দেশের অর্থনীতিতে আশা জাগাচ্ছে করোনাভাইরাস
দেশের অর্থনীতিতে আশা জাগাচ্ছে করোনাভাইরাস
দুনিয়াজুড়ে আতঙ্ক ছড়ানো নভেল করোনাভাইরাস বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য আশীর্বাদ বয়ে আনতে পারে বলে আশা করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা।
তারা বলছেন, এই রোগ যদি শুধু চীনের বাইরে অন্য দেশে বেশি না ছড়ায়, তাহলে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে যে ধাক্কা লেগেছে তা কেটে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ অনেক দেশের তৈরি পোশাকের অর্ডার চীনের বদলে চলে আসতে পারে বাংলাদেশে। বিশ্বে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষ দেশ এখনও চীন। তার পরের অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম।
এই পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনায় যে আশঙ্কার মেঘ দেখা দিয়েছিল, চীনে প্রাণঘাতি ভাইরাস সংক্রমণ সেই চিত্র বদলে দেওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
নভেল করোনাভাইরাসে চীনে মৃত্যুর সংখ্যা তিন শতাধিক এবং আক্রান্তের সংখ্যা ১৪ হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন দেশ দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য যোগাযোগ সীমিত করেছে।
এখানেই আশা দেখছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।
তিনি বলেন, ‘যদি এই রোগ চীনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে, তাহলে আমাদের রপ্তানিতে একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই অবস্থায় কোনো দেশই আরও অন্তত কিছুদিন চীন থেকে তৈরি পোশাক পণ্য কিনবে না। সেক্ষেত্রে চীনের অনেক অর্ডার বাংলাদেশে চলে আসতে পারে। আমাদের রপ্তানিতে যে ধাক্কা লেগেছে, তা কেটে যেতে পারে।’
তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হকও তেমনই মনে করেন।
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে মেইনল্যান্ড চায়নায় বড় বড় কোম্পানিগুলোর বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ হয়ে আছে। ফলে তাদের বিক্রিতে ভাটা পড়তে পারে, চীনের অভ্যন্তরে উৎপাদনও কমে যেতে পারে। এই পরিস্থিতিতে চীনের কিছু তাৎক্ষণিক কার্যাদেশ (অর্ডার) ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ার মতো বাংলাদেশেও স্থানান্তরিত হয়ে আসতে পারে। বাংলাদেশের ভাগ্য ভালো হলে কিছু অর্ডার বাংলাদেশেও চলে আসতে পারে। সেক্ষেত্রে আমরা লাভবান হব। আমাদের রপ্তানিতে যে মন্দা চলছে তা কেটে যাবে।’
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত এই তৈরি পোশাক খাত।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) এক হাজার ৯৩০ কোটি ২২ লাখ (১৯.৩০ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এই সময়ে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ২১২ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
এই ছয় মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৬ শতাংশ কম আয় হয়েছে। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম ১২ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
আহসান মনসুর বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি বেশ চাপের মধ্যে রয়েছে। রেমিটেন্স ছাড়া অর্থনীতির প্রায় সব সূচক নিম্নমুখী। এই বৈরী হাওয়ার মধ্যে আরএমজির অর্ডার যদি বাংলাদেশে আসে, তাহলে করোনাভাইরাস আমাদের জন্য আশীর্বাদই বয়ে আনবে বলা যায়।’
করনোভাইরাসের কারণে ধাক্বা সামলে ওঠার সুযোগ তৈরি হলেও তা সাময়িক বলে মনে করেন রুবানা। তিনি বলেন, ‘সেটা খুবই সাময়িক বিষয় হবে। আমাদের রপ্তানি কমার প্রধান যে কারণগুলো আছে তা সরকারের নীতি-সহায়তা দিয়েই মোকাবেলা করতে হবে।’
তবে চীন থেকে যদি নভেল করোনাভাইরাস অন্য দেশগুলোতেও ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে বাংলাদেশের আশা হতাশায় রূপ নেবে বলে মনে করেন অর্থনীতির গবেষক আহসান মনসুর।
তিনি বলেন, ‘যদি এই ভাইরাস চায়নার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে তাহলে গোটা বিশ্ব অর্থনীতিকে তছনছ করে দেবে। ছোট-বড় সব দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কেননা, চীন এখন এমন বৃহৎ অর্থনৈতিক পরাশক্তির একটি দেশ, যার সঙ্গে সব দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে।’
চীনের বাইরে দুই ডজনের বেশি দেশে ইতোমধ্যে শতাধিক মানুষের দেহে নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ধরা পড়ছে। ফিলিপাইনে একজনের মৃত্যুও হয়েছে।
সূত্র: বিডিনিউজ২৪ডটকম
এমএ/
from BD-JOURNAL https://www.bd-journal.com/bangladesh/106042/দেশের-অর্থনীতিতে-আশা-জাগাচ্ছে-করোনাভাইরাস