নির্মাণকাজে অনিয়ম, শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

নির্মাণকাজে অনিয়ম, শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

নির্মাণকাজে অনিয়ম, শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে ১০ তলা একাডেমিক ভবনের নির্মাণ কাজ ১৮ মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও  মেয়াদের নির্মাণ কাজ ৩০ মাস পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি। মাত্র ৩০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নিম্নমানের কাজের অভিযোগও রয়েছে। এর মধ্যে নিরাপত্তা বলয় না থাকায় নির্মাণ কাজের রড ছুটে গিয়ে এক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন। 

রোববার এ ঘটনার পর কলেজে নির্মাণ কাজ বন্ধ করার পর সোমবার বেলা ১১টায় কলেজের প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

রোববার বেলা ১টায় পরীক্ষা শেষে কলেজ থেকে বের হচ্ছিলেন মাষ্টার্সর ছাত্র নাছিম আহমেদ। নির্মানাধীন ১০ তলা একাডেমিক ভবনের নির্মাণ কাজের রড ছুটে গিয়ে পিঠে গুরুতর আঘাত পান তিনি। দ্রুত তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনার পর নির্মাণ কাজের নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রশ্ন সামনে চলে আসে।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ২০১৯ সালের মে মাসে কাজ শুরু হয়, ১৮ মাস মেয়াদ থাকলেও ৩০ মাস পেরিয়ে গেছে এখনো মাত্র ৩ তলা পর্যন্ত ছাদ ঢালাই হয়েছে। নির্মাণাধীন এ ভবনের পাশ দিয়ে গেলেই নির্মাণসামগ্রীর বর্জ্য গায়ে পড়ে। নাছিমের মতো যে কোন সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। মাথায় লাগলে মৃত্যুও হতে পারতো।  শিক্ষার্থীরা হুশিয়ার করে বলেন, নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে ঠিকমতো কাজ না করলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। 

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মো. স্বপন হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলম লিমন, সারারণ ছাত্র রাজু আহমেদ, রনক হোসেনসহ অনেকেই। 

নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিলে আর কাজ করতে দেয়া হবে না বলে জানান কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক আনসার হোসেন। 

তিনি বলেন, এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা রিপোর্ট দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এন হোসেন ও শামীম নামের দুই ঠিকদার জয়েন ভেনচারে এই ১০ তলা ভবন নির্মাণের কাজ পায়। ২০১৯ সালের ২০ মে তারা কার্যাদেশ পান। দরপত্র মূল্য ধরা হয় ১২ কোটি ৪৫ লাখ টাকার ওপরে। ১৮ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। 

ঠিকাদার এসএম শামীম বলেন, প্রথমে ভবনের জন্য রাস্তার উল্টোপাশের জায়গা নির্ধারণ করা হয়। পরে পরিবর্তন করে সয়েল টেস্ট করাসহ নানা কারণে কাজ শুরু করতেই ৮ মাস লেগে যায়। তাছাড়াও করোনার কারণ ও আমার অন্য কাজ চলায় এই বিলম্ব হয়েছে। বড় কোন বিপর্যয় না হলে আগামী ১ বছরের মধ্যেই কাজ শেষ করতে পারবো।

রড পড়ে দুর্ঘটনার ব্যাপারে ঠিকাদার শামীম বলেন, যে ছাত্র আহত হয়েছে তিনি আমার আত্মীয়। তার সঙ্গে সমঝোতা করে নিয়েছি। তিনি বলেন, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়ার অনুমোদন দেয়া হয়েছে, এখন আর কোন সমস্যা হবে না। আর নিম্নমানের কাজের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।  শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী সাহেব আলী বলেন, অন্য কাজের কারণে দেরি করায় ঠিকাদার নিজেই এখন বিপাকে পড়েছেন। রডসহ সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে। এখন লোকসান দিয়েই কাজ করতে হচ্ছে। তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেই আগামী দেড় বছরের মধ্যে ভবন নির্মাণ শেষ করা যাবে- বলেন তিনি। 

একদিকে কলেজ ক্যাম্পাস অন্য দিকে সড়ক এর মধ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা না রেখেই এই ১০ তলা ভবনের নির্মাণ কাজ চলছিল। এ ব্যাপারে সহকারী প্রকৌশলী সাহেব আলী বলেন, কেন্দ্র থেকে এভাবেই সিডিউল করা হয়েছে। তারপরও আমরা নিরাপত্তা বলয় তৈরির জন্য ঠিকাদারকে বলেছিলাম। তিনি কাজও শুরু করেছিলেন, এর মধ্যেই এই দুর্ঘটনা। এখন ঠিকাদারকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, তারপর কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এএম

© Bangladesh Journal


from BD-JOURNAL https://www.bd-journal.com/bangladesh/182493/নির্মাণকাজে-অনিয়ম-শিক্ষার্থীদের-মানববন্ধন