জবি মাদকাসক্তদের অভয়াশ্রম, অপ্রীতিকর অবস্থায় শিক্ষার্থীরা

জবি মাদকাসক্তদের অভয়াশ্রম, অপ্রীতিকর অবস্থায় শিক্ষার্থীরা

জবি মাদকাসক্তদের অভয়াশ্রম, অপ্রীতিকর অবস্থায় শিক্ষার্থীরা

অনুপম মল্লিক আদিত্য, জবি প্রতিনিধি

আয়তনে ছোট হলেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ভেতরে রয়েছে অসংখ্য মাদক সেবনের স্পট। সন্ধ্যার পর পরই এসব স্পটে শুরু হয় মাদকসেবিদের আনাগোনা। প্রশাসন এসব বিষয়ে অবগত থাকলেও নেওয়া হচ্ছেনা কোনো ধরণের ব্যবস্থা। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হয়ে উঠেছে মাদকাসক্তদের ‘অভয়াশ্রম’।

সরেজমিনে বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, প্রায় ২০টির অধিক স্থানে বসে মাদকের আসর। তার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ ভবনের নিচের গ্যারেজে, অডিটোরিয়ামের পেছনে, মুক্ত মঞ্চের পাশে, অগ্রণী ব্যাংকের পেছনে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের পেছনে, ভাষা শহীদ রফিক ভবনের ছাদের ওপর, রফিক ভবনের পূর্ব পাশে, ভিসি ভবনের পেছনে, পাটুয়াটুলী গেট, দ্বিতীয় গেটের সামনে, পোগোজ স্কুলসহ বিজ্ঞান অনুষদের সামনে বাস রাখার জায়গায় গানের আসর বসে। 

অভিযোগ রয়েছে একদল শিক্ষার্থীর গানের আসরের মাধ্যমে চলে হরেক রকমের মাদক ও গাঁজার সেবন। ক্লাসের সময়গুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতল বাসগুলোতেও চলে গাঁজা খাওয়ার জমজমাট আসর। 

জানা যায়, এসব মাদকের জোগানদাতা পুরান ঢাকা ও এর আশেপাশের কিছু মাদক-ব্যবসায়ী। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তাদের রেগুলার কাস্টমারদের এসকল মাদকের সাপ্লাই দিয়ে থাকেন। মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মাদক সেবী শিক্ষার্থীদের মধ্যস্ততা করে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মাদক-ব্যবসায়ীর পুরোনো কাস্টমার। ফলে অনেকেই জড়িয়ে পড়ছে এসব ব্যবসায়। তাঁতীবাজার, কলতাবাজার, লক্ষ্মীবাজার, মুরগীটোলা মোড়, সদরঘাটসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে তারা জোগাড় করেন এসকল মাদকদ্রব্য।

বাংলাদেশ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রাপুরের সূত্র অনুযায়ী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মাদকসেবীদের বেশির ভাগই শিক্ষার্থী এবং তাদের অধিকাংশই ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত। এসব রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় তারা মাদক নেওয়ার মতো অপকর্ম প্রকাশ্যেই করে বেড়াচ্ছে।

মাদক সেবন ছাড়াও এসব অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গায় অধিকাংশ সময় শিক্ষার্থীদের অপ্রীতিকর অবস্থায় দেখা যায় বলে অভিযোগ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা ও দায়িত্বরত নিরাপত্তা কর্মীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিরাপত্তা কর্মী বাংলাদেশ জার্নালের প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের চোখে প্রায়ই এসব অশ্লীলতা চোখে পড়ে। দেখা যায় তাদের একজায়গা থেকে সরিয়ে দিলে তারা ক্যাম্পাসের অন্য অন্ধকার ও নিরব জায়গায় গিয়ে তাদের অশ্লীলতা চালু রাখে।

ফারজানা নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা নিয়মিত রিডিং রুমে পড়াশোনার জন্য আসি। পড়াশোনার ফাঁকে আমরা বান্ধবীরা যখন কলা ভবনের দিকে হাটাহাটি করি তখন দেখা যায় একজনের কোলে আরেকজন বিছানা পেতে নিয়েছে। ল্যাম্প পোস্টের আলো না থাকায় অন্ধকার এ জায়গায় চলে অনৈতিক কর্মকাণ্ড। আবার মাঝে মধ্যে মাদকসেবিদের দেখলে আমরা নিজেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ঐদিকে চলাফেরা করতে আতঙ্কে থাকি।

ক্যাম্পাসে মাদক গ্রহণ ও শিক্ষার্থীদের অপ্রীতিকর অবস্থা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোস্তফা কামাল বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আমরা গতকাল একটা অভিযান চালিয়েছিলাম। এরকম অভিযান চলমান থাকবে। কোন শিক্ষার্থী এরকম কাজে সংশ্লিষ্ট থাকলে তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সোপর্দ করা হবে। আর অপ্রীতিকর অবস্থায়ও যাদের পাওয়া যাবে তাদের বিষয়েও আইনানুগ ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে আমাদের কোনো তথ্য দেয়া হয়নি, তবে আমরা অনেক অভিযোগ পেয়েছি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি এবং তারা আমাকে আশ্বস্থ করেছেন যে তারা প্রক্টরিয়াল বডির মাধ্যমে এসব নির্মূল করবেন এবং প্রয়োজনে আমাদের ডাকবেন। আর সেখানে আমাদের দায়িত্বরত অফিসাররা অভিযোগ সাপেক্ষে অভিযান অব্যাহত রাখবেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এএম

© Bangladesh Journal


from BD-JOURNAL https://www.bd-journal.com/education/181193/জবি-মাদকাসক্তদের-অভয়াশ্রম-অপ্রীতিকর-অবস্থায়-শিক্ষার্থীরা