ্যে আবারও ভোট হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এএম

© Bangladesh Journal


from BD-JOURNAL https://www.bd-journal.com/bangladesh/183939/লালমনিরহাটে-জাপার-সব-প্রার্থীর-জামানত-বাজেয়াপ্ত