আগুনে পোড়া লাশের ৮০ শতাংশ শিশু-কিশোর

আগুনে পোড়া লাশের ৮০ শতাংশ শিশু-কিশোর

আগুনে পোড়া লাশের ৮০ শতাংশ শিশু-কিশোর

বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক :: own-reporter

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ফুডস ফ্যাক্টরিতে (সেজান জুসের কারখানা) লাগা আগুনে অন্তত ৫২ জন নিহত হয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার রাসেল শিকদার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ফ্যাক্টরিতে কাজ করা শ্রমিকরা জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে ৮০ শতাংশই শিশু-কিশোর। নুডলস ম্যাকারনি শাখায় কর্মরত স্মৃতি (১৩) জানান, তার সঙ্গে কাজ করা অধিকাংশ শ্রমিকই শিশু। বৃহস্পতিবার আগুন লাগার ঘণ্টাখানেক আগে ছুটি পাওয়ায় বেঁচে যান তিনি।

স্মৃতি বলেন, সাত মাস ধরে নুডলস ম্যাকারনি শাখায় কাজ করি। নিচতলায় কারখানা। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ডিউটি। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় এক বান্ধবী অসুস্থ বোধ করায় ছুটি নিতে যাই। ছুটি দেয় কর্তৃপক্ষ। বাসায় আসার কিছুক্ষণ পর আগুনের খবর পাই। এক সপ্তাহ আগে কারখানার পঞ্চম তলায় আগুন লেগেছিল। তবে তা ছড়ানোর আগেই নিভে যায়।

আগুনে ঝলসে যাওয়া কারখানা প্রাঙ্গণে কথা হয় বরিশালের আসমার সঙ্গে। তিনিও এখানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।  প্রথমে নিজের বয়স ২১ দাবি করলেও পরে জানান, ২০১৫ সালে ক্লাস সিক্সে (ষষ্ঠ শ্রেণি) পড়তেন। সাড়ে তিন বছর ধরে এ কারখানায় কাজ করছেন।

আসমা বলেন, আড়াই বছর আগে নতুন ফ্লোর চালু হয়। বৃহস্পতিবার সেখানে আগুন লাগে। রাত ৮টায় ডিউটি ছিল। কিন্তু তার আগেই ঘটে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা। আমার বোন, বোনের মেয়ে ও ভাই এখানে কাজ করেন। তারা বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।

ঝুমা নামের অপর এক শ্রমিক জানান, মা-খালার সঙ্গে এখানে কাজ করতেন। সকালের শিফট শেষে বাসায় ফেরেন। এখানে যারা কাজ করেন তাদের অধিকাংশের বাড়ি বরিশাল ও কিশোরগঞ্জে। নিহতদের মধ্যে এ দুই জেলার মানুষই বেশি।

ঝুমার দাবি, এখানে যারা কাজ করেন তাদের অধিকাংশের বয়স ১৫ বছরের নিচে। এটা নিয়ে তদন্ত হয়েছে। অনেক ঝামেলার কথাও শুনেছি। পরে ঠিক কী হয়েছে জানি না। নিহতদের মধ্যে অনেকেই অল্প বয়সী বলে শুনেছি।

শুক্রবার সন্ধ্যায় পুড়ে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত কারখানাটি দেখতে আসেন নজরুল ইসলাম। এখানে তার মেয়ে কাজ করতেন। তিনি বলেন, আমার মেয়ের বয়স ১২/১৩ হবে। এক মাস ধরে এখানে কাজ করছে। এর আগেও সে একই কোম্পানির অন্য একটি কারখানায় কাজ করত। বৃহস্পতিবার বিকেলে লাইনম্যানের সঙ্গে সে বাইরে বের হয়। এর ১০ মিনিট পর আগুন লাগে। এ কারণে বেঁচে যায়।

নিখোঁজ আরেক শ্রমিক ১৪ বছর বয়সী ফারজানা। গত তিন বছর ধরে পাঁচ হাজার টাকায় এ কারখানায় কাজ করছিলেন বলে জানান তার মা ঝর্না বেগম। মেয়ের ছবি হাতে নিয়ে তিনি কারখানা এলাকায় ঘোরাফেরা করছিলেন।

ফারজানার সহকর্মী ১৬ বছর বয়সী মৌমিতা জানান, হাসেম ফুডস কারখানায় সেজান জুস, চানাচুর, সেমাই, চকলেটসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য তৈরি হতো। বৃহস্পতিবার বিকেলে যখন আগুন লাগে তখন কাজে ছিলেন না। এ কারণে প্রাণে বেঁচে গেছেন। কিন্তু ফারজানাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

তিনি আরো জানান, তার বয়সী অনেক কিশোর-কিশোরী ছিলেন কারখানার মধ্যে। কম বয়সীদের সাধারণত রাতের শিফটে রাখা হতো না।

আল-আমিন নামের এক ফায়ার ফাইটার বলেন, আমি নিজে সাত-আটটি মরদেহ উদ্ধার করেছি। যাদের অনেকের বয়স ১৩-১৪ বছরের বেশি হবে না।

ফায়ার সার্ভিসের লিডার মোজাম্মেল হকও বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, নিহতদের অনেকেই কম বয়সী।

বাংলাদেশ জার্নাল/কেআই

© Bangladesh Journal


from BD-JOURNAL https://www.bd-journal.com/bangladesh/166479/আগুনে-পোড়া-লাশের-৮০-শতাংশ-শিশু-কিশোর