ব্যর্থতা থেকে সাফল্যের শিখরে

ব্যর্থতা থেকে সাফল্যের শিখরে

ব্যর্থতা থেকে সাফল্যের শিখরে

অন্যান্য

জার্নাল ডেস্ক

মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে, কথাটা পুরোপুরি সত্য। ব্যর্থতা জীবনের শেষ কথা নয়, ব্যর্থতা থেকেই সূচিত হয় সফলতার গল্প। বিশ্ববিখ্যাত অনেক ব্যক্তিই প্রথম প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছিলেন৷অনেকেই হয়েছেন তীব্র বঞ্চনার শিকার। কিন্তু ব্যর্থতার বেদনা গায়ে মেখে ভেঙে পড়েননি কেউ। চালিয়ে গেছেন প্রচেষ্টা। লড়াই করে তারা ছিনিয়ে আনেন সাফল্য। প্রমাণ করেন, ‘ফেলিওর ইজ দ্য পিলার অব সাকসেস’। প্রথমে ব্যর্থ হয়েও জীবনে অবিশ্বাস্য সফলতার মুখ দেখা ১০ জন বিখ্যাত ব্যক্তির প্রতি চোখ রাখা যাক।

টমাস আলভা এডিসন

টমাস আলভা এডিসন

টমাস আলভা এডিসন যখন স্কুলে পড়তেন তখন শিক্ষক বলেছিলেন, ছেলেটা প্রচন্ড নির্বোধ।স্কুল থেকে দেয়া চিঠিতে লেখা ছিল যে, ছেলেটা পড়াশুনায় খুবই অমনযোগী ও তার মেধা অপরিপক্ক, এই ধরনের দুর্বল ছাত্রকে স্কুলে রাখা যাবে না। টমাসের মা চিঠি খুলে ছেলেকে শুনিয়ে পড়েছিলেন যে, টমাসের মেধা সাধারণ ছাত্রদের চেয়ে অনেক বেশি, এত বেশি মেধাবী ছাত্রকে পড়ানোর ক্ষমতা সাধারণ স্কুলের নেই। স্কুল থেকে সরিয়ে এনে টমাস আলভা এডিসনকে মা বাসায় রেখে পড়ানো শুরু করেন।। মায়ের থেকে পাওয়া এই আত্মবিশ্বাস থেকেই টমাস পরে জটিল জটিল সব বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করতে থাকেন।  এই আত্মবিশ্বাসের কারণেই তিনি কোনও কিছুতেই ব্যর্থতাকে মেনে নিতেন না। বৈদ্যুতিক বাতি আবিষ্কারের সময়ে ১০ হাজার বার তাঁর এক্সপেরিমেন্ট ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু তিনি তবুও চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। শৈশবের ব্যর্থত আর মায়ের কাছ থেকে পাওয়া আত্মবিশ্বাসকে  এডিসন পরবর্তী জীবনে লাগিয়ে সফল হয়েছিলেন।বৈদ্যুতিক বাতি, চলচ্চিত্র, অডিও রেকর্ডিং, এনক্রিপটেড টেলিগ্রাফ সিস্টেম, আধুনিক ব্যাটারি – এধরনের যুগান্তকারী আবিষ্কার করে তিনি পৃথিবীকে এগিয়ে দিয়ে গেছেন।   আলবার্ট আ্ইনস্টাইন

আলবার্ট আ্ইনস্টাইনআলবার্ট আইনস্টাইন ৪ বছর বয়স পর্যন্ত আলবার্ট আইনস্টাইন কথা-ই বলতে পারতেন তিনি। এমনকি তিনি ৭ বছর বয়স পর্যন্ত পড়তেও পারতেন না। স্কুলের শিক্ষকরা দিয়েছিলেন ‘ধীরগতির ছাত্র’ ও ‘মানসিক প্রতিবন্ধী’ তকমা। এমনকি অপরিপক্ক বলে একবার একটি স্কুল থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয়। শৈশব ও কৈশোরে তার উদ্ভট আচরণ নিয়ে হাসাহাসি করতো সবাই। কলেজে পড়ার সময়ে প্রতিটি বিষয়ে তিনি এতই বাজে রেজাল্ট করতেন যে, একাধিক বার পড়াশুনা বাদ দেয়ার চিন্তা করতে হয়েছিল। মারা যাওয়ার সময়ে তাঁর বাবার একমাত্র দুঃখ ছিল যে এই গর্ধভ ছেলে জীবনে কিছুই করতে পারবে না। বাবার এই কথায় আইনস্টাইন বহুদিন ধরে মনে কষ্ট চেপে রেখেছিলেন। কোনও কাজ না পেয়ে তিনি বাধ্য হয়ে ইন্সুরেন্স সেলস ম্যানের কাজ নেন। কোনও কাজ না পারলে মানুষ এই ধরনের চাকরি করতো। ২ বছর পর তিনি পেটেন্ট অফিসে কাজ পান। যেখানে নতুন ডিভাইস পেটেন্ট করার আগে পরীক্ষা করা হতো। একটা সময়ে এই মানুষটাই পৃথিবীর চেহারা পাল্টে দিয়েছেন। তাঁর সেই ‘ডাল ব্রেন’ নিয়ে তিনি পদার্থ বিজ্ঞানের বেশ কয়েকটি মূল সূত্র সৃষ্টি করে গেছেন। বিজ্ঞানে অবদানের জন্য নোবেল প্রাইজ জিতেছেন। প্রমাণ করেছেন যে চেষ্টা করলে সবাইকে দিয়েই সবকিছু সম্ভব।

আইজ্যাক নিউটন

আইজ্যাক নিউটন

আইজ্যাক নিউটনকে ছোটবেলায় তার মা অভাব অনটনের কারণে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে আনেন। উপার্জনের জন্য তাকে লাগিয়ে দেওয়া হয় পরিবারিক জমিতে কৃষিকাজে। নিউটনের মা চেয়েছিলেন, ছেলে বাবার মতোই একজন ভালো কৃষক হয়ে উঠুক। কিন্তু কৃষিকাজে মোটেও মন ছিল না নিউটনের। কাজ ফেলা তিনি হাতগুটিয়ে বসে থাকতেন। নিউটনের উদাসিনতায় তাদের খামারের শ্রমিকরা কাজে ফাঁকি দেয়া শুরু করে দেয়। এতে নিউটনের মাকে কয়েকবছর গুনতে হয় লোকসান। কৃষিকাজে নিউটনের দারুণ অনীহার কারণে তার মাকে বাধ্য করে তাকে আবারো স্কুলে ভর্তি করাতে।কৃষিকাজে ব্যর্থ হলেও দ্বিতীয়বার পড়াশোনার সুযোগ পেয়ে জ্বলে ওঠেন নিউটন। একাডেমিক পরীক্ষার ফলাফলে তার ধারে কাছে ছিল না কোনো শিক্ষার্থী। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে  গণিত ও বলবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনার সময়ই তিনি উদ্ভাবন করতে থাকেন পৃথিবী এবং মহাবিশ্বের  নানা তত্ব। পরবর্তী জীবনে হয়ে ওঠেন বিশ্বের সেরা পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী। অনেকের মতে, নিউটন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী বিজ্ঞানী।

আব্রাহাম লিংকন

আব্রাহাম লিংকনমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বকালের সেরা প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের কর্মজীবনের শুরুটা ব্যর্থতার গল্প দিয়েই। কাজে অমনোযোগিতার অভিযোগে ২২ বছর বয়সে চাকরি চলে যায়।এরপর তিনি রাজনীতিতে যুক্ত হন। লিংকন২৯ বছর বয়সে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের সদস্য হতে নির্বাচনে প্রার্থী হন, কিন্তু জয়লাভ করতে পারেননি। ১৮৪৮ সালে ৩৯ বছর বয়সী লিংকন ওয়াশিংটনের জেনারেল ল্যান্ড অফিসের কমিশনার হওয়ার জন্য নির্বাচন করেন। ফলাফল আবারও ব্যর্থতা, এবারও পরাজিত হন তিনি। আব্রাহাম লিংকন ৪৯ বছর বয়সে সিনেটর হওয়ার জন্য নির্বাচনে দাঁড়ান। সেখানেও শোচনীয়ভাবে হেরে যান তিনি। এত ব্যর্থতার পরও লিংকন থেমে থাকেননি। রাজনীতি না ছেড়ে প্রতিবারই নতুন উদ্যমে চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। অবশেষে সাফল্য এসে ধরা দেয় তাঁর ঝুলিতে। ১৮৬১ সালে ৫২ বছর বয়সে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।  অথচ প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে তার জীবনের প্রায় পুরোটাই ছিল ব্যর্থতার গল্প। কিন্তু এরপর তিনি আমেরিকার ইতিহাস বদলে দেন। হয়ে উঠেন দেশটির সর্বকালের সেরা প্রেসিডেন্ট।

চার্লি চ্যাপলিন 

চার্লি চ্যাপলিন চ্যাপলিনের বাবা ছিলেন একজন মাতাল। কোনও কাজ করতেন না, দিন-রাত মদ খেয়ে পড়ে থাকতেন। চ্যাপলিনের ২ বছর বয়সে তাঁর বাবা বাড়ি ছেড়ে চলে যান। মা নামে মাত্র একটি কাজ করতেন তাতে সংসারের খরচ কোন ভাবেই মিটতো না। অভাবের তাড়নায় মাত্র ৭ বছর বয়সে চার্লি “ওয়ার্কহাউজ” এ যেতে বাধ্য হন। কিছুদিন পর চার্লির বাবা লিভার নষ্ট হয়ে মারা যান। এরপর তাঁর মায়ের পাগলামি এতই বেড়ে যায় যে তাকে সব সময়ের জন্য পাগলা গারদে বন্দী করে রাখার প্রয়োজন পড়ে। পারিবারিক অশান্তির কারণে শৈশবে স্কুল জীবনে যখন চ্যাপলিন অনবরত খারাপ ফলাফল করে যাচ্ছিলেন। স্কুলের পড়াশোনা বাদ দিয়ে্ পথেঘাটে অভিনয় করে মানুষের কাছ থেকে পাওয়া টাকায় অতিকষ্টে জীবনযাপন করতে থাকেন তিনি। ওই সময় উপার্জনের আশায় এক মুভি কোম্পানিতে অভিনয়ের জন্য অডিশনও দেন। বিচারকরা বলেছিলেন, তাঁর অভিনয় কেউ বুঝবে না। তাকে তাকে মুভিতে কাজের সুযোগ দেওয়া হয়নি। এরপর চার্লি কম বেতনের মঞ্চে অভিনয় শুরু করেন এবং জ্বলে ওঠেন সেখানে।চার্লির সেন্স অব হিউমার আর অভিনয় আস্তে আস্তে তাঁকে থিয়েটারে জনপ্রিয় করে তোলে। সেখান থেকেই ডাক পান মুভিতে। হয়ে ওঠেন কালজয়ী এক অভিনেতা।

কনোনেল স্যান্ডার্স

কেএফসির নাম এখন সবাই জানেন। কেএফসির লোগোর ফ্রেঞ্চকাট দাড়িওয়ালা হাসিমুখের লোকটিই কনোনেল স্যান্ডার্স।  তিনি কেএফসি নামক বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও জনপ্রিয় ফাস্টফুড চেইনের প্রতিষ্ঠাতা।  কেউ যদি কেএফসির একটি শাখা খুলতে চান, তবে ফ্রেঞ্চাইজি ব্যবহারের জন্য দিতে হবে ৪৫ হাজার ডলার বা প্রায় ৩৮ লাখ টাকা দিতে হবে।  এতবড় কোম্পানি যাঁর রেসিপি থেকে শুরু, সেই রেসিপি বিক্রি করতে তাঁকে ১০০৯ বার ব্যর্থ হতে হয়েছিল।৫ বছর বয়সে বাবা হারানোর পর থেকে  কনোনেল স্যান্ডার্সকে সংগ্রাম শুরু করতে হয়েছিল। নিজের রান্নার দক্ষতার কারণে কাজ পেতে কখনও অসুবিধা হয়নি।  কিন্তু যখনই নিজে কিছু করতে গেছেন – তখনই ব্যর্থ হয়েছেন।  ১৯৩৯ সালে ৪৯ বছর বয়সে অনেক কষ্টে একটি মোটেল শুরু করেন।  মোটেলটি ৪ মাস চলার পরই আগুন ধরে ধ্বংস হয়ে যায়। ১৯৫৫ সালে তাঁর আরও একটি উদ্যোগ ব্যর্থ হয়।  তিনি একটি চার রাস্তার মোড়ে রেস্টুরেন্ট খুলেছিলেন।  ভালোই চলছিল সেটি।  কিন্তু নতুন রাস্তা হওয়ার ফলে সেই রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলা বন্ধ হয়ে যায়, ফলে রেস্টুরেন্টও বন্ধ করতে হয়। ৫০ বছর বয়সে তিনি সিক্রেট চিকেন ফ্রাই রেসিপি নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন। ১৫ বছর ধরে তিনি ওই চিকেন রেসিপি বিক্রির চেষ্টা করেন। ১০০৯টি রেস্টুরেন্ট তাঁকে ফিরিয়ে দেয়ার পর একটি রেস্টুরেন্ট তার রেসিপি নিয়ে কাজ করতে রাজি হয়। সেখানেই গ্রাহকরা লুফে নেন তার চিকেন ফ্রাই। লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে তার নাম। আজকে তো তার তৈরি সেই চিকেন ফ্রাই প্রতিটি দেশেই বিখ্যাত।

হেনরি ফোর্ড

হেনরি ফোর্ডবিশ্ববিখ্যাত গাড়ির কোম্পানি ফোর্ড মোটরসের প্রতিষ্ঠাতা হেনরি ফোর্ড। এটি বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো ও সবচেয়ে লাভজনক গাড়ি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের একটি। হেনরি ফোর্ডকে পৃথিবীর সবচেয়ে সফল উদ্যোক্তাদের একজন ধরা হলেও প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন একজন ব্যর্থ মানুষ। ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি অন্যের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন।  ১৮৯৮ সালে ফোর্ড নিজের প্রচেষ্টায় স্বয়ংক্রিয় গাড়ির ইঞ্জিন তৈরি করে সবাইকে দেখান । উইলিয়াম এইচ. মার্ফি নামে একজন ধনী ব্যক্তির বিনিয়োগ পান। পরের বছর ফোর্ড তাঁর প্রথম গাড়ির কোম্পানি ডিট্রয়েড অটোমোবাইল প্রতিষ্ঠা করেন (ফোর্ড মোটরস নয়)। লোনের টাকা শোধ করতে না পারা এবং গাড়ির ডিজাইনে ঝামেলা থাকায় প্রজেক্টটি সফল হয়নি। ১৯০১ সালে কোম্পানীটি দেউলিয়া হয়ে যায়। তবে থেমে থাকেননি ফোর্ড। নতুন বিনিয়োগকারী সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যান। পেয়েও যান আরেকজনকে, কিন্ত ভালো হলো না। কারণ বিনিয়োগকারীরা কিছু বিষয়ে তার সঙ্গে একমত হতে পারছিলেন না। অবশেষে ১৯০৩ সালে ৪০ বছর বয়সী ফোর্ড তাঁর নিজের নামে কোম্পারি শুরু করেন। এবার তিনি নতুন বিনিয়োগকারী স্কটিশ কয়লা ব্যবসায়ী ম্যালকমসনকে রাজি করান যে সে ব্যবসায়ে নাক গলাবে না।  শুধু তার লাভের টাকা বুঝে নেবে। এরপর ফোর্ড তাঁর নিজের মত কাজ করতে শুরু করেন। ধরা দিলো সাফল্য। ফোর্ড মোটরস হয়ে ওঠলো বিশ্বের সবচেয়ে লাভজন অটোমোবাইল কোম্পানি।

ওয়াল্ট ডিজনি

ওয়াল্ট ডিজনিঅ্যানিমেশন চলচিত্রের অগ্রদূত ওয়াল্ট ডিজনির  আমাদের শৈশবকে রাঙিয়ে তুলতে কালজয়ী সব চরিত্র আর রূপকথার জগৎ উপহার দিয়ে গেছেন। কিন্তু এর জন্য নাছোড়বান্দা এই উদ্যোক্তাকে পাড়ি দিতে হয়েছে বিশাল এক দুর্গম পথ।  মুখোমুখি হতে হয়েছে কঠোর বাস্তবতার। সাংবাদিক হিসেবে ডিজনি শুরু করেছিলেন ক্যারিয়ার। আইডিয়ার অভাব ও কল্পনাশক্তি না থাকার জন্য পত্রিকার সম্পাদক তাকে চাকরি থেকে ছাটাই করে দিয়েছিলেন। জীবিকার তাগিদে ডিজনি পথে পথে সংবাদপত্র বিক্রি করে বেড়াতেন আর বাকিটা সময় কাটাতেন আঁকাআকি করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে রেড ক্রস অ্যাম্বুলেন্স সেনাদলের অ্যাম্বুলেন্স চালক হিসেবে তিনি কাজ করেন। যুদ্ধের নৃশংসতা দৃশ্য তিনি ফুটিয়ে তুলতেন অ্যাম্বুলেন্সের গায়েই চিত্রকর্ম অংকন করে। যুদ্ধ শেষে সেই চিত্রকর্মই তাকে সুযোগ এনে দেয় রুবিন স্টুডিওতে কমার্শিয়াল আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করার। পরে তিনি সিটি ফিল্ম অ্যাড কোম্পানিতে কার্টুনিস্ট হিসেবে যোগদান করলেন। তৈরি করতে থাকলেন মুভি থিয়েটারের জন্য অ্যাড ও কার্টুন। ঘোড়া, বিড়াল, গরু, ব্যাঙের মতো একের পর এক চরিত্র আঁকতে আঁকতেই একসময় তৈরি করেন মিকি মাউসের মতো অনন্য চরিত্র। পরে চাকরি ছেড়ে নিজেই প্রতিষ্ঠা করেনড জনি স্টুডিও। লাইভ-অ্যাকশন আর অ্যানিমেশনের মিশ্রণে তৈরি দ্য রিল্যাক্ট্যান্ট ড্রাগন, সালুদোস আমিগোস, মেক মাইন মিউজিক, সং অফ দ্য সাউথ, অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যানড, সিন্ডারেলা, পিটার প্যানের মতো অসাধারণ ফিচার ফিল্মগুলো বদলে দেয় তার ভাগ্য। হয়ে ওঠেন বিশ্ববিখ্যাত।

জে কে রাওলিং

জে কে রাওলিংপৃথিবীর হাতে গোনা সফল লেখকদের মধ্যে জে কে রাওলিং বই লিখে বিলিওনিয়ার হতে পেরেছেন। তার লেখা হ্যারি পটার সিরিজের বইগুলো পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বিক্রীত বুক সিরিজ  আর এই সিরিজ থেকে বানানো সিনেমাগুলো প্রতিটিই ব্লকবাস্টার হিট। জনপ্রিয়তা ও আর্থিক দিক থেকে নি:সন্দেহে তিনি ইতিহাসের অন্যতম সফল সাহিত্যিক।  কিন্তু এই হ্যারি পটার প্রকাশের জন্য তাকে করতে হয়েছে দীর্ঘ সংগ্রাম। রাউলিং পড়াশুনায় তিনি খুব একটা ভালো ছিলেন না।  অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে টেস্ট দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর এক্সিটর ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশুনা শেষ করেন।  পড়া শেষ করার পর তেমন কোনও ভালো কাজ না পেয়ে এক সময়ে পর্তুগালে চলে যান।  সেখানে গিয়ে বিয়ে করেন এক বদরাগী লোককে, যে কথায় কথায় গায়ে হাত তুলত।  ১৯৯৩ সালে ৩৮ বছর বয়সে একমাত্র মেয়েকে নিয়ে তিনি আবার ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন এবং বোনের সাথে থাকতে শুরু করেন।  এই সময়টাতে তিনি হিসেব করে দেখলেন যে তিনি জীবনের সবকিছুতেই চরম ভাবে ব্যর্থ হয়েছেন।  তিনি একজন ডিপ্রেশনের রোগীতে পরিনত হন এবং আত্মহত্যারও চিন্তা করেন।  কিন্তু মেয়ের কথা চিন্তা করে তিনি আবার আশায় বুক বাঁধেন এবং নিজের লেখালেখির প্রতিভাকে ঘষামাজা করতে করতে হ্যারি পটারের বইটি লিখতে থাকেন।  এভাবেই কেটে যায় দু’টি বছর।  ১৯৯৫ সালে একটু একটু করে হ্যারি পটারের প্রথম বইটি লেখা শেষ করেন।  বইটি লেখার উদ্দেশ্যই ছিল লেখার মাধ্যমে নিজের জীবনের মোড় ঘোরানোর চেষ্টা করা।  রাওলিং তখন একমাত্র মেয়েকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছিলেন। কিন্তু সেই বইটিও ১৪টি প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়।  অবশেষে ১৯৯৬ সালে ব্লুমসবারি নামের ছোট একটি প্রকাশনা সংস্থা বইটি প্রকাশ করার জন্য রাজি হয়।  ১৯৯৭ সালে হ্যারি পটারের প্রথম বইটি প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে পুরো বিশ্বে হৈচৈ পড়ে যায়।  রাওলিং অবাক হয়ে দেখেন, এত ব্যর্থতার পরও চেষ্টা করে যাওয়ার সুফল তিনি পেয়েছেন।  একে একে আরও বই বের হতে থাকে, সেই সাথে বের হতে থাকে একের পর এক সুপারহিট সিনেমা।  ২০০৪ সালে রাওলিং পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম সাহিত্যিক হিসেবে শুধুমাত্র বই লিখে বিলিয়ন ডলারের মালিক হন। 

জ্যাক মা

জ্যাক মাজ্যাক মা বর্তমানে বিশ্বের সফলতম ব্যবসায়ী ও শীর্ষ ধনীদের একজন। অথচ একটা সময় তিনি ব্যর্থতার পর ব্যর্থতার মুখে পড়েছিলেন। সুইজারল্যান্ডের দাভোসে অনুষ্ঠিত বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনে দেওয়া এক টিভি সাক্ষাৎকারে তিনি নিজেই তার অতীত জীবনের ব্যর্থতা ও ঘুরে দাঁড়ানোর পাশাপাশি ছাত্রজীবনে খারাপ রেজাল্টের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমি প্রাথমিক পরীক্ষায় দু'বার, মাধ্যমিকে তিনবার, পুলিশ হতে গিয়ে একবার, হার্ভার্ডে ভর্তি হতে গিয়ে দশবার এবং কেএফসিতে চাকরি করতে গিয়ে একবার ফেল করেছি। তবু এই ফেল্টুসই হার্ভার্ডে পড়ার সাহস দেখিয়েছে। কিন্তু পারেনি। শুধু তাই নয়, তার শহরে যখন কেএফসি ব্যবসা করতে আসে, তখন ২৪ জন চাকরির আবেদন করেন। তাদের মধ্যে জ্যাক ছাড়া বাকি ২৩ জনের চাকরি হয়। তবু জীবনের শেষ হাসিটা নিজের সাফল্য দিয়েই হেসেছেন জ্যাক।

বাংলাদেশ জার্নাল- বিএইচ

© Bangladesh Journal


from BD-JOURNAL https://www.bd-journal.com/other/168750/ব্যর্থতা-থেকে-সাফল্যের-শিখরে