নিরাপদ সড়ক জোরদারে গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসার আহবান
নিরাপদ সড়ক জোরদারে গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসার আহবান
সড়ক দুর্ঘটনা বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর ৮ম বৃহত্তম কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অব রোড সেইফটি ২০১৮ এর তথ্য অনুসারে প্রতিবছর বিশ্বে ১৩ লাখ ৫০ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান...
অন্যান্য
নিজস্ব প্রতিবেদকসড়ক দুর্ঘটনা বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর ৮ম বৃহত্তম কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অব রোড সেইফটি ২০১৮ এর তথ্য অনুসারে প্রতিবছর বিশ্বে ১৩ লাখ ৫০ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান।
সবচেয়ে ভয়াবহ তথ্য হচ্ছে, ৫-২৯ বছর বয়সসীমার মানুষের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ সড়ক দুর্ঘটনা। আর এসব মৃত্যুর ৯০ শতাংশ নিম্ম ও মধ্যম আয়ের দেশে সংগঠিত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে , বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ২৫ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। পঙ্গুত্ববরণ করেন আরও অনেক বেশি মানুষ। ২০২০ সালে জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে ১ হাজার ২৬ জন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা যান। গড়ে প্রতিদিন ৩ জন মারা যান। এর অন্যতম কারণ যথাযথভাবে এবং মানসম্মত হেলমেটের ব্যবহার না করা।
শনিবার বেলা ১১টায় ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন, স্বাস্থ্য সেক্টরের সভাকক্ষে নিরাপদ সড়ক জোরদারকরণে গণমাধ্যমের ভূমিকা শীর্ষক সভায় বুয়েটের এক্সিডেন্ট রিচার্জ ইনিস্টিটিউট এর প্রভাষক মো. শাহনেওয়াজ হাসনাত-ই রাব্বি এসব তথ্য তুলে ধরেন।
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের সহকারী পরিচালক মো. মোখলেছুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রভাষক মো. শাহনেওয়াজ হাসনাত-ই রাব্বি। তার প্রবন্ধে ৫ টি রিস্ক ফ্যাক্টর তুলে ধরেন এবং বিভিন্ন সড়ক দুর্ঘটনার কেস স্টাডি তুলে ধরে তা সমাধানে সম্ভাব্য সুপারিশ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, যদি গাড়ির গতি গড়ে ৫ শতাংশ কমানো যায় তাহলে ৩০ শতাংশ দুর্ঘটনা হ্রাস করা সম্ভব। ড্রাইভারসহ সকল যাত্রীর সিটবেল্ট পরিধান বাধ্যতামূলক করা হলে সামনের সিটের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ এবং পিছনের সিটের ক্ষেত্রে ৭৫ শতাংশ যাত্রীদের দুর্ঘটনায় আহত রোধ করা সম্ভব।
রাব্বি জানান, মোটরসাইকেলে সকল আরোহীদের জন্য যথাযথভাবে ও মানসম্মত হেলমেট ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০ শতাংশ মৃত্যু কমানো সম্ভব ও ৭০ শতাংশ গুরুতর আহত হওয়া থেকে রক্ষা করা সম্ভব। পরিবহনে বিশেষ করে ছোট গাড়িতে শিশুদের উপযুক্ত আসন ব্যবস্থা রাখলে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৪ থেকে ৮০ শতাংশ শিশুদের নিরাপদ রাখা সম্ভব। একইসঙ্গে মদ্যপান ও নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবনের ক্ষেত্রে সড়ক আইনের সংশোধন ও এর যথাযথ বাস্তবায়ন করা গেলে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ২০ শতাংশ কমানো সম্ভব।
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের রোড সেইফটি প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়কারী শারমিন রহমানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন- সাভার পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শরফউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, নিরাপদ সড়ক চাই (নিশচা) এর সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আজাদ হোসাইন।
শরফউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতে জনসচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে। সরকারের দায়িত্বশীল আচরণ ও আমাদের নিরাপদ সড়কের নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে হবে।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিশচা) এর সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আজাদ হোসাইন বলেন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে গণমাধ্যম কর্মীদের এসব বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে। সরকারের নজরে আনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম গণমাধ্যমের কর্মীরা।
তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নে গণমাধ্যম বা সাংবাদিকদের ভূমিকা অপরিসীম। তেমনি নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের ভূমিকাও অন্যতম। প্রতিনিয়ত দেশের সড়কের পরিস্থিতি, দুর্ঘটনা, নিরাপত্তা ইত্যাদি সর্ম্পকে বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে দেশের সর্বস্তরের মানুষদের অবহিত করছে গণমাধ্যমসমূহ। সেই সাথে সড়কের নিরাপত্তায় করণীয়সমূহ ও তার বাস্তবায়ন অগ্রগতি তুলে ধরেছে গণমাধ্যম।
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের সহকারী পরিচালক মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, সুনিদিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনার হার ও মৃত্যু বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। যদি আজকের আলোচ্য বিষয়সমূহ সংশোধিত আইনে অর্ন্তভূক্ত করা হয়। যেমন: গাড়ির সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ধারণ করা, মোটরসাইকেলে আরোহীর ক্ষেত্রে মানসম্মত হেলমেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে দেয়া, গাড়ি বা যানবাহনে চালকসহ সকল যাত্রীদের সিট বেল্ট পরিধান করা বাধ্যতামূলক করা, পরিবহনে শিশুদের জন্য নিরাপদ আসন ইত্যাদি।
সভায় দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন নিউজ পোর্টালের ১৭ জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন। এ সময় বক্তারা নিরাপদ সড়ক জোরদারকরণে গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসার আহবান জানান। অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকরা তাদের লেখনির মাধ্যমে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন বলে জানান।
from BD-JOURNAL https://www.bd-journal.com/other/177464/নিরাপদ-সড়ক-জোরদারে-গণমাধ্যমকে-এগিয়ে-আসার-আহবান