বন্দরে কন্টেইনার জটের শঙ্কা

বন্দরে কন্টেইনার জটের শঙ্কা

বন্দরে কন্টেইনার জটের শঙ্কা

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার প্রতিবাদে ডাকা পরিবহন ধর্মঘটে বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য খালাসের কাজ। পণ্যের খালাসের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বন্দরের অভ্যন্তরে জমতে শুরু করেছে আমদানি হওয়া কন্টেইনারের স্তুপ। পাশাপাশি বেসরকারি আইসিডিগুলো (ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো) থেকে রপ্তানিমুখী কোনো কন্টেইনারই নেয়া যায়নি চট্টগ্রাম বন্দরে। তিন দিনের পরিবহন ধর্মঘটে চট্টগ্রাম বন্দরে ৩৮ হাজার ৭৮৩টি কন্টেইনারের (টিইইউস) স্তুপ জমেছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় জমেছে ১ হাজার ৮৪১টি কন্টেইনার। ফলে শঙ্কা তৈরি হয়েছে কন্টেইনার জটের।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) তথ্য অনুযায়ী, বন্দরে কন্টেইনার ধারণক্ষমতা গড়ে ৪৯ হাজার টিইইউএস (প্রতিটি ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের কন্টেইনারকে একক ধরে)। শনিবার সকালে আমদানি-রপ্তানি মিলিয়ে কন্টেইনার ছিল ৩৬ হাজারের মতো। বন্দর থেকে ডেলিভারি হবার কথা ১ হাজার ৫০০ টিইইউএস কন্টেইনার। কিন্তু গাড়ি না আসায় তাও হয়নি।

এদিকে রোববার (৭ নভেম্বর) দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৯টি কন্টেইনার ডিপোতে রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনার জমে আছে ৯ হাজার ৭০০টি। আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার পড়ে আছে ৮ হাজার। এর বাইরে খালি কন্টেইনার জমে আছে প্রায় ৩৪ হাজার। তিন দিনের ধর্মঘটে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে শুধু চট্টগ্রাম বন্দর ও বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোগুলোতে।

বন্দরের ট্রাফিক বিভাগ সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে গত ২৪ ঘণ্টায় ৯২টি মাদার ভ্যাসেল অবস্থান করছে। বার্থিংয়ে আছে ১৪টি। ৯২টি মাদার ভ্যাসেলের মধ্যে কন্টেইনারবাহী ৮টির পাশাপাশি ১২টি জেনারেল কার্গো রয়েছে। খাদ্যপণ্য বোঝাই মাদার ভ্যাসেল আছে ১০টি। এছাড়া সার বোঝাই আছে ৪টি, চিনি বোঝাই আছে ৩টি। সিমেন্টের ক্লিংকার বোঝাই আছে ২১টি এবং তেলবাহী মাদার ভ্যাসেল আছে ৮টি।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, শুক্রবার ভোর থেকে বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত কোনো গাড়ি ঢুকতে বা বের হতে পারছে না। আবার বেসরকারি আইসিডিগুলো থেকে রপ্তানিমুখী পণ্য নিয়ে কন্টেইনারবাহী গাড়িগুলো বন্দরে প্রবেশ করতে পারছে না। এ কারণে কন্টেইনার জমতে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮ হাজার ৭৮৩টি কন্টেইনার (টিইইউস) জমে আছে। একদিনের ব্যবধানেই প্রায় ১ হাজার ৮৪১টি কন্টেইনার জমে গেছে। কারণ পণ্য ডেলিভারি না হলেও বন্দরের অপারেশন বন্ধ নেই। জাহাজ থেকে কন্টেইনার খালাস করে ইয়ার্ডে রাখার কাজ চলমান রয়েছে।

তিনি বলেন, আজ (রোববার) ডেলিভারি হওয়ার কথা ছিল মাত্র ৭০০ থেকে ৮০০ কন্টেইনার। কিন্তু শ্রমিকরা বন্দরে কোনো গাড়ি প্রবেশ কিংবা বের করতে না দেয়ায় সেগুলোও ডেলিভারি দেয়া সম্ভব হয়নি। এছাড়া ডিপো থেকে বন্দরে তেমন একটা মালামাল আনা-নেয়া হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে।

এদিকে জ্বালানি তেলের দাম না কমা পর্যন্ত ট্রাক চলবে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ নেতারা জানিয়েছেন, সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কেউ তাদের সঙ্গে কথা বলেননি। রোববার (৭ নভেম্বর) দুপুরে পরিষদের আহ্বায়ক রুস্তম আলী খান বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম না কমা পর্যন্ত আমরা ধর্মঘট অব্যাহত রাখবো।’

তিনি জানান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সদর দপ্তরে যেহেতু বাস ভাড়া পুনর্নির্ধারণের জন্য বৈঠক হয়েছে, তাই তারা অংশ নেননি।

বাংলাদেশ কাভার্ডভ্যান, ট্রাক প্রাইম মুভার পণ্য পরিবহন মালিক সমিতির প্রেসিডেন্ট মকবুল আহমেদ বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত জ্বালানি তেলের দাম সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান না হচ্ছে, আমরা ধর্মঘট কর্মসূচি প্রত্যাহার করবো না।

উল্লেখ্য, গত বুধবার (৩ নভেম্বর) রাতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। নতুন দাম ভোক্তা পর্যায়ে ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়েছে, যা বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে কার্যকর হয়। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে সারাদেশে তিনদিন ধরে পরিবহন ধর্মঘট চলছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

© Bangladesh Journal


from BD-JOURNAL https://www.bd-journal.com/bangladesh/180698/বন্দরে-কন্টেইনার-জটের-শঙ্কা