নতুন আতঙ্কে চীন ফেরত বাংলাদেশিরা!

নতুন আতঙ্কে চীন ফেরত বাংলাদেশিরা!

নতুন আতঙ্কে চীন ফেরত বাংলাদেশিরা!

জার্নাল ডেস্ক

চীনের উহান থেকে যাদের ফিরিয়ে এনে আশকোনার হজ ক্যাম্পে রাখা হয়েছে, তারা কেউ এখনো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নন। তবে তাদের এখন আতঙ্ক এখান থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তাদের কীভাবে গ্রহণ করা হবে, সেটা নিয়ে।

হজ ক্যাম্পে অবস্থানরত এক বাংলাদেশি ছাত্রের সঙ্গে যখন সোমবার বিকেলে ডয়চে ভেলের প্রতিনিধির কথা হয় তখন তিনি ক্যাম্পের ছাদে বন্ধুদের সাথে ফুটবল খেলছিলেন। তারা পানির খালি বোতলকে ফুটবল বানিয়ে সময় কাটানোর জন্য এই খেলার আয়োজন করেন। তার কথা, ‘কী করব ভাই, সময় যে আর কাটে না। এখন মোটামুটি সবকিছুই ঠিক আছে। কিন্তু কবে বাড়ি ফিরতে পারব সেটা নিয়েই উদ্বিগ্ন।’

এরমধ্যে আরও অনেক উদ্বেগের কারণ ঘটেছে। তারা এখান থেকে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার পর কী পরিস্থতি হয়, এলাকার লোকজন কীভাবে নেয় সেটা নিয়েও তারা আতঙ্কিত। কারণ চীন থেকে আসা এবং চীনা নাগরিকদের নিয়ে একটা আতঙ্ক আমরা এরই মধ্যে লক্ষ্য করতে পারছি।

তিনি বলেন, ‘আমরা যেদিন আসি সেদিন এয়ারপোর্ট থেকে বাসে করে আমাদের হজ ক্যাম্পে আনা হয়। আমাদের বাস ছিল কালো গ্লাসের। আর আমাদের বাসের চারপাশে যারা বাইরে ছিলেন তাদের মধ্যে আমরা আতঙ্ক দেখেছি। যারা মাস্ক পরা ছিলেন তারাও আবার হাত দিয়ে মুখ ঢেকে রাখেন। যাদের মাস্ক ছিল না তারা হাত বা জামা-কাপড় দিয়ে ভয়ে মুখ ঢাকেন। তারা তাদের নিরাপত্তার জন্য এটা করছেন। কিন্তু আমাদের খারাপ লাগে।’

তিনি আরও জানান, ‘হজ ক্যাম্পে আমাদের যারা খাবার দিতে আসেন তারাও ভয়ে থাকেন। রুমের বাইরে দরজা থেকেও দূরে তারা খাবার রেখে চলেন যান। আমাদের নিয়ে এখানেও আতঙ্ক। কিন্তু আমরা যারা এসেছি তারা কেউই এখনো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নই।’

তবে তিনি সরকার ও দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা ভাবতেই পারিনি এত দ্রুত আমাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।’

কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নন

শনিবার যে ৩১২ জন ফিরে এসেছেন তাদের মধ্যে আট জনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল জ্বর থাকায়। কিন্তু তাদের কেউই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নন বলে জানিয়েছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর। তাদের মধ্যে সাতজনকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে এসে এখন হজ ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। আরেকজন গর্ভবতী নারীকে তার একটি শিশু সন্তানসহ সিএমএইচেই রাখা হয়েছে। তবে ক্যাম্প থেকে নতুন করে আরেকজনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে৷ ডা. আলমগীর জানান, ‘আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে তাতে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে এবং চীনে অবস্থানরত কোনো বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি।’

ক্যাম্প পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে

ক্যাম্পে একঘেয়েমি কাটানোর জন্য আটটি বড় পর্দার টিভি দেয়া হয়েছে। দেয়া হয়েছে ওয়াফাই কানেকশান। তবে প্রথম দিন তাদের কয়েকজনের স্বজনেরা এলেও এখন আর কেউ আসছে না। কারণ কাউকেই দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না। হজ ক্যাম্পে অবস্থানরত একজন ছাত্রের ভাই ইলিয়াস মন্ডল জানান, ‘আমরা যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের জানানো হয়েছে দেখা করতে দেয়া হবে না। তাই আমরা যাইনি। আমার ভাই কবে বাড়ি ফিরে আসবে তার অপেক্ষা করছি।’

ডা. আলমগীর জানান, ‘১৪ দিনের মধ্যে লক্ষণ স্পষ্ট হয় তাই অনেকে বলছেন ১৪ দিনের মধ্যে তারা ছাড়া পাবেন। কিন্তু আসলে তা নয়। যদি কারুর এর মধ্যে লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে তো তার চিকিৎসা লাগবে।’

মোট আটটি গণরুম রয়েছে ক্যাম্পে। এর মধ্যে দুটিতে নারীরা রয়েছেন। বাকি ছয়টিতে পুরুষ। সেখানে অবস্থানরত আরেকজন ছাত্র জানান, ‘শুরুতে যে অব্যবস্থাপনা ছিল তা অনেকটাই কেটে গেছে। ওয়াশরুমে সাবান ও হ্যান্ডওয়াশ দেয়া হয়েছে। দুই বেলা নাস্তা এবং দুই বেলা খাবার দেয়া হয়। আমরা ভেতরে ঘোরাফেরা করতে পারি। তবে গণরুম নিয়ে আমাদের মধ্যে আতঙ্ক আছে। এই রুমে একজন আক্রান্ত হলে বাকিরাও হতে পারে।’

সহানভূতিশীল হতে হবে

ডা. আলমগীর জানান, ‘আশকোনা ক্যাম্পের ব্যবস্থাপনার জন্য একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় টিম কাজ করছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আছে। সেনাবাহিনী আছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর আছে। তাদের প্রতিদিন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। খাবার থেকে সবকিছু তাদের দেয়া হচ্ছে। আর তাদের বেডগুলোর দূরত্ব বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন মেনেই করা হয়েছে। কিন্তু তাদের এখানে তো আলাদাভাবে কিছু দিন সবার নিরাপত্তার স্বার্থেই কষ্ট করে থাকতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘করোনা যেহেতু নতুন ভাইরাস, তাই এর সুনির্দিষ্ট প্রতিষেধক নেই। লক্ষণ দেখে চিকিৎসা হয়। যার জ্বর তার জ্বরের চিকিৎসা। যার কাশি তার কাশির চিকিৎসা। এই চিকিৎসার সব প্রস্তুতি আমাদের আছে।’

তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক এখান থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তারা সামাজিক সমস্যায় পড়তে পারেন। এই জন্য আমাদের তাদের প্রতি সহানভূতিশীল হতে হবে।’ -ডয়চে ভেলে

© Bangladesh Journal


from BD-JOURNAL https://www.bd-journal.com/bangladesh/106190/নতুন-আতঙ্কে-চীন-ফেরত-বাংলাদেশিরা