মায়ের প্রেমিককে হত্যা, গ্রেপ্তার মা-ছেলে

মায়ের প্রেমিককে হত্যা, গ্রেপ্তার মা-ছেলে

মায়ের প্রেমিককে হত্যা, গ্রেপ্তার মা-ছেলে

দূর সম্পর্কের এক চাচার সঙ্গে মায়ের অসম প্রেম ও দ্বিতীয় বিয়ের ঘটনায় মা-বাবার বিচ্ছেদ কোনোভাবে সহ্য করতে পারছিলো না ছেলে।

বাংলাদেশ

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

দূর সম্পর্কের এক চাচার সঙ্গে মায়ের অসম প্রেম ও দ্বিতীয় বিয়ের ঘটনায় মা-বাবার বিচ্ছেদ কোনোভাবে সহ্য করতে পারছিলো না ছেলে। 

তাই কৌশলে মায়ের প্রেমিককে দাওয়াতের কথা বলে প্রাইভেটকারে তুলে কুমিল্লায় নিয়ে তাকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়। এই কাজে সহযোগিতা করে দুই বন্ধু।  পরে গাড়ি থেকে সেই লাশ ফেলে দেয়া হয় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়াতে।

প্রায় ১০ মাস পর সেই হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মায়ের পরকীয়া প্রেমিককে খুনের দায়ে প্রধান খুনি ও মামলার আসামি ছেলে আশরাফুল হক প্রকাশ সাব্বির (২৩) ও তার মা শিউলী বেগম (৪৫) কে গ্রেপ্তার করেছে চট্টগ্রামের পুলিশ।

শনিবার মধ্যরাতে আশুগঞ্জ উপজেলার সোহাগপুর গ্রামের একটি বাসা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই চট্টগ্রামের একটি দল।

সাব্বিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ ২০২০ সালের ১৬ অক্টোবর তিনি তার মায়ের পরকীয়া প্রেমিক নবী হোসেনকে (২৮) গাড়ির ভেতর শ্বাসরোধ করে খুন করেন। নিহত নবী হোসেন ভৈরব উপজেলার আগানগর গ্রামের মো. ইসমাইলের ছেলে।

স্থানীয় সূত্র থেকে জানা যায়, শিউলি বেগমের স্বামী আনোয়ার সৌদি আরব প্রবাসী। তাদের বাড়ি ভৈরবের ছাগাইয়া গ্রামে। তিনি একসময় আনোয়ারের মামাত ভাই নবী হোসেনের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। এরই মধ্যে ওই নারী তার স্বামীকে তালাক দিয়ে নবী হোসেনকে বিয়ে করেন। মায়ের অসম প্রেম ও দ্বিতীয় বিয়ের ঘটনাটি সহ্য করতে পারেননি তার ছেলে সাব্বির।

তাই প্রতিশোধ নিতে সাব্বির গত বছর ১৬ অক্টোবর কৌশলে মায়ের প্রেমিক নবী হোসেনকে দাওয়াতের কথা বলে একটি প্রাইভেটকারে তুলে কুমিল্লায় নিয়ে যান। সেখানে গাড়ির ভেতরেই তাকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। 

এ সময় গাড়িতে সাব্বিরের দুই বন্ধু তুষার ও আশিক সহযোগিতা করেন। তারপর তার লাশ চট্টগ্রামের পটিয়ার একটি জঙ্গলে ফেলে তারা ভৈরব চলে আসেন। এ ঘটনায় তুষারের সাথে খুনের জন্য পূর্ব  কন্ট্রাক্ট হয় ৬০ হাজার টাকা ও আশিকের  কন্ট্রাক্ট হয় ১৮ হাজার টাকা।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পটিয়া থানার পুলিশ জঙ্গল থেকে লাশ উদ্ধার করে পকেটে থাকা আইডি কার্ড পেয়ে নিহতের পরিবারকে ভৈরব থানার মাধ্যমে খবর দেয়। খবর পেয়ে তার ভাই কবির হোসেন চট্টগ্রাম গিয়ে ফিঙ্গার প্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশন এন্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেমের মাধ্যমে লাশ শনাক্ত করেন। 

এরপর কবির হোসেন বাদী হয়ে পটিয়া থানায় ৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা করে। মামলাটি তদন্ত করতে চট্টগ্রামের পিবিআইকে দায়িত্ব দেয়া হয়। পিবিআই মামলাটি তদন্ত নেয়ার পর গোপন তথ্য পেয়ে প্রাইভেটকারের চালক আশিক ও হেলপার সুমনকে গত বছর ২৩ অক্টোবর ভৈরবের দুটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে। 

এরপর তারা দুজন চট্টগ্রাম আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে হত্যার ঘটনাটি স্বীকার করেন। আদালতে তারা কীভাবে নবী হোসেনকে গাড়ির ভিতর হত্যা করে পটিয়ার জঙ্গলে ফেলে পালিয়ে আসে সেই বর্ণনা দেন। এভাবেই নবী হোসেনের খুনের ঘটনাটি উদঘাটন হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চট্টগ্রাম পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক মো. মনির হোসেন জানান, বিশ্বস্ত গুপ্তচর ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে শনিবার রাতে আশুগঞ্জের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মা ও ছেলেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। ঘটনার পর থেকেই দুজনেই পলাতক ছিলেন। পরে তাদের চট্টগ্রাম আদালতে পাঠানো হয়েছে।

মামলার বাদী নিহত নবী হোসেনের ছোটভাই কবির হোসেন বলেন, আমার ভাইকে নির্মমভাবে শ্বাসরুদ্ধ করে খুনিরা হত্যা করে। শনিবার গভীর রাতে পিবিআই পুলিশ প্রধান খুনি সাব্বিরসহ তার মাকে গ্রেপ্তার করেছে বলে তদন্তকারী কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ

© Bangladesh Journal


from BD-JOURNAL https://www.bd-journal.com/bangladesh/169850/মায়ের-প্রেমিককে-হত্যা-গ্রেপ্তার-মা-ছেলে