৭১-এ দেশান্তরিত শিল্পীদের সেই চিত্রকর্মগুলো মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে

৭১-এ দেশান্তরিত শিল্পীদের সেই চিত্রকর্মগুলো মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে

৭১-এ দেশান্তরিত শিল্পীদের সেই চিত্রকর্মগুলো মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে

রাজধানীর আগারগাঁওস্থ মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে ১৯৭১ সালে ভারতের কলকাতা ও দিল্লিতে দেশান্তরিত শিল্পীদের আঁকা প্রদর্শিত সাতটি ছবিসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দলিল ও চিঠি হস্তান্তর করা হয়েছে...

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর আগারগাঁওস্থ মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে ১৯৭১ সালে ভারতের কলকাতা ও দিল্লিতে দেশান্তরিত শিল্পীদের আঁকা প্রদর্শিত সাতটি ছবিসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দলিল ও চিঠি হস্তান্তর করা হয়েছে।

শনিবার জাদুঘর মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব স্মারক হস্তান্তর করা হয়। এসময় মুক্তিযুদ্ধের সুহৃদদের ক্রেস্ট উপহার দিয়ে সম্মাননা জানান জাদুঘরের প্রতিনিধিরা।

১৯৭১ এর সেপ্টেম্বরে কলকাতায় 'এক্সিবিশন অব পেইন্টিংস এন্ড ড্রইংস বাই আর্টিস্টস অব বাংলাদেশ' শিরোনামের প্রদর্শনীতে আঁকা ছবিগুলো মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ দলিল। দেশান্তরিত শিল্পীদের আঁকা চিত্রগুলো একাত্তর সালে ভারতের কলকাতা ও দিল্লি এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রদর্শিত হয়। সুদূর আমেরিকা হতে সেই ছবি'র সাতটি সংগ্রহ করা হয়। সেই দু:খ দিনের স্মারক তুলে দেয়া হলো মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের কাছে।

এছাড়া প্রদর্শনীতে ছিল একটি চিঠি। যে চিঠিতে ত্যাগ আর দায়িত্বের মিশেলে দুই কন্যা, সুফিয়া কামাল আর সাঈদা কামালের কাছে লিখেছেন সুফিয়া কামাল। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধে আমেরিকায় ডানহ্যাম পরিবার কর্তৃক সংরক্ষিত বেশ কিছু দলিল মেরি ফ্রান্সিস ডারহামের কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের পক্ষে সংগ্রহ করেন সামিয়া জামান।

অনুষ্ঠানে শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. ফজলে রাব্বীর স্মৃতিস্মারক হস্তান্তর করা হয়। সেই সঙ্গে প্রয়াত অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান রচিত বইসহ আরো কিছু স্মারক আর অনুদান তুলে দেয়া হয়।

অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের বই হস্তান্তর করে তার স্ত্রী সিদ্দিকা জামান বলেন, জাদুঘরে বইগুলো দিতে পেরে আমি গর্বিত। আনিসুজ্জামান যেখানেই থাকুক, তিনি এই উদ্যোগ দেখে খুশি হবেন। ভবিষ্যতে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সংগ্রহ থেকে আরও স্মারক উপহার হিসেবে দেবেন বলে জানান তিনি।

কবি সুফিয়া কামালের একটি চিঠি স্মারক হিসেবে জাদুঘরকে দিয়ে কবিকন্যা সুলতানা কামাল বলেন, অমূল্য একটি সম্পদ অনন্য প্রতিষ্ঠানকে উপহার দিচ্ছি, যা আমার জীবনে উল্লেখযোগ্য মাইলফলক।

১৯৭১ সালে কলকাতা ও দিল্লিতে প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া শিল্পী নিতুন কুন্ডু, শিল্পী আবুল বারক আলভী, শিল্পী বীরেন সোমসহ খ্যাতনামা শিল্পীদের সাতটি চিত্রকর্ম হস্তান্তর করেন ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের ইতিহাস যেভাবে গুরুত্ব পেয়েছে, প্রচারযুদ্ধ তেমনই উপেক্ষিত থেকেছে। শিল্পীরা তাঁদের কথাগুলো সেভাবে লিখেও রাখেননি। গণযুদ্ধের ইতিহাস সেভাবে লেখা হয়নি। এভাবেই ইতিহাস হারিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা এখনো সক্রিয়। তাই মুক্তিযুদ্ধের অর্জনগুলো বারবার বলতে হবে। ১৯৭১ এ প্রচারযুদ্ধের স্বীকৃতি দেয়ার দাবিও করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে ৬০ লাখ টাকা অনুদান দিয়ে যাদুঘরের পৃষ্ঠপোষক সদস্যপদ গ্রহণ করেন নির্মাণ প্রতিষ্ঠান মীর আক্তার হোসেন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর নাসির হোসেন। তার প্রতিষ্ঠানই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নির্মাণকাজ করেছে।

এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা ও নাট্যব্যক্তিত্ব প্রয়াত আলী যাকের এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও সদস্যসচিব সারা যাকের দম্পতির ছেলে ইরেশ যাকের এবং মেয়ে শ্রিয়া সর্বজয়া মোট ১০ লাখ টাকা অনুদান দিয়ে জীবন সদস্যপদ লাভ করেন। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলীর মেয়ে চিকিৎসক সায়মা আলী, সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্তর মেয়ে শাওলী দাশগুপ্ত বিভিন্ন পরিমাণে অনুদানের টাকা তুলে দেন কর্তৃপক্ষের কাছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মাজিদ চৌধুরী মুক্তিযোদ্ধা ভাতার অর্থ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে দেওয়ার ঘোষণা দেন।

অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, শহীদ বুদ্ধিজীবী চিকিৎসক আজহারুল হকের স্ত্রী সৈয়দা সালমা হক, শহীদ বুদ্ধিজীবী চিকিৎসক ফজলে রাব্বীর মেয়ে অধ্যাপক নাসরীন সুলতানা, মুক্তিযুদ্ধের সুহৃদ মনোয়ারা বেগম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এমআর/আর

© Bangladesh Journal


from BD-JOURNAL https://www.bd-journal.com/bangladesh/173869/৭১-এ-দেশান্তরিত-শিল্পীদের-সেই-চিত্রকর্মগুলো-মুক্তিযুদ্ধ-জাদুঘরে